somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ডিজিটাল গার্বেজে পরিণত হচ্ছে

১০ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিবারই দেশে বেড়াতে আসার সময় আমার বেশ উৎসাহ কাজ করে। কিন্তু বিমানবন্দরে ল্যান্ড করার পর থেকে দেশ থেকে রিটার্ন করার আগ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা আমার কখনোই সুখকর হয় না। বলতে পারেন যতটা উৎসাহ নিয়ে আসা হয় তার চেয়ে বেশী তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হয়। পুরো বিষয়টাই এতটা তিক্তকর অবস্থায় পৌঁছেছে যে আমি মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এবারের পর আগামী এক দশকেও আর দেশে আসবো না যদি না সিরিয়াসলি কোন জরুরী অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এবার দেশে আসা হয়েছে বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়ে, কাজগুলো গোছানোর চেষ্টা করছি। কিছু কাজ হচ্ছে আর কিছু হতে বেশ সময় লাগবে। ঠিক কবে নিউ ইয়র্ক ফেরত যাবো তার সঠিক তারিখ এখনো জানি না। যেহেতু সময় নিয়ে এসেছি তাই অফিসের কাজ নিয়েই আসতে হয়েছে। প্রতিদিন রাতে কাজে বসি আর ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার পরেই বিছানায় যাচ্ছি। বিয়টা অস্বস্তিকর হলেও তেমন কোন অল্টারনেটিভও হাতে নেই। কাজের সুবাদেই ইন্টারনেট না হলে আমার কোনভাবেই চলে না। বাসায় প্রথমে স্থানীয় ব্রডব্যান্ড কোম্পানীর ইন্টারনেট কানেকশান নিয়েছি সেই সাথে গ্রামীনের ৪জি মোডেমটাও রেখেছি ব্যাকআপ হিসেবে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও ব্যাকআপ হিসেবে ল্যাপটপ ও বেশ বড়সড় রিচার্জেবল ব্যাটারীও্ আনতে হয়েছে ল্যাপটপ চার্জ করার জন্য। ভয়ঙ্কর প্রিপারেশন আর মোটা অংকের অর্থ ব্যয় না করলে এখানে সে অর্থে কাজ করা কঠিন।


সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতেই একদিন হঠাৎ করেই ইন্টারনেট নেই। ৪৮ ঘন্টার পরে ইন্টারনেট আসার পর বুঝলাম, একটা কানেকশানের উপর ভরসা করা কঠিন। আরো একটি ইন্টারনেট কানেকশান নেয়া হলো। দুটো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশান থাকার পরেও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। দু্'দিন পরপরই, তার কাটা পড়েছে জাতীয় সমস্যা ফেইস করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে খারাপ কানেকশানের কারনে রাউটারে কানেক্ট করা গেলেও ইন্টারনেটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। অবস্থা এতটাই বেগতিক মনে হয়েছে যে আমি দুটো রাউটার বাসায় রেখেছি। মনে পড়ে করোনার সময় থেকে নিউ ইয়র্কে ভেরাইজনের একটা কানেকশান নিয়েছিলাম, প্রায় বছর তিনেক হতে চলেছে। কোনদিনও এক দু ঘন্টার বেশী সার্ভিস ডাউন হতে দেখিনি হলেও তা রাত ৩/৪টার পর হতো।

আমি বসুন্ধরার যে এরিয়াতে আছি সেখানকার প্রায় সবগুলো ব্লকেই বৈদ্যুতিক পিলারে কয়েক শ' ইন্টারনেট তার ঝুলে থাকে। রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই রাস্তার উপর তার ছেঁড়া চোখে পড়ে। ভাবি বসুন্ধরাতেও যদি এই অবস্থা হয় তবে দেশ কিভাবে চলছে। এইভাবে জোড়া তালি দিয়ে আর কত যুগ চলবে? বিষয়গুলো নিয়ে কোন প্ল্যানিং চোখেও পড়ছে না।

