১
রাজামশায়ের আজ মন খারাপ। সাথে রাজ্যের সবার আজ মন খারাপ। রাজামশায়ের মন খারাপ হলে কারো মন ভাল থাকাটা বেয়াদবী। তাই নিপ্পন রাজ্যের সবার আজ মন খারাপ।
উজির নাজির সবাই ব্যস্ত রাজামশায়ের মন ভাল করার চেষ্টায়।কিন্তু সাফল্যের দেখা মিলছে না। রাজামশায়ের মন খারাপ হওয়ার প্রতিবাদে বায়তুল নিপ্পনের সামনে জোম্বি মিছিল হল, সামহোয়ারইন নিপ্পন ব্লগের ব্লগাররা আঙুল বিরতি পালন করলো, বৃহত্তর ডায়াজপুর জেলা ব্যতীত সমগ্র নিপ্পনব্যাপী সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হল। কিন্তু রাজামশায়ের মন আর ভালো হল না। অবশেষে নিরুপায় হয়ে উজির মশায় তলব করলেন নিপ্পন দেশের বীরপুঙ্গব সামুরাই সাহেবকে।
সামুরাই সাহেব রাজামশায়ের নামে শপথধারী যোদ্ধা। তার মত সামুরাই গোটা নিপ্পনে সেই বাবা আদমের কাল হতে অদ্যাবধি পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয়টি জন্মায়নি। রাজামশাই এক থালা ভাত খান তো সামুরাই সাহেব খান দুই থালা, রাজামশায়ের মন এক কিলোমিটার খারাপ হয়, তো সামুরাইয়ের মন খারাপ হয় তিন কিলোমিটার। সেই সামুরাই সাহেবকেই দায়িত্ব দেয়া হল রাজামশাইয়ের মন ভাল করার।
সামুরাই সাহেব রাজামশায়ের মন খারাপের কারণ অনুসন্ধানে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করলেন এবং নিজেকে সেই কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করলেন। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে তদন্তের ফলাফলে বেড়িয়ে এল রাজামশায়ের মন খারাপের কারণঃ রাজামশায়ের পেট খারাপ। পেট খারাপ সমস্যার সমাধান করতে পারলেই রাজামশাই ও রাজ্যের সবার মন ভাল হয়ে যাবে।
রাজামশায়ের আজ পেট খারাপ। সাথে রাজ্যের সবার আজ পেট খারাপ। রাজামশায়ের পেট খারাপ হলে কারো পেট ভাল থাকাটা বেয়াদবী। তাই নিপ্পন রাজ্যের সবার আজ পেট খারাপ।
উজির নাজির সবাই ব্যস্ত রাজামশায়ের পেট ভাল করার চেষ্টায়।কিন্তু সাফল্যের দেখা মিলছে না। রাজামশায়ের পেট খারাপ হওয়ার প্রতিবাদে বায়তুল নিপ্পনের সামনে জোম্বি মিছিল হল, সামহোয়ারইন নিপ্পন ব্লগের ব্লগাররা আঙুল বিরতি পালন করলো, বৃহত্তর ডায়াজপুর জেলা ব্যতীত সমগ্র নিপ্পনব্যাপী সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হল। কিন্তু রাজামশায়ের পেট আর ভালো হল না। অবশেষে নিরুপায় হয়ে উজির মশায় আবার তলব করলেন নিপ্পন দেশের বীরপুঙ্গব সামুরাই সাহেবকে।
সামুরাই সাহেব আবারো সামুরাই সাহেবের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করলেন। এবারের সংগ্রাম, রাজামশাইয়ের পেট খারাপের কারণ বের করা। রাজবাবুর্চির তলব এল, সাথে রাজহেকিম। বাবুর্চিমশায় তের হাজার শব্দের এক নাতিদীর্ঘ রচনা হাজির করলেন; বিগত এক সপ্তাহে রাজামশায় কী কী খেয়েছেন তার বর্ণনায়। আর রাজহেকিম সেই লিস্ট ধরে কাটাকুটি খেলে গেলেন, রাজামশায়ের কোন খাবারে হজমে সমস্যা আছে কি না যাচাইয়ের জন্য। সারাদিন কাটাকুটি খেলে হেকিম জানিয়ে দিলেন খাবারে কোন সমস্যা নাই। সর্বভুক রাজামশাই সবকিছুই হজম করতে পারেন।
