somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~মধ্যপদলোপী কু-কর্মকারক~ B-)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গল্প লিখাটা আমাকে দিয়ে হয় না। আসলে চেষ্টা করিনি কখনো। কিন্তু আজকে সবাইকে গল্প শোনাবো। কিছুটা বাস্তব কিছুটা ফ্যান্টাসি সাথে থ্রিল একটা ফীল নিয়ে আসা যায় নাকি দেখাযাক।

জাহাজীদের জীবন-যাপন নিয়ে অনেকেই ধোঁয়াশা ধারণা নিয়েই থাকে সাধারণত। যেহেতু কেউ সামনাসামনি দেখেননি তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক রিউমার ছড়ানোটাই স্বাভাবিক। তেমন একটা জাহাজের অল্প কিছু সংখ্যক জাহাজীদের নিয়েই গল্পের প্লট।

M.V. Orion Leader, জাহাজটি বেশ বড় কোম্পানী গুলোর মাঝে একটির । জাহাজের গতিপথ নির্দিষ্ট নেই। যে কোন সময়েই যে কোন দিকে যাত্রা করতে হয় চাহিদা অনুযায়ী। প্রথমে সবাইকে জাহাজের বাসিন্দাদের সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা দেয়া দরকার। জাহাজের ক্যাপ্টেন সর্বেসর্বা। তার সাহায্যের জন্যে থাকে ৩ অফিসার। চীফ, 2nd আর 3rd অফিসার, আর দুইজন ট্রেইনি অফিসার কখনো ১ জন । ৩ জন অফিসার পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘন্টা ডিউটিতে নিয়জিত থাকে। আট ঘন্টা পরপর চারঘন্টা নেভিগেশন্যাল ওয়াচ। সেক্ষেত্রে সময়টা জানা জরুরী আপনাদের। চীফ অফিসার কে দিয়েই শুরু করি। সকাল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তার ডিউটি। তারপরেই 3rd অফিসারের ডিউটি ৮টা থেকে ১২টা। ১২টায় 2nd অফিসার আসে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ওয়াচে। আবার চীফ অফিসার ৪-৮টা। এই ভাবেই চলতে থাকে। রাতের ওয়াচে 3rd অফিসারের সাথে আর 2nd অফিসারের সাথে ১ জন করে ক্রু থাকে। সঙ্গ দেয়ার জন্যে। এছারাও ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে থাকেন চীফ ইঞ্জিনিয়ার, 2nd ইঞ্জিনিয়ার, 3rd ইঞ্জিনিয়ার আর সাথে দুইটা কখনো ১টা ট্রেইনি ইঞ্জিনিয়ার। আর বাদ বাকী সব ক্রু।

যেহেতু ঘটনা শুরু থেকে শেষ অব্দি অফিসারদেরই নিয়ে ঘটা, তাই ইঞ্জিনিয়ারদের গল্পের খাতিরে পরিচয় করিয়েদেয়া মাত্র। চলুন ফিরে যাই মূল ঘটনায়।

সময় রাত ১২টা। 2nd অফিসার ইন্ডিয়ান, নাম রাজেশ নিজের ডিউটিতে চলে এসেছে 3rd অফিসার ইউক্রেনিয়ান নাম ইয়েভগান কে রেস্ট দিতে। সবভাব সুলভ কুশলাদি বিনিময়ের পরে 3rd অফিসার আর সাথের ক্রু বিদায় নিল। 2nd অফিসার তার যাবতীয় কাজে ব্যাস্ত ঠিক না মনোনিবেশ করলো। সব কিছুই অন্য সব সাধারণ দিনের মতই চলছে।
রাত ২টার সময়ে 2nd অফিসারের সাথে থাকা ক্রু নীচে ১০ মিনিটের জন্যে কিছু খাওয়ার জন্যে ব্রিজ(নেভিগেশন করা হয় যে স্থান থেকে) থেকে নীচে একোমোডেশন ডেকে যায়। ১০-১৫ মিনিট পরে ফিরে আসে। ফিরে এসে ব্রিজ খালি পায়। স্বাভাবিক ভাবেই তার মনেহয় এইটা ভুল কাজ। পরক্ষণেই ভাবে খোলা সমুদ্র তাই হয়তো অফিসার ওয়াশ রুমে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও অফিসারের আসার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। ধীরে ধীরে তার মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। ফোন করে ডেকে তোলে চীফ অফিসারকে। চীফ অফিসার ব্রীজে আসে দ্রুত। ডাকে ক্যাপ্টেন কেও। কিন্তু খোজাখুজির পর পাওয়াযায়না 2nd অফিসার। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। ইমার্জেন্সি এলার্ম রেইজ করা হয়। সাথে সাথে সার্চও করা হয় পুরো জাহাজেই। কিন্তু 2nd অফিসারের টিকিটিরও দেখা পায় না কেউ।

