somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠমান্ডুতে কয়েকদিন

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিসে একদিন হঠাৎ করেই বসের রুমে তলব। ভাবলাম আবার কি হল /:) । গিয়ে শুনি দারুন খবর :D । আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে একজনকে নেপালে একটি বিশেষ ট্রেনিং এ পাঠানো হবে। যার যাওয়ার কথা ছিল সে যাবেনা বলে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে। হুট করে এমন সুযোগ পেয়ে আমিতো মহা খুশি B-)




এই ট্রেনিং এ বাংলাদেশ থেকে আরও চারজন অংশগ্রহন করবেন যাদের কাউকেই চিনিনা। একজনের সাথে কেবল ফোনে কথা হল। এয়ারপোর্টে পৌছে দেখলাম আরও অনেক বাংলাদেশী ছোট বড় দল নেপালে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ক্রীড়াবিদদেরও একটা দল ছিল। ১০-১৫ জন নেপালী পুলাপান ছিল, যারা সম্ভবত বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে আসছিল। এয়ারপোর্টে ঘোষণা দেওয়া বিমান দেড় ঘন্টা লেইটX(। বাংলাদেশ বিমানে আমি এবারই প্রথম ভ্রমণ করছি, তাই ফ্লাইট লেইটের ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর লাগছিল। অনেকক্ষণ পর একজন বিমান কর্তৃপক্ষ দরজা পর্যন্ত এসে আবার ঘুরে চলে যেতে থাকে /:) । তাকে দেখে নেপালী পুলাপান গুলা রীতিমত হাউকাউ শুরু করে দেয়:|




যাইহোক, অবশেষে সহি সালামতে ত্রিভূবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌছলাম। বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষমাণ গাড়ীতে উঠে বাকি চারজন বাংলাদেশীর সাথে পরিচিত হলাম। সবার মধ্যে আমিই সবচেয়ে ছোট আর এরকম ট্রেনিং এ একেবারে নতুন। তাই ট্রেনিং প্রোগ্রামটা আমার কাছে যতটা আকর্ষনীয় ছিলB-) তাদের কাছে তেমন ছিলনা।




হোটেলে যেতে যেতে কাঠমুন্ডুর রাস্তাঘাট দেখলাম। এখানকার পরিবেশ আমাদের ঢাকার চেয়ে অনেক দূষিত /:)




আমাদেরকে হোটেল হিমালয়াতে নিয়ে যাওয়া হল। হোটলের বারান্দা থেকে দূরে পাহাড় দেখা যায়। হোটেল আমার অনেক পছন্দ হল B-)(ছবি পরে আছে)। কারণ এরকম হোটেলে আগে কখনও থাকিনি। যাই হোক, হাতমুখ ধুয়ে নিচে খেতে চলে এলাম। আমাদেরকে জানানো হল, ট্রেনিং প্রোগ্রাম প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত হোটেলের কনফারেন্স রুমেই হবে:((। আর খাবার তিনবেলাই হোটেল কর্তৃপক্ষ আয়োজন করবে:D

পরদিন ট্রেনিং শুরু হল। বেশির ভাগই নেপালী আর কয়েকজন ইন্ডিয়ানও ছিল। নেপালীদের কাছ থেকে দর্শনীয় জায়গাগুলো জেনে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হল ট্রেনিং যেহেতু পাঁচটা পর্যন্ত, তাই বেশী দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিলনা। কাছাকাছি ছিল দরবার স্কয়ার। দরবার স্কয়ার কতদূর জিগেস করতেই বলল, ১৫ মিনিট হাটাপথ। নেপালীরা বেশীর ভাগ দূরত্বই হাটাপথে হিসাব করে। যাইহোক, বিকেলে পাঁচজন মিলে দরবার স্কয়ারের দিকে রওয়ানা হলাম:)




চিপা গলি দিয়ে যেতে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগে গেল :-< ।




দরবার স্কয়ার হল, প্রাচীন কালের রাজা বাদশাহদের সভা সমাবেশের স্থান। কাঠমুন্ডুতে এরকম তিনটা দরবার স্কয়ার আছে।




