somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রে দশ বছর ... 8-|

০৬ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদায়কালের নূন্যতম আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বোটের দিকে এগোলাম। প্রথমবারের মত স্পীডবোটে ভ্রমণ বলে খানিকটা উত্তেজিতই ছিলাম। ঢুকেই সামনের দিকের সিট দখল করে ভাবলাম, যাক জার্নিটা ভালো না হয়ে আর যায় কোথায়B-)। ঠিক দুটোর সময়ই বোট ছাড়লো।

বাজে আবহাওয়ার কারণে ৩২ আসনের বোটে মাত্র ১০ জন যাত্রী আর ৩ জন ক্রু। যাত্রীদের বেশীর ভাগই পিছনের দিকে বসছে। সামনে বসার জন্য কারও তেমন আগ্রহই নেই /:) । বোটে কেমন যেন হাসপাতাল হাসপাতাল গন্ধ। প্রায় সবারই সামনের সীটের সাথে নীল রঙের পলিথিন রাখা আছে। বমি আসলে সেটা পার্সেল করে সমুদ্রের মাছগুলোকে গিফটু করার ব্যাবস্থা। আমার সামনে কোন পলিথিন ছিলনা। অবশ্য যে কোন জার্নিতে বমি করার মত পাবলিকও আমি না /:)

যাকগে, এসব বাদ দিয়ে চারপাশের প্রকৃতি দেখার জন্য নজর দিলাম। কিন্তু বিধি বাম। স্পীডবোট যেইনা গভীর সমুদ্রে গিয়ে সর্বোচ্চ গতিতে চলতে শুরু করল তখন সামনে দিয়ে দেখা তো দূরে থাক , প্রচন্ড জোরে ঢেউয়ের ধাক্কায় পেটের সব কিছু গুলিয়ে যেতে লাগলো:|। একেকবার বোট টা উপরে উঠছে আবার ধপাশ করে আছরে পরছে আবার কখনও ঢেউয়ের বিরাট ধাক্কা। সামনের সিট শক্ত করে ধরে রাখলাম। তারপরও কোন সুবিধা হচ্ছেনা :(( । পিছনে তাকিয়ে দেখি বাকীরা নিশ্চিন্তে সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে |-) । এতক্ষণে বুঝলাম , সামনে কেন কেউ বসেনা। অনেক কষ্টে সিট ধরে ধরে পিছনের দিকের একটা সিটে গিয়ে বসলাম।

বোটে একজন বাংলাদেশী ক্রু ছিল। সে আমাকে দিবাহি মনে করছে। ইশারায় অন্য একজন লোকের পাশে বসতে বলল। বোটের ব্যালেন্স ঠিক রাখার ব্যাবস্থা। তবে এই সিটেও খুব একটা আরাম পাচ্ছিনা। সামনে থেকে এক বয়স্ক মহিলা এক প্যাকেট পার্সেল পাঠিয়ে দিল। আর সেই বাংলাদেশী ক্রু প্যাকেট টা সংগ্রহ করে সাগরে নিক্ষেপ করল। আমার পাশের ভদ্রলোক বমি থামাবার জন্য চোখমুখ বন্ধ করে রেখেছে:-*। কিন্তু বিশেষ সুবিধা করতে পারলনা। সামনে রাখা প্যাকেট গুলোতে একটু একটু করে বমি করে করে পিছনের বাংলাদেশীর হাতে দিতে লাগলো। এর মধ্যে সামনে থেকেও আরও দুজন পার্সেল পাঠাচ্ছে। আমারও খারাপ লাগছিল। আমি ঐ বাংলাদেশীকে বলে কয়েকটা পলিথিন ব্যাগ এনে সামনের সিটে গুজে রাখলাম। পাশের ভদ্রলোক আমারগুলো নিয়েও পার্সেল বানাতে লাগলোX((। বোটের ভিতরে দুপাশের জানালা বন্ধ, শুধু সমানেরটা একটু ফাকা। একেতো ইন্জিনের প্রচন্ড শব্দ তার উপর, চারপাশের লোকজনের বমিতে ততক্ষণে বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছে :-< ।

আমার অবস্থা তখন খুবই করুন। বার বার ঘড়িতে সময় দেখছি। অনেক কষ্ট করে কিছুক্ষণ শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি দশ মিনিটও যায়না কিন্তু মনে হচ্ছে দশ বছর পার করে ফেললাম। ইধাফুশী থেকে মালে ১৪০ কিমি যেতে আড়াই ঘন্টা লাগে। আরও দুই ঘন্টা কি করে থাকবো মাথায় আসতেছেনা। মাথা কেমন যেন ঝিম ঝিম করতে লাগলো। মেরুদন্ডে শীতল স্রোত বয়ে গেল। বমি আসার সব গুলো লক্ষণ মিলে যাচ্ছে। এবার তাহলে আমার বমি না করার রেকর্ড টা ভেংগেই যাবে...



হঠাৎ সেই বাংলাদেশী ক্রুর ডাকে পিছনে ফিরলাম। লোকটা আমাকে পিছনের সিটে গিয়ে বসালো। আসন পরিবর্তন করাতে কিছুক্ষণের জন্য বমি বমি ভাবটা দূর হলো। একটু পরে আবারও লোকটা ডাক দিয়ে একেবারে পিছনে রেলিং এর সাথে লাগানো বেন্চে বসালো। এই সিট টাতে প্রচন্ড বাতাস আর মাঝে মাঝেই সাগরের পানি এসে হালকা ভিজিয়ে দিতে লাগলো।



বাংলাদেশী লোকটার সাথে গল্প করলাম আর দূরে দ্বীপগুলো দেখছিলাম। ইন্জিনের প্রচন্ড শব্দের কারনে অনেক জোরে জোরে কথা বলছিলাম।



কোন কোন দ্বীপের খুব কাছ দিয়ে বোট গেল। বমি বমি ভাবটা কখন কেটে গেছে টেরই পেলামনা B-)



বাংলাদেশী লোকটা অন্যান্য যাত্রীদের পার্সেল সংগ্রহ করে সাগরে নিক্ষেপ করে আর পানির বোতল এগিয়ে দিতে দিতে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গেছে। আমার কাছে এসে বলে, "ালার দিবাহি!! জানেই যে বমি করবে তাও প্যাট ভইরা খাইয়া আহে...X(X( "



বোট থেকে বিকেলের সমুদ্র



একসময় আমাদের চারপাশে অনেক গুলো জাহাজ দেখে মনে হলো মালে যেতে আর বেশিক্ষণ হয় তো লাগবেনা।



হঠাৎই অনেক গুলো দালান সহ একটা আইল্যান্ড চোখে পড়ল



বাংলাদেশী লোকটাকে জিগেস করলে বলল, হ্যা এটাই মালে :D



পিছনে এসে বসে দুঘন্টা কিভাবে যে শেষ হলো, টেরই পেলামনা



মালের জেটী্তে আমাদের স্পীডবোট প্রবেশ করছে



জেটীতে সারি সারি বোট


২ ঘন্টা ২০ মিনিট সমুদ্র যাত্রার পরে অবশেষে মালেতে পৌছাই। ট্যাক্সীতে চড়ে সিটে হেলান দিয়ে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এসির ঠান্ডায় মুখের চামড়া টান টান লাগে। হাত দিয়ে দেখি মুখে ২ ইনচি পুরু লবণের স্তর জমে আছে :-*। যাই হোক, মালেতে চারদিন থাকি.... সেই কাহিনী না হয় পরের পোষ্টে শুইনেন... B-)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৩৯
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×