somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার জন্য উপযোগী রাউটার কিভাবে বাছাই করবেন?

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের এবং ব্র্যান্ডের রাউটার পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি ডিভাইসগুলোতেই এত বেশী ফিচার থাকে যে সেখান থেকে বাছাই করে নিজের জন্য সবচেয়ে উপযোগী রাউটারটি খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। স্বাভাবকিভাবে সবাই চাইবে সবচেয়ে দ্রুত গতির আর ফিচার সমৃদ্ধ রাউটারটি বেছে নিতে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের রাউটারগুলো বেশ দামী হয়ে থাকে। কিন্তু মাত্র কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করলেই আপনি খুব সহজেই একটি ভালো রাউটার বেছে নিতে পারবেন, যা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হবে।

যে বিয়ষগুলো লক্ষ্য রাখা জরুরীঃ
ক) ডিভাইসটি অফিস না বাসার জন্য কিনতে চাচ্ছেন সিদ্ধান্ত নিন।
খ) কতগুলো ডিভাইস এই রাউটারটি ব্যবহার করবে তা নিশ্চিত করুন।
গ) আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার আপনাকে কত গতির কানেকশান সরবরাহ করছেন নিশ্চিত হোন।
ঘ) সুর্নিদিষ্ট কোন ফিচার প্রয়োজন হলে তা মাথায় রাখুন।

এবার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে আলোচনা করা যাক।

ক) বাসা না অফিসঃ বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটার উপর নির্ভর করে অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত আমূল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যদি বাসায় ব্যবহারের জন্য রাউটার ব্যবহার করতে চান সে ক্ষেত্রে বিষয়টা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ এবং মোটামুটিভাবে যে কোন পরিচিত ব্র্যান্ড (টিপি লিংক, নেটগিয়ার, লিঙ্কসিস ইত্যাদি) বেছে নিতে পারেন। যদি ছোট অফিসে ব্যবহারের জন্য কিনতে চান সে ক্ষেত্রেও পরিচিত এ ধরনের যে কোন ব্র্যান্ডের রাউটার বেছে নিতে পারেন। বড় ধরনের অফিস হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে এন্টারপ্রাইজ লেভেল রাউটার ব্র্যান্ডের (সিসকো, জুনিপার, এইচপিই ইত্যাদি) দিকে নজর দিন। এপার্টমেন্ট বাসার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে সমস্যা না হলেও ডুপ্লেক্স বা বিভিন্ন তলাতে একই ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার বা সুইচ ব্যবহার করতে হতে পারে। সেটা অবশ্য ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজনের উপর নির্ভর করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রচলিত ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডারকে রাউটারের সাথে যুক্ত করে এক্সেস পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করি। মনে রাখা জরুরী রাউটার আর এক্সেটেন্ডারের দূরত্ব বেশী হলে অবশ্যই সুইচ ব্যবহার করুন।

খ) ডিভাইস সংখ্যাঃ স্বাভাবকিভাবে বাসায় ব্যাবহারের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ রাউটার-ই আপনার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। মোটামুটিভাবে সর্বোচ্চ ২০/৩০ টি ডিভাইস হলে খুব বেশী চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু সংখ্যাটা তার চেয়েও বেশী হলে আপনাকে কিছু বিষয় মাথা রাখতে হবে। থিওরিগতভাবে একটি রাউটারের ওয়াই-ফাই এক্সেস পয়েন্টে সর্বোচ্চ ২৫০ এর মতো ডিভাইস কানেক্ট করা সম্ভব হলেও সেটা ভালো নেটওয়ার্কিং এর জন্য কোনভাবেই সাজেস্টেড নয়। প্রতিটি ভালো রাউটারেই একাধিক ইথারনেট পোর্ট থাকে। সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করুন। যেমন, ডেস্কটপ কম্পিউটার, স্মার্ট টিভির মতো ডিভাইসগুলো কেবল দিয়ে রাউটারে কানেক্ট করুন। প্রয়োজনে আরো রাউটার বা এক্সেস পয়েন্ট যুক্ত করে মূল রাউটারের ওপর চাপ কমাতে পারেন। বড় অফিসের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুইচ ব্যবহার করুন এবং একাধিক এক্সেস পয়েন্ট যুক্ত করুন।

