somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্বস্তিকর একটি দিন

২৪ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিগত ২১শে জুলাইয়ের সন্ধ্যা থেকেই কম্পিউটারের সামনে বসেছিলাম। সারারাত বসে বসে বিভিন্ন খবর দেখছিলাম আর বিমান বাহিনীর দুর্ঘটনার আপডেট জানার চেষ্টা করছিলাম। গভীর রাতে জানতে পারলাম আরো কয়েকজন আহত ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। ভোর রাতে ফজরের নামাজ পড়েও বিছানায় যেতে পারি নি। তখনো পিসিতে বসে আছি। সারারাত এভাবে জেগে থাকায় গিন্নী বার বার অনুরোধ করছিলো নাস্তা করে একটু ঘুমুতে। যথারীতি নাস্তা এলো, নাস্তা করেও পিসিতে বসেছিলাম। কিছু ভিডিও দেখে আমার ভীষণ কান্না পেল, আমার ছেলে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আমি কেন কান্না করছি। সে কখনো মনিটরের দিকে তাকাচ্ছে কখনো আমার দিকে।

কিছুক্ষণ পর গিন্নী-কে বললাম আমি হাসপাতাল যাচ্ছি। দেখি, কারো রক্তের প্রয়োজন হয় কি না! উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা হলো, ডাক্তাররা জানালেন আপাতত রক্তের দরকার নেই। ওখানে তখনো বেশ কয়েকজন চিকিৎসাধীন থাকায় আমি অনুরোধ করতেই আমার নাম, রক্তের গ্রুপ ও ফোন নাম্বার লিখে রাখলেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, স্কুলটা আমি সামনে থেকে দেখবো। জানি ওখানে দেখার মতো তেমন কিছু নেই, তবুও যেতে চাইলো মনটা। হাসপাতাল থেকে ব্যাটারী চালিত রিকশায় ষাট টাকা। স্কুলের এরিয়াতে গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ এখনো ঐদিকটায়। মূল ফটক দিয়ে স্কুল/কলেজ আই.ডি. ছাড়া ঢোকার উপায় ছিলো না তাই পেছনের দিকটায় গিয়ে ঢুকে পড়লাম।

পেছনের গেইটা ভাঙা ছিলো। গেইটের একটা পাশ ভেঙ্গে স্কুলের দোতালার সাথে হেলিয়ে রাখা ছিলো। ভিডিওতে দেখেছিলাম এটা দিয়েই অনেক বাচ্চাকে নিচে নামানো হয়েছিলো। আরেকটা অংশ তখনো মাটিতেই পড়ে ছিলো। ওটা মাড়িয়েই ভেতরের দিকে ঢুকে গেলাম।


স্কুলের প্রাঙ্গনটায় কম-বেশী সবুজের সমারোহ দেখা গেল। তখনো স্কুলে অনেক মানুষ এসে ভীড় করেছেন। আমার মতো অনেকেই দেখতে এসেছেন, অনেকেই আফসোস করছেন, অপলক বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে আছেন আর অনেকেই আমার মতো দু'একটা ছবি তুলছেন। আমি সঙ্গে করে আমার ডি.এস.এল.আর কিংবা এ্যাকশান ক্যামেরাটা নিয়ে আসিনি তাই ফোন দিয়েই কয়েকটা ছুবি তোলার চেষ্টা করলাম। আসলে ভিডিও করার মতো মানসিকতাও ছিলো না। প্রচুর কান্না-কাটি করে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।


বলতে গেলে মাইলস্টোন কলেজের সকল ছাত্র-ছাত্রীই তখন মাঠে অবস্থান করছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি অবশ্য পরে বাসায় এসে জানতে পারি যে তখন আইন উপদেষ্টাকে এক প্রকার কলেজ বিল্ডিং এর ভেতরে ঘিরে রাখা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ কিছু দাবী-দাওয়া উপস্থাপন করেছে যার বেশীরভাগই আমার কাছে যথেষ্ট যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে।


একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো স্কুলটার আশেপাশে। মনে হচ্ছিলো যে কোন সময় একটা বড় রকম ঝামেলা হতে পারে। উত্তেজিত ছাত্র জনতা কিছু একটা করে বসলে পুলিশও ঝামেলা করতে পারে মনে করে, বেশীক্ষণ অবস্থান না করে চলে আসি। বেশ কয়েকটা টিভি চ্যানেলের লোকজনকে ছাত্ররা এক প্রকার জোর করে বের করে দেয়। আমার কাছে কোন প্রকার আই.ডি. ছিলোনা আর তাছাড়া আমার কাছের কেউ ঐ স্কুলেও পড়াশোনা করছে না। সব মিলিয়ে ওখানে বেশীক্ষণ অবস্থান না করাটাই যৌক্তিক মনে হয়েছে।

বাসায় এসেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম কিন্তু ঘুম আসছে না। ওদিকে বেলা পড়ে সন্ধ্যে হয়ে আসছে, আসরের নামাজের সময় হয়ে গেল। বিছানায় আমার পাশেই আমার মা'মনি আরাম করে ঘুমুচ্ছে। আমিও ওর মতো ভাবনাহীন ঘুম চাইছিলাম। গতকালও অনেকগুলো বাচ্চা অবেলাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো চির-নিদ্রায় সে ভাবনাতেই আমার ঘুম আসছে না। ফুলগুলো শান্তিতে ঘুমাক, তোমরা কেউ জাগিয়ে দিও না। আমিও একটু ঘুমুবো।

ছবি কপিরাইট: ছবিগুলো আমার ফোন দিয়ে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৫৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×