মহা ঝামেলা এইদিকে কোম্পানীকে জানানো। তারপরে কোম্পানীর হাজারটা প্রশ্নের উত্তর ইনভেস্টিগেশন চলতে থাকে। এরই মাঝে পরের পোর্টে নতুন এক অফিসার যোগ দেয় টীমে শুন্যস্থান পূরণ করতে। আবারো সব স্বাভাবিক ভাবেই চলা শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে আবারো নতুন এই 2nd অফিসার একইভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। একই ভাবে তাকে কেউ খুজে পায় না।

এইবার টনক নড়ে কোম্পানীর। তারাও বেশ উদ্বিগ্ন। কি করে সামাল দেবে এই উটকো ঝামেলাকে? কত কত সুনাম সব একমুহুর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে বসেছে। ম্যানেজ মেন্ট কোম্পানী বলে জাহাজ মালিক কোম্পানীর চাপও তাদের উপরে রয়েছে। সব কিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এখন এই জাহাজে কোন অফিসারই যেতে চায় না। আর এই ধরণের ঘটনায় ঘটনার চেয়ে রটনা যদিও বেশি হয় এইখানে ঘটনাইতো বিশেষ বড়। রটনা ডালপালা ছড়িয়ে বড় হয়ে গেছে ততদিনে।

অনেক যোগারযন্ত্র শেষে এক রাশিয়ান অফিসার যেতে রাজী হল। তাকে পুরো ঘটনা প্রথম হতে শেষ অব্দি জানানো হল। সাথে তাকে সকল প্রকার সাবধানতাও শিখিয়ে দেয়া হল। আবার নতুন অফিসার জয়েন করলো বেশ কয়েক পোর্ট পরে। থমথমে পরিবেশ জাহাজের। সবাই নিজের কাজের বাইরে খুব বেশি সময় ব্যয় করে না। এক সাথে থাকার চেষ্টা করে সবসময়েই। কিছুদিন সময় পেরোল। সবাই যখন একটু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে তখনকার একরাতের কথা। আবারো একই অফিসারের ওয়াচ। রাতে ২ টা ১৫র দিকে 2nd অফিসারের ওয়াচের ক্রু আবারো কিছু খেতেই নীচে যায়। এই নতুন অফিসারের কথা কিছুটা বলে নেয়া দরকার। সে জয়েন করার পরে থেকেই রাতের ওয়াচের পুরো সময়েই সে হাতে ছোট একটা ছুড়ি হাতে রাখে। আর সাধারণত ব্রীজ উইং(ব্রীজের পাশে ডানার মতন বারান্দা সদৃশ স্থান) এই দাঁড়িয়ে থাকে। ফিরে যায় এইবার আগের জায়গায়। ক্রু নীচে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই 2nd অফিসার অনুভব করে অস্বাভাবিক কিছু। একোমোডেশন ডেক থেকে ব্রীজ উইং এ আসার জন্যে ল্যাডার আছে সেই দিক দিয়েই আলখাল্লা পরা আর মুখঢাকা একজন কেউ নিঃশব্দে উঠে আসছে মনে হয় তার। সে হাতের ছুড়ি আরো শক্ত করে ধরে নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে। তখনই তার উপরে ঝাপিয়ে পরে সেই অবয়বটি। বেশ খানিকক্ষণ ধস্থা ধস্তির মাঝখানে সে মুখ বরাবর ছুড়ি চালিয়ে দেয় সেই অবয়বের। দৌড়ে পালিয়ে যায় তখন সেই অবয়বটি। ততক্ষণে 2nd অফিসার জাহাজের ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজায়। ইমার্জেন্সি এলার্ম বাজানোর সাথে সাথে নিয়ম সকল ক্রু আর অফিসার নির্দিষ্ট স্থানে জড় হতে হয়। সবাই যার যার জায়গায় উপস্থিত ছিল। একজনকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন। খোদ ক্যাপ্টেন সাহেব এসে পৌছাননি তখনো। সবাই কিছুক্ষণ পরে খোজ করতে ক্যাপ্টেনের রুমে যায়। শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙ্গেই প্রায় তার রুমে ঢোকে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার ক্যাপ্টেনের ডান গানে ছুড়ির জখম ছিল। সেই কারণেই তিনি মাস্টারিং এর জন্যে যান নি তখনো।

কেস স্টাডিঃ পরবর্তীতে ইনভেস্টিগেশনে দেখা যায় ক্যাপ্টেন মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি ঠান্ডা মাথায় ২ জন অফিসারকে সাগরে জলাঞ্জলি দেন। এবং তার টার্গেট ছিল শুধুই জাহাজের 2nd অফিসার। এর কারণ হিসেবে যা উঠে আসে তা হল এক সময়ে তিনি সস্ত্রীক জাহাজে আসতেন। কোন এক জাহাজের 2nd অফিসারের সাথে তার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক গরে ওঠে। এবং ফলশ্রুতিতে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়।

--- একটি (প্রায়) সত্য ঘটনা অবলম্বনে ---

বিঃদ্রঃ জাহাজের নামটা আমার আগের জাহাজের নাম। আর অফিসারদের নাম সঠিক না। মনগড়া।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×