১.১
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেল মাহমুদের। এমনিতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে। ছোটবেলা থেকেই প্রায় নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়ার অভ্যাস তার। সংগঠনে যোগ দেয়ার পর থেকে অভ্যাসটি আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সংগঠনের সিনিয়ররা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ব্যাপারে খুবই জোড় দেন। ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে, অযু করে তিতুমীর হলের নামাজ কক্ষে নামাজ আদায় করার মধ্য দিয়েই তার দিন শুরু হচ্ছে গত ছ'মাস ধরে। একদিনও ব্যাতিক্রম হয়নি। আজ হওয়ায় তার মেজাজ কিছুটা বিগড়ে থাকলো। একে তো নামাজ মিস হওয়ার দু:খ, তার ওপর বড় ভাইদের কী জবাব দেবে সেই চিন্তা। প্রথম প্রথম বড় ভাইদের নামাজ নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি তার ভালো না লাগলেও এখন সে জানে এটা তাদের ভালোর জন্যই। তাই নামাজের ব্যাপারে সে এখন আরো যত্নশীল। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আগে ব্যক্তি জীবনে নামাজ প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। তাই দেরী না করে সে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো দাঁত ব্রাশ করে, অযু করে কাযা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে।
১.২
বুয়েটে ক্লাস শুরু হয় সকাল আটটার সময়। স্কুল কলেজে থাকতে সকালে নামাজ আদায়ের পড় ঘন্টাখানেক সুর করে কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস ছিল তার। কিন্তু এখন আর তা করা সম্ভব হয় না। রুমমেটরা সবাই ঘুম থেকেই ওঠে সাতটা-সাড়ে সাতটার দিকে। কোরআন তেলাওয়াতে নাকি তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অবশ্য মাঝে মাঝে রুমমেটরা সবাই বাইরে রাত কাটালে সে নিজের মত করে সময় কাটাতে পারে। আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যাওয়ায় কাযা নামাজ শেষ করতে করতেই তার পৌনে আটটা বেজে গেল। দূরদূরান্ত থেকে বুয়েটের বাসগুলো ছাত্রদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। মাহমুদের রুমের জানালা থেকে ক্যাম্পাসের মূল ফটক সরাসরি দেখা যায়। হলের ক্যান্টিনে নাস্তা সেরে ক্লাসে যোগ দেয়ার জন্য ব্যাগের ভেতর বই-খাতা গুছিয়ে বের হবে সে। তৃতীয় তলার রুম থেকে যেই সে বের হলো, তার সামনে এসে দাড়ালো ক্লাসমেট রুহুল। মাহমুদের বিরক্তিকে চরমে পৌছে দিয়ে সে আবদার করলো তার এসাইনমেন্টটা প্রিন্ট করে দেয়ার জন্য। রুহুল ছেলেটা সবকিছুতেই লেট। এসাইনমেন্ট জমা দেয়ার কথা সকাল আটটায়। আর সাতটা পঞ্চাশে সে এসেছে প্রিন্ট করতে। মাহমুদ তার আবদার ফেলতে পারলো না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রুমে ফিরে এল। আজ হয়তো নাস্তা না করেই ক্লাসে যেতে হবে।
১.৩
পিসি অন করে রুহুলের পেনড্রাইভটি ভাইরাস চেক করে খুলতেই সে প্রায় হাজারখানেক ফাইল-ফোল্ডারের দেখা পেল। রুহুল ছেলেটি বরাবরই অগোছালো। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রুহুলই মাহমুদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। রুহুলের বাড়ি ঢাকার বাসাবোতে। ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া ভার্সিটির বাসে। রুহুলের বাড়ির সকলে বেশ পরহেজগার। ছাত্রশিবিরে মাহমুদ ও রুহুল একই সাথে যোগ দিয়েছিল। কয়েকদিন যাওয়ার পর সাংগঠনিক কাজে রুহুলকে আর পাওয়া যায় না। জিজ্ঞেষ করলে বলে, দোস্ত, আমি তোদের সাথেই আছি। বড় ভাইরা অনেক বুঝিয়েও রুহুলকে আর আনতে পারলো না। তবে রুহুল এখনো সংগঠনের প্রতি সহানুভুতিশীল। পেনড্রাইভের কোথায় ফাইলটি আছে তা বের করতে রুহুল গলদঘর্ম। অবশেষে প্রিন্ট হল। পেনড্রাইভে ৭০০ মেগাবাইট খালি যায়গা আছে এখন। মাহমুদ বলল, "বন্ধু, একটি প্রামান্যচিত্র আছে আমার কাছে। ভারতীয় হিন্দুরা কীভাবে বাংলাদেশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছে তার ওপর"। রুহুলের অনুরোধে পেনড্রাইভে মুভিটি ভরে দুই বন্ধু ক্লাসের দিকে রওনা হলো। মাহমুদের আর নাস্তা করা হলো না।
