নিজের বা পরিবারের কারও কেনাকাটা যা-ই হোক না কেন, ছুটতে হয় কোনো বাজারে। আর ঈদের মতো উৎসবের আগে তো যেতে হয়ই। পছন্দের জিনিসটি কিনতে কতই না ঘোরাঘুরি। এ তো আমাদের অনেক দিন ধরে চলে আসা কেনাকাটা পর্ব। তবে সময় বদলেছে। প্রযুক্তি, আধুনিকতায় অনেক কাজের মতোই এ কাজটিও বর্তমানে আমাদের হাতের নাগালে চলে এসেছে। এখন বাজারে ঘোরাঘুরি করার কষ্টটা কমানো যায় অনেকখানিই। অনলাইনে বাণিজ্য মানে ই-কমার্স পুরোপুরিভাবে দেশে চালু না হলেও কয়েক বছরে ইন্টারনেটে বিকিকিনির অনেক ওয়েবসাই চালু হয়েছে। দেশি তো বটেই, প্রবাসীরা, ভিড় জমান এসব অনলাইন বাজারে। আর সাধারণ বাজারের মতো এসব বাজারেও এখন ঈদের উৎসবমুখর পরিবেশ। বেচাকেনার দেশি সাইটগুলো সেজেছে ঈদের রকমারি পণ্য নিয়ে।

অনলাইন বাজারে কেনাকাটা
দেশের অনলাইন বাজারে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়, তেমনি বিভিন্ন উৎসবের পণ্যসম্ভারও আছে। অনলাইন বাজার চ্যানেল আই শপে http://www.channelishop.com পাওয়া যাচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই। রমজান মাস উপলক্ষে আলাদাভাবে ইফতারের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই সাইটে।এখানে প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে আলাদা ওয়েবপেইজ আছে।যেসবে ঈদের বিশেষ পণ্য, ইফতারের বিশেষ পণ্য, উপহার, বই, শিশুদের জিনিসপত্রসহ রয়েছে ঈদের বিভিন্ন খাবার, পোশাকের খবর। যেখান থেকে খুব সহজে পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কেনা যাবে।
একই অবস্থা এটিএন ই-শপে http://www.atneshop.com । এতেও রয়েছে বিভিন্ন পণ্য।পোশাক, খাবারসহ নানা পণ্যের পাশাপাশি রয়েছে ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ছাড়া বা উপহারের খবর। এই দুটি অনলাইন বাজারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার সলিউশন লজিস্টিক এন্টারপ্রাইজের (এসএসএলই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেক রহমান বলেন, ‘অনলাইন বাজারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। আমাদের এ দুই ওয়েবসাইটে প্রায় আট হাজারের মতো পণ্য রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যে বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।এই সেবা মূলত প্রবাসীদের জন্য, যাঁরা যেকোনো পণ্য কিনে পৌঁছে দিচ্ছেন দেশে থাকা প্রিয়জনদের। দেশের মধ্যে এই সুবিধা চালু করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে আমাদের অনলাইন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে এর রসিদ নম্বর জানালে দেশের মধ্যেই আমরা সে পণ্য পৌঁছে দিতে পারব নির্দিষ্ট ঠিকানায়।’ তিনি আরও জানান, সরকারি একটু সহযোগিতা পেলে এ পদ্ধতিটি নতুন একটি ধারা সৃষ্টি করবে।
ওয়েব পোর্টাল বাংলাদেশ ইনফোতে http://www.bangladeshinfo.com কেনা ও বেচা বিভাগের বিভাগওয়ারি বিভিন্ন পণ্য আছে। এসবের মধ্যে গাড়ি, ফ্ল্যাট, ইলেকট্রনিকস পণ্য, বিনোদন পণ্য, বইসহ রয়েছে আরও নানা পণ্য। বাংলাদেশ ইনফো ডট কমের কন্টেন্ট প্রধান সুমন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের অনলাইন বাজারের পণ্যের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এর প্রসার। তবে একটি জায়গায় আমরা আটকে আছি−সেটা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা না থাকা।আমাদের ই-কমার্স সাইটগুলো তৈরি আছে, এখন প্রয়োজন সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা। এ বাধাটি দুর হয়ে গেলেই আমরা খুব সহজে অনলাইন বাজারের কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে পারব এবং বিশ্বের মধ্যে দুরত্ব কমিয়ে নিতে পারব।’
ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন ছাড় ও উপহারের সুবিধা দিচ্ছে অনলাইন বাজার, হাটবাজার http://www.hutbazar.com |এতে আছে এ বাজারে বিভিন্ন দিবস অনুযায়ী আলাদাভাবে তৈরি পণ্যসামগ্রী। হাটবাজার ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব চুক্তি রয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমরা পণ্য প্রদর্শন করে থাকি। প্রবাসীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কিনে প্রিয়জনকে পাঠাতে পারবেন।’
ওয়েব বাংলাদেশ ডট কমে http://www.webbangladesh.com রয়েছে কেনাকাটার বিশাল সম্ভার। এ বাজারে শিশুদের পণ্য, ঈদের ফ্যাশনসহ নানা পণ্য পাওয়া যাবে।খুব সহজে পছন্দের কেনাকাটা সারা যাবে এতে। ওয়েব বাংলাদেশ ডট কমের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসী গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী আমরা দেশে পণ্যের সেবা দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব কিছু পণ্যের সেবাও দেওয়া হয়।’
‘বাংলাদেশি অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ স্েলাগান নিয়ে চালু হওয়া আরেকটি অনলাইন বাজার হচ্ছে ক্লিকবিডি http://www.clickbd.com । এখানেও এককথায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য পছন্দ অনুযায়ী কেনা যাবে।শুধু কেনাই নয়, এ বাজারে আপনি আপনার কোনো পণ্য ইচ্ছে করলে বিক্রিও করতে পারবেন। ক্লিকবিডি ডট কমের ব্যবস্থাপক মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পণ্য কেনাবেচার সুযোগ দেওয়ার অনলাইন বাজারের কার্যক্রমটি সম্পন্ন করি আমরা। একজন ক্রেতা নিলাম ডেকে নির্দিষ্ট মূল্য বলেপণ্য কিনতে পারবেন। গ্রাহকদের জন্য আমাদের বিশেষ ক্লিক কার্ড রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে বিশেষ সুবিধা অচিরেই ঘোষণা করা হবে।’
ডিজিটাল মার্কেট বিডি ডট কম http://www.digitalmarketbd.com নামের অনলাইন বাজারে প্রায় সব ধরনের ডিজিটাল পণ্য কেনা যাবে। যার মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস পণ্য, কম্পিউটার সামগ্রী, সফটওয়্যারসহ আরও নানা পণ্য। এ অনলাইন বাজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হামিদ বলেন, ‘সারা বিশ্বেই অনলাইন বাজার বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও এ বাজারের চাহিদা ব্যাপক। আমাদের সাইটের ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কেনাবেচার একটি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে ডিজিটাল পণ্যে নানা সুবিধা দিয়ে থাকি।’
প্রিয়জনের জন্য ফুল কিংবা কারও জন্নদিনের কেক, ফল সবকিছুই পাওয়া যাবে বাংলাবাজার ডট কমে http://www.banglabazar.com । এ বাজারে খাবারসামগ্রী, বিনোদনসামগ্রীসহ রয়েছে আরও নানা আয়োজন। শিশু, ছেলে ও মেয়েদের আলাদা বিভাগে রয়েছে দরকারি পণ্য।শুধু তা-ই নয়, ইচ্ছে করলে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে বিমান টিকিটও কিনতে পারবেন এ বাজার থেকে। কেনাবেচা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যসুবিধা নিয়ে বিভাগওয়ারি অনলাইন বাজার হলো বাংলাদেশ মার্কেট প্লেস http://www.bangladeshmarketplace.com । এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচার সুযোগ। এ বাজারে সব ধরনের পণ্যের পাশাপাশি সর্বশেষ বিক্রীত পণ্য এবং সর্বশেষ কেনা পণ্যটির খোঁজও পাবেন খুব সহজে।

বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটা
অনলাইন বাজারে কেনাকাটার হার বাড়ছে ধীরে ধীরে। প্রবাসীদের জন্য হলেও বর্তমানে দেশের মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটার এ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকে। ই-কমার্স ব্যবস্থা পদ্ধতি যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, ততই এ বাজারের প্রসার বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততাও বেড়ে চলছে। তাই বর্তমানে প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইন বাজারে কেনাকাটা করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন ক্রেতারা।

টাকা পরিশোধ পদ্ধতি
বেশির ভাগ অনলাইন বাজারেই এখন মোটামুটি দেশীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে প্রবাসী ক্রেতাদের জন্য।অনলাইন কেনাকাটার দেশি সাইটগুলোতে প্রবাসীরা পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কিনে তা পাঠিয়ে দিতে পারেন দেশে থাকা প্রিয়জনদের কাছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করে থাকেন। এ ছাড়া কিছু সাইটে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা। এসব সাইটে মূলত ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজটা করা হয়ে থাকে। এরপর কেনাকাটার কাজটুকু ক্রেতা-বিক্রেতারা নিজেরা করে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রে সাইট কর্তৃপক্ষকেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়।

এগিয়ে যাওয়া প্রযুক্তি
সারা বিশ্বের অনলাইন বাজারের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও এগিয়ে চলছে এ বাজার। তবে পরিপূর্ণ অনলাইন বাজারসুবিধা চালু না থাকায় দেশে থেকে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন না অনেকেই। প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের পছন্দের জিনিস অনলাইন বাজারের মাধ্যমে দেশে প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন খুব সহজে। সবার কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দিতে দরকার ই-কমার্সের সব রকম বিষয়ের আইনগত অনুমোদন। তবেই প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে চলা পরিপূর্ণ হবে।

লেখক: নুরুন্নবী হাছিব

সূত্র: প্রথম আলো