গ) মূল ইন্টারনেটের গতিঃ রাউটারটি যদি মূলত ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় তবে, আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডার আপনাকে কত গতির ইন্টারনেট দিচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন। বাংলাদেশে বেশীরভাগ ইন্টারনেট কানেকশান-ই ১০০ মেগাবাইটের নিচে হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বেশী দামের গিগাবিট (১০০০ মে.বা.) রাউটার কিনে আপনি উপকৃত হতে পারবেন না। তবে আপনার লক্ষ্য যদি ইন্টারনেটের পাশাপাশি বাসায় বা অফিসে একাধিক কম্পিউটারে মাঝে ফাইল শেয়ারিংও হয়ে থাকে সেক্ষত্রে গিগাবিট রাউটার কিনতে পারেন। ছোট বা বড় অফিসের ক্ষেত্রে অনেক সময় হালের ১০গি.বা ক্ষমতার নেটওয়ার্ক কার্ড বা ওপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় বা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে গিগাবিট রাউটার এবং সুইচ ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত।

ঘ) সুর্নিদিষ্ট ফিচারঃ রাউটারকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। কখনো এক্সেস পয়েন্ট হিসেবে, কখনো সুইচ হিসেবে, কখনো ফাইল সার্ভার হিসেবে। এ ধরনের সুর্নিদিষ্ট কোন ফিচার প্রয়োজন থেকে থাকলে সেটা আমলে নিয়ে রাউটার পছন্দ করতে পারেন। বাসায় বা পরিবারে ব্যবহারের জন্য রাউটারে ফায়ারওয়াল এবং পেরেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার আছে কি না খেয়াল রাখুন। বাসায় ছোট বা উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে থাকলে এটা অবশ্যই মাথায় রাখুন। এর মাধ্যমে বাচ্চাদের অযাচিত সাইট ভ্রমন / অবৈধ ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব। এখানে যে না বললেই নয় যে, বর্তমানে বেশীরভাগ রাউটারই মূলত ওয়াই-ফাই এক্সেস পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহারের জন্য মানুষ ক্রয় করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আপনার ক্লায়েন্ট ডিভাইস যেমন, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি ওয়াই-ফাই এর কোন প্রটোকল ব্যবহার করে (এ/বি/জি/এন/এসি/এএক্স ইত্যাদি) তা জানাটাও জরুরী। যদিও আমরা স্বাভাবিকভাবে এদিকটাতে অতটা নজর দেই না তবুও রাউটার এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এগুলো জানা প্রয়োজন।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ধরুন আপনি একটি অত্যাধুনিক রাউটার ক্রয় করেছেন, যেটা পঞ্চম (এসি) এবং ষষ্ঠ (এএক্স) প্রযুক্তির ওয়াই-ফাই স্ট্যান্ডার্ড সাপোর্ট করে। অন্যদিকে আপনার ল্যাপটপটি বা ডেস্কটপ কম্পিউটারটি বেশ পুরোনো এবং সেটা সর্বোচ্চ চতুর্থ (এন) প্রযুক্তির ওয়াই-ফাই ডিভাইস ব্যবহার করছে। এই কম্পিটারটির নেটওয়ার্ক কার্ড দিয়ে আপনি কখনোই রাউটারের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন না। ক্ষেত্র বিশেষে ভালো ইন্টারনেট কানেকশান থাকার পরেও আপনি কম্পিউটারে ভালো ইন্টারনেট গতি নাও পেতে পারেন বিভিন্ন কারণে। এ ধরনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারটির নেটওয়ার্ক কাড আপগ্রেড করাটা সমীচিন। তবে, আশার কথা হচ্ছে বেশীরভাগ নতুন স্মার্টফোনে এ ধরনের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয় কারণ নতুন ফোনগুলোতে বেশ ভালো মানের নেটওয়ার্ক কার্ডযুক্ত থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ওয়াই-ফাই এনেবল্ড ডিভাইসগুলোর প্রতি যেগুলো সাধারণ সবসময় আপগ্রেড করা সম্ভব হয়না যেমন স্মার্ট টিভি।

ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও রাউটার কেনার প্রয়োজন হলে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই রাউটার ক্রয় করে থাকি। বিষয়গুলো আমার মোটামুটি বিগত বিশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে সারাংশ হিসেবে তুলে ধরা। স্বল্প পরিসরে যতটুকু সম্ভব ব্যাখ্যা করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আপনাদের সুর্নিদিষ্ট কোন প্রশ্ন থাকলে সেটা কমেন্ট থেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি আমার সাধ্যমত জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো। তবে উত্তরের জন্য অবশ্যই ধৈর্য্য রাখুন। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:০৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×