সবগুলো দরবার স্কয়ারই প্রায় একইরকম




বিকালবেলা দরবার স্কয়ারে ভালই ভিড় জমে :D




নেপালে যারা ঘুরতে আসে, সবাই দরবার স্কয়ারে গিয়ে ছবি তুলে




এটা দরবার স্কয়ারের পাশে প্রাচীন আমলে ব্যবহৃত কোন বিশেষ দালান হবে 8-|




এখানে এসে মনে হচ্ছিল অনেক প্রাচীন কালের কোন শহরে চলে এসেছি




কিন্তু খালি দরবার স্কয়ার দেখে কি আর মন ভড়ে :|




আমরা প্রথম দুই তিনদিনে দরবার স্কয়ার আর মার্কেট এরিয়া ঘুরে দেখলাম। এবার একটু দূরে কোথাও যেতে চাই।




নেপালীদেরকে জিগেস করতেই ওরা মাংকি টেম্পলে যেতে বলল। একজন নেপালী বন্ধু নিজে থেকে আমাদেরকে গাইড করতে রাজী হল:)




ট্যাক্সীতে করে মাংকি টেম্পলে গিয়ে দেখি, টেম্পল অনেক উঁচুতে। সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে।




সিড়ি দিয়ে উঠার সময় চারপাশে প্রচুর বান্দরের উপস্থিতি টেম্পলের নামকরণের স্বার্থকতা প্রমাণ করল /:)




কিছুদূর উঠার পর নিচে কাঠমুন্ডু শহর দেখে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে লাগলাম:D। তখন গাইড বলল উপরে গেলে আরও সুন্দর ভিউ পাওয়া যাবে।




গাইডের কথাই সত্যি হল। উপরে উঠে আমরা সত্যিই অভিভূত হলাম B-)




গম্বুজাকৃতির টেম্পল




এখানে পূজা করা হয়




জনৈক শাখামৃগ




সেদিন টেম্পল থেকে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হল। পরদিন শুক্রবার ছিল।




জুমার নামাজের জন্য ট্যাক্সীওয়ালাদের কিছুতেই মসজিদ চেনাতে পারিনাই/:)। শেষমেশ একজন বুঝতে পারলো আর বলল এরপরে মসজিদে যেতে চাইলে, যে কোন ট্যাক্সিওয়ালাকে "ঘন্টাঘর যাবো" বললেই হবে। ঘন্টাঘর হল বিরাট ঘড়িযুক্ত একটা মিনার। এই মিনারের পাশেই জামে মসজিদ




মসজিদে গিয়ে বুঝলাম, কাঠমুন্ডুতে মুসলমানের সংখ্যা একদম কম না। আমরা যেই মসজিদে নামাজ পড়লাম একই রাস্তায় আরও একটা মসজিদ দেখলাম। এরপর কেনাকাটার জন্য মার্কেটের দিকে রওয়ানা হলাম।




মার্কেটে যাবার পথে গনেশমান সিং এর মূর্তি। গনেশমান সিং এদেশের গনতন্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত।




আমি কয়েক প্যাকেট চা আর আম্মুর জন্য একটা পশমী শাওয়াল আর কি কি যেন কিনেছিলাম সব মনে নেই।




আমাদের মধ্যে বয়স্ক দুজন তাদের পুলাপানের জন্য দেখেশুনে অনেক কিছু কিনেছিলেন। বাকি দুজন তেমন কিছু কিনেন নাই




এখানকার রিকশাওয়ালারাও ছাউনির নিচে থাকে :D




ফেরী করে আম বিক্রয়




রাস্তার পাশে ভাজাপোড়ার দোকান




বিভিন্ন রকমের, স্বাদের চা।




স্যুভেনিরের দোকান




দোকানে সাজানো স্যুভেনির




এবার হোটেলের ছবি দেখুন :P




আমি যেই রুমটাতে ছিলাম B-)




হোটেলের সার্ভিস আমার কাছে খুবই ভালো মনে হয়েছে




হোটেলের পিছনের দিকটা। নেপালীদেরকে অনেক বেশী বন্ধুবাৎসল মনে হল। বিশেষ করে সিংহালা, ইন্ডিয়ান বা মালদিভিয়ানদের চেয়েও ওদেরকে সহজ সরল মনে হল। ট্রেনিং শেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় বুঝতে পারলাম, অল্প কয়েকদিনে সবাই কতটা আপন হয়ে গিয়েছিল 8-|
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৭
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×