১.৪
সিভিল বিল্ডিং এর তৃতীয় তলায় পৌছাতে পৌছাতে তাদের মিনিট পাঁচেক দেরী হয়ে গেল। ভাগ্যিস স্যার এখনো এসে পৌছায়নি। ক্লাসে প্রবেশ করতেই পেছন থেকে কেউ একজন ফোঁড়ন কাঁটলো ছাগু বলে। সংগঠনে যোগ দেয়ার পর থেকেই গালাগালি শোনাটা অভ্যাস হয়ে গেছে মাহমুদের। মানুষ যে কেন এত অসহনশীল! বিশেষত শাহরিয়ার ও তার বন্ধুরা তার পেছনে লেগে রয়েছে। শাহরিয়ারের মামা মাহমুদদের এলাকার সাংসদ। এই প্রথম ঐ এলাকা থেকে আওয়মীলীগের কেউ সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে। মাহমুদের বাবার ধারণা, কারচুপির মাধ্যমেই এই জয় পেয়েছে তারা। শাহরিয়ারের ওপর মেজাজ খারাপ হলেও মাহমুদ তাকে কিছুই বলতে পারে না, বড্ড ভয় হয় বাড়িতে থাকা মা-বাবাকে নিয়ে। আর ক্লাসেও শাহরিয়ার খুবই প্রভাবশালী। নিজে সেরা ছাত্রদের মধ্যে না থাকলেও ফার্স্ট বয় অমিতসহ অনেক ছেলেই তার বন্ধু। চুপচাপ দ্বিতীয় সারির ডানপাশের বেঞ্চে গিয়ে বসলো মাহমুদ ও রুহুল।
১.৫
টানা চারটি ক্লাস করে দুপুর বারোটার পরপর হলে ফিরলো মাহমুদ। গোসল করে নামাজ পড়তে নামাজ রুমে গিয়েই রেজা ভাই এর জেরার মুখে পড়লো সে। রেজা ভাই শিবিরের পরীক্ষিত কর্মী। সকালে জামাতে নামাজ পরা হয়নি কেন জিজ্ঞেস করতেই 'সামান্য অসুস্থতা'র অযুহাত দিতে হলো। সত্য বলার ইচ্ছা থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত পর্ণো মুভি দেখে, হস্তমৈথুনে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে, এটা বলার সাহস সে পেল না। নামাজ শেষে শাহরিয়ার-অমিতদের টিপ্পনির কথা রেজাভাইকে জানাতে ভুল করলো না। সকাল থেকেই মাহমুদের দিন ভালো যাচ্ছে না। মেজাজ চড়ে আছে। অমিতের দুঃসাহসের কথা চিন্তা করে তার মেজাজ সপ্তমে চড়লো। সে বললো, "ভাই, অনুমতি দিলে সাথী ভাইদের নিয়ে মালাউন গুলাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেই।" রেজা ভাই ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। সে মাহমুদকে বোঝালো, অমুসলিমরা পৃথিবীতে মুসলিমদের জন্য গণিমতের মাল। আর নবীজি গণিমতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত বিধর্মীদের প্রতি সদয় আচরণ করেছেন। তাই তাদের প্রতি অল্পতেই সহিংস হওয়া উচিৎ নয়। তবে ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে সাংগঠনিকভাবেই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
১.৬
সাধারণত বিকালের সেশনে বুয়েটে প্রাক্টিক্যাল ক্লাসগুলো অনুষ্ঠিত হয়। বুয়েটে এগুলোকে সেশনাল বলে। আজ আড়াইটায় মাহমুদের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং সেশনাল। সেশনালে চারজনের গ্রুপ। রোল-নাম্বার অনুসারে গ্রুপগুলো করা হয়েছে। মাহমুদের গ্রুপে বন্ধু রুহুল ছাড়াও রফিক ও অতসী রয়েছে। অতসী সাহা শুধু ক্লাসের নয়, পুরো ক্যাম্পাসেরই সেরা সুন্দরীদের একজন। অনেক ছেলেই তার পেছনে পেছনে ঘোরে। তবে সম্ভবত ধর্মীয় কারণেই অতসী অমিতের প্রতি বেশি মনযোগী। তবে তাদের সম্পর্ক যে প্রেমে উপনীত হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। মাহমুদ নিজেও অতসীর প্রতি তীব্র শারিরীক আকর্ষণ বোধ করে। করবে নাইবা কেন? অতসীর হালকা কোঁকড়ানো চুল, নিখুঁত জ্যামিতিক অনুপাতে সাজান মুখশ্রী আর অপরূপ দেহবল্লরী যে কোন তরুনকেই পাগল করে দিবে। তার খুঁত বলতে গাঁয়ের রংটা একটু কালো। তবে কালো মেয়েও যে কতটা সুন্দরী হতে পারে, অতসী তার উজ্জ্বল ঊদাহরণ। মাঝে মাঝে মাহমুদের আফসোস হয় অতসী মেয়েটা কেন হিন্দু! ধার্মিক মুসলিম তরুনী হলে মাহমুদ অবশ্যই তাকে বিয়ে করার চেষ্টা করতো। