সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের সংশোধন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জায়গায় আপিল বিভাগ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ হবে বলে মন্তব্য করেছে।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায় মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
সন্ধ্যায় সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতি দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ রায় প্রকাশ করেন।
রায়ের অভিমতে আদালত বলেছে, "লিভ আবেদন দুটি খারিজ করে আমরা সামরিক আইন ও সংবিধান স্থগিত করাকে একেবারেই অনুমোদন দিচ্ছি না। এ বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত এবং নিন্দা জানানো উচিত। যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো অতি উৎসাহী এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জনগণের সংবিধান ও তাদের সম্মতিতে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করার ঔদ্ধত্য না দেখাতে পারে।"
রায়ে আদালত আরো বলেছে, "এ বিষয়ে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে। আমরা সব ধরনের সংবিধান বহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে চিরতরে বিদায় জানাচ্ছি।"
রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, "খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতাগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে। তবে হাইকোর্ট রায়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বললেও আপিল বিভাগ জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশি হবে বলে অভিমত দিয়েছে।"
বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মধ্যবাম শক্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বিএনপিপন্থী মধ্যডান ও ডান শক্তি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের
প্রচার করে থাকে। হাইকোর্টের রায় বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে বিপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলো প্রচারণা চালিয়েছিল। আপিল বিভাগের রায় জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন উত্তাপের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
মাহবুবে আলম বলেন, চার মূূলনীতির বিষয়ে রায়ের মূল অংশে কিছুই বলা হয়নি। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকে আপিল বিভাগ ভীষণভাবে ভর্ৎসনা করেছে। ভবিষ্যতে যাতে এভাবে কেউ ক্ষমতা দখল না করতে পারে সেব্যাপারে আদালত হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহারের বিষয়ে রায়ের মূল অংশে কিছুই বলা হয় নি।
তিনি বলেন, ক্রান্তিকালীন অবস্থা বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সংশোধন করেছে। '৭৫ থেকে '৭৯ সাল পর্যন্ত সম্পাদিত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, যা নাগরিকের অধিকার খর্ব করে না- আপিল বিভাগ সে সবের পক্ষে অভিমত দিয়েছে। বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত বিধি-বিধান বৈধ বলে আপিল বিভাগ মেনে নিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত সামরিক আইনকে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে।
গত ২ ফেব্র"য়ারি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চের ওই আদেশে বলা হয়- "পিটিশনস আর ডিসমিসড উইথ সাম মডিফিকেশন অ্যান্ড অবজারভেশন"।
২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
তবে আদালত ওই সময়ে 'জনস্বার্থে করা' সরকারের বেশকিছু বেআইনি কাজকে মওকুফ করে দেয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার পরিবর্তন সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি বলেও হাইকোর্টের ওই রায়ের অভিমত দেওয়া হয়।
রায় স্থগিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আবেদন করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার সে আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপর বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থক তিন আইনজীবী আপিলের আবেদন করেন।
সামরিক সরকারকে বৈধতা দিয়ে ১৯৭৭ সালের ৭ নম্বর মার্শাল ল' রেগুলেশন (এমএলআর) চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদনে হাইকোর্ট ওই রায় দিয়েছিলো।
সুত্র: বিডি নিউজ (ইহা একটি কপি পেষ্ট নিউজ)