এই দেশের মানুষগুলোর গায়ের চামড়া সম্ভবত পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশের মানুষের তুলনায় অনেক মোটা। এখানে পানি নোংরা, পানের অযোগ্য। দেশে আসার পর থেকেই আমি ৫ লিটারের পানির বোতল কিনে খাচ্ছি পুরো পরিবারসহ। রাস্তা-ঘাটে অজস্র খাদা-খন্দ দিয়ে ভরা। এখানে সেখানে ময়লা-আর্বজনার স্তুপ। অব্যবহৃত প্লটগুলোতে এত ময়লা জমেছে যে প্রায় প্রতিদিনই এখানে মশক নিধনের ধোঁয়া দিতে হচ্ছে। তবুও মশার নিয়ন্ত্রন সম্ভব হয় না। আমি সৌভাগ্যবান যে আমার এ্যাপার্টমেন্টের সব জানালা এমনকি বারান্দাও নেট দিয়ে ঢাঁকা। আমার এ্যাপার্টমেন্টে মশা নেই বললেই চলে। তবে সন্ধ্যার পর, বিল্ডিং এর নিচতলায় দশ সেকেন্ড দাঁড়ানোর জোঁ নেই। মশা কর্তৃক নিহত হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বাকি ৫০% ভাগ্য বলতে হবে।

সরকারি কিছু কাজ করাতে হবে, অফিস থেকে বললো আবেদন করতে হবে অনলাইনে। কিন্তু সাইটই-তো ঠিকমতো কাজ করছে না। কিসের ডিজিটাল হলো দেশ? গত বছরের ট্যাক্স ফাইলিং এর কাগজ প্রিন্ট করানোর জন্য "লেটার" সাইজ কাগজ পেলাম না আশেপাশে কোথাও। যেতে হলো নীলক্ষেত। সেখানেও ঐ সাইজের কাগজ নেই, বড় সাইজের কাগজ কেটেকুটে লেটার সাইজ করে প্রিন্ট করাতে হলো। আর প্রিন্টারও মাশাল্লাহ। প্রফেশনালি কাগজ প্রিন্ট করে পেট চালানো লোকজনও যদি এই কাজ করে, তবে এদের ভালো বা উন্নত জীবন যাপন করারও কোন অধিকার থাকা উচিত বলে আমার মনে হয় না।


এই দেশটায় সঠিকভাবে কি হয় আমার জানা নেই। চারিদিকে অসংখ্য মাথা, তবুও এদের নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। আর হ্যাঁ, এবার দেশে এসে বাটপার শ্রেনীর মানুষের দেখা পেয়েছি বেশ। পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম আমার ছেলের পাসপোর্টে "এন.ভি.আর" ভিসা নেয়ার জন্য। সি.এন.জি. থামতে না থাকতেই বাবার বয়সী দালাল টাইপের লোক এসে কথা বলা শুরু করে দিলো। ভাঁড়া চুঁকিয়ে একচোট তিরস্কার করতে হলো বিরক্ত করার জন্য। অবশেষে একজন পুলিশের কর্মকর্তা এসে আমাকে রক্ষা করলেন। পুলিশের ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছি আরেক মহিলা এসে হাজির, "স্যার, কি কাজ করবেন?" আমি বললাম "আপনার কি কাজ করে দিতে হবে বলেন. করে দিচ্ছি"।

মোবাইল দিয়ে ফেইসবুক আর ইউটিউব দেখলেই সেটাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ দাবী করা অনুচিত। সেটাই যদি বাস্তবতা হয় তবে গোল্লায় যাক সব। বাই দ্যা ওয়ে ডেসকোর এ্যাপ দিয়ে মোবাইলে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি কারন এ্যাপ কাজ করছে না। সকালে কোথাও গিয়ে দিয়ে আসতে হবে আবারও! যত্তসব ফাইজলামি আর কি!

ছবি কপিরাইট: আমার তোলা
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৪৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×