প্রথম সিডি-রম ড্রাইভ পেয়েছিলাম আমার প্রথম কম্পিউটারের সাথে ১৯৯৫/৯৬ সালের দিকে হয়তো, সঠিক সালটা এই মুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না। আমার শ্রদ্ধেয় ছোট চাচা জার্মানী থেকে আমার জন্য কম্পিউটারটি নিয়ে এসেছিলেন। বাংলাদেশে এসে খুব সম্ভবত "ডেফোডিল কম্পিউটার" থেকে রঙিন মনিটর কিনে দিয়েছিলেন। চাচার সাথে সবুর সাহেবের বেশ ভালো যোগাযোগ ছিলো সে সময়, তাই কম্পিউটার সম্পর্কিত হার্ডওয়্যার যেমন ফ্লপি ডিস্ক, সিডি ইত্যাদি ডেফোডিল থেকেই সংগ্রহ করা হতো।
যাইহোক, পরে অবশ্য আমার প্রথম সিডি রাইটার/রি-রাইটার ড্রাইভ হাতে আসে ২০০১ সালের দিকে। অনেক চাপাচাপি আর বোঝানোর পর, বাবা অনেকটা না বুঝেই আমাকে সিডি রি-রাইটার ড্রাইভটি কেনার জন্য ১১ হাজার টাকা দিয়েছিলেন অনেকটা দ্বিধা নিয়ে। সে সময়ে এই টাকা পাওয়াটা কল্পনাতীত ছিলো আমার জন্য। সে সময়ে আমার কথার উপর বিশ্বাস করে বাবা টাকাগুলো দেয়ার জন্য বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যদিও এটা জানানো উচিত ছিলো আরো বহু আগেই। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়াও কিছুটা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যও ছিলো। সে সময়ে সিডি রি-রাইটার অতটা সহজলভ্য ছিলোনা। বন্ধু-বান্ধব, পাড়ার প্রতিবেশীরা আমার কাছে আসতেন সিডি বার্ন করার জন্য। কম-বেশী আয় করেছি সেখান থেকে। কিন্তু রি-রাইটেবল ডিস্ক অত্যন্ত দামী এবং কম সহজলভ্য ছিলো না তাই সেটা নিজের অর্জিত টাকা থেকেই কিনতে হয়েছিলো। আর সেটা ছিলো সম্ভবত সনির একটি সিডি রি-রাইটেবল ডিস্ক।
সম্প্রতি এ্যামাজনে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে সেই ডিস্কটি আবার খুঁজে পেলাম মনে হলো। দেরী না করে ১টি ডিস্ক কিনেও ফেলাম। স্মৃতির রোমন্থেনের বিষয়টি অবশ্যই ছিলো, কিন্তু বরাবরের মতোই কিছুটা প্রয়োজনও ছিলো। আপনাদের মনে থাকতে পারে আমার বিগত কোন এক লিখায় উল্লেখ করেছিলাম যে আমি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর সিডি রিপ করে নিয়ে এসেছিলাম। সমস্যা হলো সিডিগুলো রিপ করা হয়েছিলো ওয়েভ ফরম্যাটে প্রত্যেকটি একক ট্র্যাক হিসেবে। এভাবে সিডি আর্কাইভ করা কিছুটা বিপজ্জনক কারণ তাতে ডাটা লস বা করাপ্ট হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। সমাধান রয়েছে কিন্তু সেটা বেশ জটিল।
সমাধান হলো প্রতিটি ট্র্যাক ক্রমানুসারে সাজিয়ে সেটাকে সিডি রি-রাইটেবল ডিস্কে পুনরায় বার্ন করা বা আবার অডিও সিডি তৈরী করা। তারপর সেটাকে সফটওয়্যার দিয়ে সবগুলো ট্র্যাককে একটি ওয়েভ ফাইলে রিপ করে তা "কিউ শিট" তৈরী করা। তাতে করে একটি অডিও সিডিতে ১০/১২ ট্র্যাক থাকলেও সবগুলো রিপ হবে একটি ওয়েভ ফাইলে এবং সাথে থাকবে একটি কিউ শিট, ব্যাস। এবার ফাইল দুটোকে একসাথে একটি জিপ আকারে সেভ করে রাখা। এভাবে রাখা হলে ডাটা করাপশনের কোন ভয় থাকে না। তবে মনে রাখতে হবে জিপ ফাইটি যেন শুধু রিডেবল হয়, রাইটেবল নয়। এভাবে যতগুলো খুশি ডিস্ক আপনি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন। অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার প্রতি সপ্তাহে কিছু কিছু সময় ব্যয় করে আমি ১০০/১৫০ এ্যালবাম সংরক্ষণ করার কাজ হাতে নিয়েছি।
মোটামুটিভাবে এভাবে সবগুলো সিডি এ্যালবামের কাজ শেষ হলে, গুচ্ছ গুচ্ছ এ্যালবাম নিয়ে তা ব্লু-রে এম-ডিস্কে এবং অনলাইনে আমার ক্লাউড ড্রাইভে সংরক্ষণ করার ইচ্ছে আছে। একটি ১০০ গিগাবাইটের এম-ডিস্ক প্রায় ১০-১২ ডলার। একটি মিউজিক এ্যালবাম মোটামুটিভাবে ৭০০ মেগা বাইটের হলে একটি ১০০ গিগাবাইটরে এম-ডিস্কে প্রায় শ'খানেকের বেশী এ্যালবাম সংরক্ষণ করা যাবে। মোটামুটি সব হিসেব করেই কাজে হাত দিলাম। তবে এবার অবশ্য সিডি রি-রাইটার নয় বরং ব্লু-রে রিরাইটেবল ড্রাইভ দিয়ে পুরো কাজটি করা হবে। মাতসিতা বিডি-এমএলটিইউজে২৭২ ড্রাইভটি প্রায় দু'বছর আগে কিনেছিলাম সেটাই এবার আমার সঙ্গী হচ্ছে।
আর এই পুরো কাজে আমাকে সহযোগীতা করবে আমার এই সিডি রি-রাইটেবল ডিস্ক। দেখা যাক কতটুকু কি করতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৪৩