somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে নানাবিধ ক্ষতি হবে।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারমধ্যে অন্যতম উদ্বেগের জায়গা বা ক্ষতিকর বিষয় হিসেবে আমরা তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছি।বিষয়গুলো হচ্ছে- প্রথমত, বাংলাদেশের সরকার রামপালে কয়লা দিয়ে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের কোম্পানি 'এনটিপিসি'র সঙ্গে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য চুক্তি করেছে। এই চুক্তিটি পুরোপুরি অসম এবং অস্বচ্ছ একটি চুক্তি। ভারতের সঙ্গে ওই চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস পুরোপুরি বাংলাদেশে স্বার্থের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয়ত, আইনগত বা বিধিসম্মতভাবে এটা এই চুক্তি করা হয়নি। আন্তর্জাতিক আইন এবং দেশীয় আইন অনুযায়ী চুক্তি করলে প্রথমে এ ব্যাপারে অ্যানভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট করতে হবে- তারপর চুক্তির বিষয়। কিন্তু এটি না করেই চুক্তির দেড় দু'বছর আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে সরকার। আর এই জমি অধিগ্রহণ নিয়েও চলেছে নানারকম অনিয়ম। জোর করে জমি অধিগ্রহণ করে মানুষদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এছাড়া আরো একটি অন্যতম ক্ষতিকর দিক হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এমন একটা জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে যেটি সুন্দরবনের অতি নিকটবর্তী। বলা যায় সুন্দরবনের একটি অংশ। সেখানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে যে দূষণ হবে তাতে সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে না বলে মত দিয়েছেন এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা বিশেষজ্ঞগণ। সুন্দরবন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বন। একইসঙ্গে এটি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রক্ষা বর্ম। উপকূলে যত ঝড় ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাসসহ যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে সেসব থেকে মোকাবেলা করার মতো একটা বিশাল শক্তি সুন্দরবনের আছে। তাছাড়া জীববৈচিত্রের দিক থেকে এই সুন্দরবন অসাধারণ। অসংখ্য প্রাণ এখানে আছে। আর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হচ্ছে এই সুন্দরবন। আর এই সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে অসংখ্য মানুষের জীবিকা।সুন্দরবন না থাকলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সবকিছু মিলিয়ে এটি মনুষ্য ও প্রকৃতির যৌথ এমন একটি শক্তি যেটার ক্ষতি করার অর্থ হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের জীববৈচিত্র, ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষের নিরাপত্তা- সবই বিপদগ্রস্ত হবে। এক কথায় বলা যায়, সুন্দরবন ধ্বংস হওয়া মানে পুরো বাংলাদেশ অরক্ষিত হয়ে পড়বে। এমন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়া মানে বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি।

আমরা হিসাব করে দেখেছি এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ভারতের জন্য অনেক লাভজনক হবে। একই সাথে ভারতীয় কোম্পানিকে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধাও দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তাদের কর মওকুফ করা হচ্ছে। 'এনটিপিসি' মাত্র ১৫ শতাংশ ইনভেস্ট করে শতকরা ৫০ ভাগের কর্তৃত্ব পাবে। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে। শুধু তাই না যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তার দাম এখনো অনির্ধারিত। সবকিছু মিলিয়ে ভারতের লাভের অঙ্ক অনেক বেশি।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা যখন থেকে চিন্তা করা হচ্ছে ঠিক তখন থেকেই ওই এলাকার আশপাশে বেশকিছু অপতৎপরতা আমরা লক্ষ্য করছি। বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যবসায়ী মহল ওই এলাকায় জমি দখল এবং জমি নিজেদের কর্তৃত্বে আনা শুরু করেছে। তারমানে সুন্দরবন এলাকা জুড়ে এমন এক ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে সুন্দরবনের অস্তিত্ব থাকবে না। আর সেকারণে বাংলাদেশের জনগণের বর্তমান ও ভবিষ্যত স্বার্থের জন্য এ প্রকল্প প্রতিরোধ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। আর সেজন্য আমরা সরকারকে লিখিতভাবে এ বিষয়ের সুবিধা ও অসুবিধার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। আমরা এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভা এবং সরকারের সাথে বৈঠক পর্যন্ত করেছি। কিন্তু সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত জনগণের ওপর ভরসা করে লংমার্চ করেছি এবং আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: আপনারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলে সরকারের ভিত্তি থাকবে না।
আনু মুহাম্মদ: আমাদের সঙ্গে জনগণ রয়েছে। লংমার্চে আমরা যতোটা আশা করেছিলাম জনগণ তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের আহবানে সাড়া দিয়েছে। আমরা লংমার্চের সময় উপলব্ধি করেছি সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্রসহ সামগ্রিক ব্যাপারে মানুষের মনের মধ্যে একটা গুরুত্ববোধ আছে। অর্থাৎ সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুভব করার মতো শক্তি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনো আছে। আর সে কারণে দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরে থেকে আমাদের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে লংমার্চের আগে আমরা যখন ঢাকায় প্রচার চালাই তখনো লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন এবং সংহতি পেয়েছি। আর লংমার্চের যাত্রাপথে যতই আমরা অগ্রসর হয়েছি ততই এ ব্যাপারে জনসমর্থন বেড়েছে। শুধু তাই নয় যখন লংমার্চের শেষ মুহুর্তে আমরা যখন সুন্দরবন এলাকায় পৌঁছলাম তখন দেখলাম এই আন্দোলনের বিরোধিতা করার মতো আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না ওই এলাকায় । ফলে আমাদের সঙ্গে জনগণ রয়েছে এবং তারাই এটি প্রতিহত করবে।