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই অতসীকে নিয়ে মাহমুদের ফ্যান্টাসী যৌনতায়ই আবদ্ধ থাকে, ভালবাসায় রূপ নেয় না। মাঝে মাঝে একটি অমুসলিম মেয়েকে কল্পনা করে উত্তেজনা অনুভব করতে তার বিবেকে বাঁধে। কিন্তু যৌবনের যন্ত্রণা তো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তাই তিতুমীর হলের তৃতীয়তলার গোসলখানার মেঝে পিচ্ছিল করার উত্তেজনা মাহমুদ অতসীকে ভেবেই লাভ করে।
১.৭
আজ অতসী একটি সাদা রঙের শর্ট কামিজ পরেছে। অতসী স্লিম হলেও ঠিক রোগা নয়। তার ওপর টাইট জামার কারণে তার ফিগার আরো স্পস্ট হয়ে ফুটে উঠছে। দেখে মাহমুদের মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়। বিশেষত অতসীর মাংসল নিতম্ব তার শর্ট কামিজের ভেতর থেকে যেন মাহমুদকেই আহবান করছে। সে ভাবতে থাকে, আরেকটি যুদ্ধ হলে অতসীকে গণিমতের মাল হিসেবে ভোগ করা যেত, এবং তাতে কোন পাপও হতো না। অবশ্য সংগঠনের সিনিয়র ভাইয়েরাও ওর জন্য পাগল। তারা হয়তো নিজেদের ভাগেই ওকে নিয়ে নিত।
১.৮
ল্যাবরেটরিতে একটি বড় কাঁচের নালার মত রয়েছে ওপেন চ্যানেল ফ্লো সিমুলেট করার জন্য। বিভিন্ন পরিমাপের জন্য একটি ছোট কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়। একজনের পর একজন করে উঠতে হয়, দুজন পাশাপাশি যাওয়া যায় না। একেকটি করে গ্রুপ উপরে উঠছে আর রিডিং (পরিমাপ) নিচ্ছে। একসময় সময় হল মাহমুদদের গ্রুপের। সবার প্রথমে শফিক, তারপর অতসী, তারপর মাহমুদ, এরপর রুহুল এই ক্রম অনুসারে তারা সিঁড়ি বাইতে লাগলো। কিন্তু ওপর থেকে শাহরিয়ারদের গ্রুপটি একই সময়ে রিডিং নেয়া শেষে নামতে শুরু করাতেই বিপত্তি। মাঝপথে আটকে গেলো মাহমুদদের গ্রুপের উর্ধ্বমুখী যাত্রা। কোন এক গ্রুপকে পিছিয়ে গিয়ে অন্য গ্রুপকে যায়গা করে দিতে হবে। কিন্তু কারা যায়গা ছাড়বে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কিছুটা সময় সিঁড়িতেই কেটে গেল। মাহমুদের ঠিক সামনে অতসীর সুডৌল নিতম্ব। সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। মুহূর্তেই তার মাথায় এক দূর্দান্ত বুদ্ধি খেলে গেল। সে ভারসাম্য হারিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ভান করে অতসীর নিতম্ব খামচে ধরলো। ইসলাম প্রতিষ্ঠার সৈনিকের বাম-হাত এক বিধর্মী নারীর নিতম্বে প্রতিষ্ঠিত। দুসেকেন্ড সময় নিয়ে আবার ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার ভান করে অতসীকে বলল, 'সরি'। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব অতসী কোন কথাই বলতে পারলো না। এরকম নিপীড়ন সে অনেক সহ্য করেছে, তাই আসল ঘটনা বুঝতে তার বাকী রইলো না। শুধু রাগে কটমট করে তাকালো সে মাহমুদের দিকে। ওপরে ওঠার পর রুহুল বললো, "দোস্ত, অভিনয় দূর্দান্ত হয়েছে। শাবাশ।"
১.৯
বাকিটা ক্লাস মাহমুদের ঘোরের মধ্যে কেঁটে গেল। সাড়ে চারটায় ক্লাস থেকে রুমে ফিরে দেখলো রুমমেটরা সব লেটেস্ট দেশি স্ক্যান্ডাল দেখতে ব্যস্ত। আর দেরী করতে না পেরে সে বাথরুমের দিকে দৌড়াল। পাকা আধঘন্টা বাথরুমে কাটিয়ে, অযু করে পবিত্র হয়ে, আসরের নামায পরে রুমে ফিরে সে আবার ব্যস্ত হয়ে পরল আগের রাতের অর্ধেক দেখা নটি আমেরিকার পেছনে। সুন্দরী পর্ণস্টাররা যতই আবেদনময়ী হোক না কেন, তারা কেউই তাকে অতসীর কথা ভোলাতে পারলো না। মাগরীব ও এশার বিরতি এবং রাতের খাবারের সময় বাদ দিয়ে বাকিটা দিন কেটে গেল ৪১৭ গিগাবাইট সংগ্রহের মধ্য থেকে সেরাগুলো বাছাই করে দেখতে। কাল সকালেও হয়তো মাহমুদের ফজরের নামাজ মিস হবে।