somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দাদা ভাই

২৪ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল রাতে হঠাৎ করেই ফোনে একটা এলার্ট এলো। ফোন খুলতেই দেখি, ২৭ শে মে আমার দাদা ভাইয়ের ৩০তম প্রয়াণ দিবস। বেশ কিছুক্ষণ স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে থেকেই দাদা ভাইয়ের আবছা হয়ে যাওয়া মুখটা খানিক মনে করলাম। পুরোপুরি পরিষ্কার তাকে মনে করতে না পারলেও এখনো তাকে দেখতে পাই, অনেকটা আলো-ছায়ার মতো। দেখতে দেখতে কিভাবে ৩০টা বছর চলে গেল বুঝতে পারিনি।

ত্রিশ বছর আগে কোন একদিন গ্রাম থেকে খবর এলো, দাদু ভাইয়ের শরীর খুবই খারাপ। বাবা ঐ রাতেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন গ্রামের উদ্দেশ্যে। সে সময়ে বাসে করে আমাদের গ্রামের বাড়ি যাওয়া যেত কি না মনে নেই, তবে আমরা মূলত দোতালা লঞ্চগুলোতে চড়ে গ্রামের বাড়ি যেতাম। পরে বাবার মুখ থেকে শুনেছি, তিনি গ্রামে গিয়ে পৌঁছেছিলেন প্রায় সকালের দিকে। অবশ্য তিনি গ্রামে গিয়ে দাদুকে জীবিত দেখতে পান নি। দাফন-কাফন শেষ করে বাবা কয়েকদিন পর বাড়ি এলেও সে সময় তার মানসিক অবস্থা বোঝার মতো স্মৃতি বা জ্ঞান ছিলো না।

দাদা ভাই যখন চলে গেলেন তখন আমার ৯/১০ বছর বয়স হবে, স্কুলে যাচ্ছি। কাছের মানুষের চলে যাওয়ার দুঃখ অনুভূতিটা তখনো হয়তো পরিষ্কার বুঝে উঠতে পারিনি। অবশ্য জ্ঞান হওয়ার অনেক পরে আমার বাবাকে দেখতাম, দাদু ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে আসতো, বরাবরই তার চোখ জলে টলমল করে উঠতো। আজ বাবা নেই সত্যি, তবুও আমি বাবার অনুভূতিটা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারি।

আমাদের ছোটবেলায়, দাদুভাই আমাদের বাসাতেই থাকতেন। মনে নেই তবে বাবা-মা'র কাছে শুনেছি তিনি ছ'ফুট দুইয়ের মতো লম্বা ছিলেন। আমাদের গ্রামের বাড়ির দরজা দিয়ে বের হতে তাকে বাকা হতে হতো। তবে তিনি হালকা-পাতলা গড়নের ছিলেন। আমার বাবা অবশ্য ততটা লম্বা ছিলেন না তবে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষকে বাঙালী হিসেবে লম্বাই বলতে হবে। আমার মা-ও বেশ লম্বা। বড় ভাই ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। পরিবারে আমি ছাড়া সবাই মোটামুটি লম্বা, তবে কেউই দাদা ভাইয়ের উচ্চতা ছাঁড়িয়ে যেতে পারে নি এখনো।

বাবা প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে দাদা ভাইকে বলে যেতেন, "বাবা, অফিসে যাচ্ছি। অসুধটা সময় মতো খেয়ে নিয়েন।" দাদা ভাইয়ের উত্তর ছিলো, "ঠিক আছে, তুমি সাবধানে অফিস যাও বাবা। আমিতো আছি, তুমি চিন্তা করোনা"। দাদা ভাই কখনো কখনো আমাদের নিয়ে টঙ্গীর চেরাগ আলী কাাঁচা বাজারে যেতেন। বাবার অফিস তখন টঙ্গীতেই ছিলো। দাদা ভাই বাজার করার আগেই আমাদের নিয়ে হোটেলে বসতেন, কখনো চা, মিষ্টি খেতেন আমরাও তাই দাদা ভাইয়ের সাথে সব সময় বাজারে যেতে চাইতাম। তিনিও খুশি মনে আমাদের সাথে নিয়ে যেতেন। গরুর মাংশ তার ভীষণ প্রিয় খাবার ছিলো, এটা মনে আছে।

শীতের সকালে, ঘুম থেকে উঠেই দাদা ভাইয়ের রুমে চলে যেতাম। কখনো দেখতাম তিনি নামাজ পড়ছেন, কখনো বা নামাজ শেষ করে টুপি মাথায় বসে আছেন, কখনো বা শুয়ে। আমরাও দাদার বিছানায় গিয়ে তার লেপ-কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়তাম। দাদা ভাই, কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন, কখনো দুরুদ পড়ে ফু দিয়ে দিতেন। মা এসে দাদা ভাইকে গরম গরম সকালের চা-নাস্তা দিয়ে যেতেন। শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দাদা ভাই মুখে রুটি-পরাটা দিয়ে খাইয়ে দিতেন। চা বেশী গরম থাকলে দাদা পিরিচে ঢেলে খেতেন।

বিকেল বেলা বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলেও, দাদা ভাই তীক্ষ্ম নজর রাখতেন আমাদের দিকে।

আজ দাদা ভাই নেই, বাবাও নেই। তারা যেখানেই থাকুন না কেন, মহান রাব্বুল আলামিন তাদেরকেও শান্তিতে রাখুন এটাই প্রত্যাশা করছি।

বিঃদ্রঃ কিছুক্ষণ আগেই মা'কে দাদা ভাইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই বললো, দিনটা ২৭শে মে হবে ২৪শে নয়। কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে বুঝতে পারলাম আমার ফোন দু'দিন আগে আমাকে এ্যালার্ট করেছে আর আমিও ধরে নিয়েছি আজই তার প্রয়াণ দিবস। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৩ রাত ১১:১২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×