প্রশ্ন: সরকারের কঠোর অবস্থানকে বদলাতে পারবেন?
আনু মুহাম্মদ: দেখুন জনগণের যে সমর্থন আমরা পেয়েছি তাতে আমরা নিশ্চিত যে সরকার গায়ের জোরে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র করতে পারবে না।কারণ জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে সেটিকে জাতীয় প্রতিরোধ বলা চলে। আর এই জাতীয় প্রতিরোধের ভাষা যদি সরকার বুঝতে না পারে তাহলে তা সরকারের জন্য মহা ক্ষতিকর হবে। আর আমরা নিশ্চিত যে সরকার শেষ পর্যন্ত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারবে না।

প্রশ্ন: সরকার আপনাদের আন্দোলনকে বলছে, আবেগ, যুক্তিহীন এবং রাজনৈতিক। সরকার দেশের স্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষা করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি করছে। সরকারের এই অভিযোগ সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?
আনু মুহাম্মদ: দেখুন, সরকারের পক্ষ থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক রকম প্রলাপ বকা হচ্ছে। আমরা সরকারের এসব প্রলাপে গুরুত্ব দিচ্ছি না। কারণ আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য, যুক্তি এবং তথ্য আছে। আর আমাদের সংগৃহীত তথ্য- উপাত্ত গবেষণালব্ধ। আমরা আমাদের তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। সরকার আমাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি।সরকার যদি আমাদের বক্তব্য খণ্ডন করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বারা কোনো ক্ষতি হবে না সেটা প্রমাণ করতে পারত তাহলে তো কোনো অসুবিধা ছিল না। সরকার এ ব্যাপারে তার স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার যতই এ ব্যাপারে কথা-বার্তা বলছে ততই তাদের ব্যাখ্যাদানের অক্ষমতা, অস্বচ্ছতা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক তৎপরতা বেরিয়ে পড়ছে।সরকার এগুলো যত করবে জনগণের প্রতিরোধ ততোই শাণিত হবে।

প্রশ্ন: সরকার কেন কারো কথাই শুনছে না?
আনু মুহাম্মদ: আমাদেরও কিন্তু এই একই প্রশ্ন। আমরা এমনও দেখেছি যে সরকারি দলেরও এমন অনেকে আছেন যারা এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন না। আমার মনে হয় যে ভারতীয় কোম্পানির যে মুনাফা, সেই মুনফাকে কেন্দ্র করে পুরো সুন্দরবন অঞ্চলে ভূমি দস্যুদের তৎপরতাই সরকারকে প্রভাবিত করছে। সরকার জনগণের স্বার্থের চেয়ে ভূমিদস্যুদের স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের ভেতরের একটা অংশের সীমাহীন লোভ এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে এটা করতে চায়। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করি না।

আমরা মনে করি-জনগণের কাছে সুন্দরবনের ক্ষতিকর বিষয়ের খবরটা আছে এবং যখন সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে এটা তাদের নিজেদের এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর- কাজেই তারাই সরকারকে প্রতিহত করবে। কোনো ষড়যন্ত্র, ভয়ভীতি বা নির্যাতন করে এই বিদ্যুৎপ্রকল্প করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না।








০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×