মাইক্রোসফট অতি সম্প্রতি (২৪শে জুন, ২০২১) ঘোষণা দিয়েছে যে, এ বছরের শেষ নাগাদ তাদের নতুন ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১ বাজারে আসবে। কোম্পানীটি ইতোমধ্যেই এই ওএসটির ইনসাইডার প্রিভিউ বিল্ড ডেভেলপারদের জন্য রিলিজ করেছে। এটি মূলত ডেভেলপারদের জন্য রিলিজ করা হয়েছে ওএস-টি ট্রাই আউট করার জন্য এবং তাদের মতামতের জন্য। আমার মতো যারা এই প্রোগ্রামের অর্ন্তগত তারা ইতোমধ্যেই মাইক্রোসফট থেকে এসংক্রান্ত ইমেল পাওয়ার কথা। মূল কথা হলো এই রিলিজটি সর্বসাধারণের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নয়। যদিও ওএস-টি সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামত বেশ পজিটিভ তবুও কিছু বিষয় সর্বসাধারণের জন্য তুলে ধরা আবশ্যক বলে মনে করছি।
১। মাইক্রোসফট এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের জন্য যে ধরনের নূন্যতম হার্ডওয়্যার কনফিগারেশন ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে, তা নিয়ে প্রযুক্তি মহলে রীতিমত হৈ চৈ বা সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। আসুন প্রথমে দেখে নিই তাদের রিকয়ারমেন্টস্ (সূত্র)।
প্রসেসরঃ ৬৪ বিট এর ২ বা তার বেশী কোর সমৃদ্ধ ১ গিগাহার্টজ বা দ্রুতগতির হতে হবে
মেমরিঃ নূন্যতম ৪ গিগাবাইট
স্টোরেজঃ হার্ডড্রাইভের সাইজ ৬৪ গিগাবাইট বা তার বেশী হতে হবে
সিস্টেম ফার্মওয়্যারঃ ইউইএফআই, সিকিউর বুট সমৃদ্ধ
টিপিএমঃ ভার্সন ২.০
গ্রাফিক্স কার্ডঃ ডাইরেক্ট এক্স ১২ সাপোর্টেড হতে হবে
হৈ চৈ শুরু হওয়ার মূল কারণ হলো টিপিএম ২.০ বাধ্যতামূলক করা। টিপিএম কি এবং সেটা কিভাবে ব্যবহৃত হয় তা নিয়ে অনেক আগেই আমি একটা লিখা লিখেছিলাম, ওটা পড়ে দেখতে পারেন। মাইক্রোসফটের ভাষ্যমতে মূলত অপারেটিং সিস্টেমকে নিরাপদ রাখার জন্যই টিপিএমকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই মডিউলটি ছাড়া আপনি উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে পারবেন না।
২। লেজিটিমেট ইউন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীগণ পাবলিক রিলিজ হওয়ার পর উইন্ডোজ ১১-এ আপগ্রেড করতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রেও টিপিএম ২.০ আপনার কম্পিউটারে থাকতে হবে। মাইক্রোসফটের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী আপনি উইন্ডোজ ১০ এর হোম এবং প্রো ভার্সন অক্টোবর ১৪, ২০২৫ পর্যন্ত এর সাপোর্ট বা আপডেট পাবেন, এর পর উইন্ডোজ ১০ এর আর কোন আপডেট আসবে না। সেক্ষেত্রে হয় আপনাকে উইন্ডোজ ১০ থেকে ১১ থেকে আপগ্রেড করতে হবে নয়তো অনিরাপদ উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে হবে।
৩। প্রসেসরের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট ১ গিগাহার্টজ বা দ্রুত গতির প্রসেসর চাইলেও তা বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক প্রসেসরকেই সাপোর্ট করবে না। উদাহরণ হিসেবে আপনি ইন্টেল এর ৪/৫/৬/৭ম জেনারেশনের প্রসেসরগুলোর কথা ধরতে পারেন। যদিও প্রসেসরগুলো ১ গিগাহার্টজের চেয়েও অনেক বেশী দ্রুত গতির তবু প্রসেসরগুলো খুব সম্ভবত নতুন উইন্ডোজ ১১ সাপোর্ট করবে না। মাইক্রোসফট এ সংক্রান্ত একটি তালিকাও সম্প্রতি প্রকাশ করেছে যেখানে উইন্ডোজ ১১ সাপোর্টেড হালের এএমডি, ইন্টেল এবং কোয়ালকম প্রসেসরগুলো তালিকা দেয়া হয়েছে। এখানেই আরো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এই তালিকা উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে নাখোশ করে তুলেছে এই মর্মে যে তাদের প্রসেসর কিছুটা পুরোনো হওয়ায় তাদেরকে এক হিসেবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে যদিও উইন্ডোজ ১০ অনেক পুরোনো প্রসেসরকেও সাপোর্ট করতো।
সাধারণ উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। যে প্রসেসরগুলো তালিকায় দেয়া হয়নি, সেগুলো দ্রুত গতির হলেও তাদের ব্যবহৃত চিপসেট এবং মাদারবোর্ড মূলত টিপিএম ২.০ ফিচার সাপোর্ট করে না (কিছু অবশ্য টিপিএম ১.২ সাপোর্ট করে কিন্তু ১.২ ভার্সনে কিছু নিরাপত্তা ত্রুটি থাকায় সেগুলো বাদ দেয়া হয়েছে)। কিছু কিছু ইন্টেল প্রসেসরে নিজস্ব টিপিএম প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও তা ২.০ স্ট্যান্ডার্ডের নয় তাই সেই প্রসেসরগুলোকেও তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ ব্যবহারকারীগণ এই বিষয়গুলোতে ততটা খুশি হতে পারছেন না। তাই হালের নতুন কম্পিউটার ব্যবহার না করে থাকলে খুব সম্ভবত আপনিও আপাতত উইন্ডাজ ১১ ব্যবহার করতে পারবেন না।
মনে রাখা জরুরী যে, আপনার প্রসেসর (ইন্টেল বা এএমডি) যদি সিপিইউ নির্ভর টিপিএম ২.০ সাপোর্ট করে, সে ক্ষেত্রে আলাদাভাবে টিপিএম ২.০ মডিউল কেনার প্রয়োজন নেই। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বায়োস থেকে আপনার প্রসেসরের নিজস্ব টিপিএম (পিটিটি ইন্টেলের ক্ষেত্রে, এফটিপিএম এএমডির ক্ষেত্রে) প্রযুক্তি এনেবল বা চালু রাখতে হবে।
মাইক্রোফট ২০২১ উইন্ডোজ ইভেন্ট
ছবি কপিরাইটঃ ইউকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৭:১৬