আটচল্লিশ ঘন্টা সমাগত প্রায়, কিন্তু সমস্যার কারণ আর বের করা হল না। সামুরাই সাহেবের মন খারাপের মাত্রা তিন কিলোমিটার থেকে আরো দুই কিলোমিটার বেরে গেল, পেট খারাপ হলো ছয় কিলোমিটার। শেষ মুহুর্তে তাকে রক্ষায় এগিয়ে এল রাজহেকিম। হঠাৎ তার মনে পড়লো, রাজামশায়ের একটা বিষয়েই বদহজম। আর সেটা হলো মুক্ত বাতাস। সমাধান পেয়ে সামুরাই তিনবার ডিগবাজী খেলেন, সাতবার হাইজাম্পের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করলেন দিলেন, এগারোবার ডাইভ দিলেন এভারেস্ট হতে। মুক্তবাতাসের কী সাধ্য এই বীরপুরুষের সাথে লড়বে? রাজামশাইয়ের পেট ভাল হবেই হবে।
নিমষেই রাজপ্রাসাদের সকল দ্বরজা বন্ধ হলো, জানালা বন্ধ হলো, ইঁদুরের গর্ত বন্ধ হলো। রাজপ্রাসাদ হলো এয়ারটাইট, মুক্তবাতাস মুক্ত। সুদূর চীনদেশ থেকে আমদানী করা হল বদ্ধ বাতাস, আর তা দিয়ে পূর্ণ করা হলো পুরো রাজগৃহ। মিশন সাক্সেসফুল হওয়ার আনন্দে সামুরাই সাহেব তিনবার ডিগবাজী খেলেন, সাতবার হাইজাম্পের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করলেন দিলেন, এগারোবার ডাইভ দিলেন এভারেস্ট হতে। এবার রাজামশাইয়ের পেট ভাল হবেই হবে, সাথে রাজ্যের সবার পেট এবং মন।
আটচল্লিশ ঘন্টার পর আরো আটচল্লিশ ঘন্টা কেটে গেল, কিন্তু রাজামশায়ের মন আর ভাল হল না। সবাই সামুরাই সাহেবকে আফ্রিকান এক মরুভুমির নামে ডাকা শুরু করলো। তার ইজ্জত যায় যায় অবস্থা। সামুরাই সাহেব পেরেশানীতে অস্থির। সারা রাজপ্রাসাদ তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল মুক্তবাতাসের সন্ধানে। কিন্তু কোথাও মুক্তবাতাস খুঁজে পাওয়া গেল না। তাহলে রাজামশাইয়ের পেট খারাপ ভাল না হবার হেতু কী? সবার মাথায় হাত। এমন সামুরাইয়ের সময় এক সৈন্য খুঁজে নিয়ে এল এক টুকরো সন্দেহভাজন মুক্ত বাতাস। পুরো এয়ারটাইট রাজপ্রাসাদে কোন চরুইগলা সরু ছিদ্রপথে ঢুকে পড়েছে এই বাতাস। তবে নিরীহদর্শন এই বাতাসকে আপাতদৃষ্টিতে মুক্ত বাতাস বলে মনে হচ্ছে না। পাছে লোকে অবিচারের সন্দেহ করে, তাই যথাযথ প্রমাণ সহকারে দন্ডিত করতে হবে একে, ঝুলিয়ে দিতে হবে অতিঅনুভুতির ফাঁসিকাষ্ঠে, দৃষ্টান্তমূলকভাবে। কিন্তু কী করে সহজে প্রমাণ করা যায় এটা মুক্ত বাতাস? সামুরাই সাহেবের মেলা বুদ্ধি। একে তাদের সামনে নিয়ে যেতে হবে, যাদের মুক্তবাতাসে সবচে বেশি এলার্জি। তাহলেই প্রমাণিত হয়ে যাবে এর আসল রূপ।
বাতাসটুকুকে বন্দী করে নিয়া যাওয়া হবে বায়তুল নিপ্পনের জোম্বিদের কাছে, শুধুমাত্র মুক্তবাতাসঘটিত এলার্জীতেই যাদের অনুভুতি জাগ্রত হয়।