somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্পৃশ্য

০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারহান তার কেবিনে এসে দরজাটা ঝটকা মেরে বন্ধ করলো। মাঝে মাঝে তার খুব রাগ হয়। আশে পাশের সব কিছুর উপরেই। রাগটাকে ঠিক বশে আনতে পারে না কখনোই। শত চেষ্টার পরেও ঠিক রেগে ওঠার মুহুর্তটাতেই কেমন করে যেন তার সব কিছু ওলট পালট হয়ে যায়। ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে হয় সব। কখনো কখনো ধ্বংস করেও। কখনো কারো সাথে সম্পর্ক কে ধ্বংস করে কখনো হয়তো নিজের ইচ্ছাকে ধ্বংস করে। তার নিজেরও জানা আছে এই ব্যাপারটা। কিন্তু কিছুতেই যেন বশে আনতে পারে না রাগটাকে সময় মতন।


আজকের রাগ হওয়ার কারণটা অবান্তর নয় অবশ্য। দোষ যে তার নিজেরও নেই তা নয়। কিন্তু দোষ স্বীকার করতে পারার ক্ষমতা তো তার আছে। তার পরেও কেন মানুষ গুলো এমন হয়? সাধারণ ব্যাপার সাধারণ ভাবে চিন্তা করতে মাঝে মাঝে মানুষ গুলোর সমস্যা কোথায় হয় ঠিক বুঝতে পারে না সে।

জাহাজে থাকতে হলে সকলেরই অন্যের প্রতি কিছুটা সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। না সহনশীলতা অবশ্যই কোন কিছু অতিক্রম করে নয়। কিন্তু একদম মিনিমাম লেভেলের একটা সহনশীলতা তো থাকা দরকার। উপরের দিকের মানুষগুলো যদি সকল সময়ে নিজেদের ক্ষমতার ব্যাবহার গুলো ঠিক মত না করে তবে এক সময় ছোট মানুষগুলো ভয়েই তাদের কাছে ভিড়বেনা বলে মনে হয়। ভুল হলে তা অবশ্যই ঠিক করা উচিত এবং সেই কাজটাও করতে হবে ঠিক ততটুকু যত্ন নিয়েই যাতে করে যাকে শেখানো হচ্ছে তার শিখার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

রুমে এসেই মনে পরে বাসার কথা। বাবা মার সাথে কথা বলা দরকার। প্রচন্ড ব্যাস্ততার কারণে বাসায় কথাবলা হয়নি দুই দিন প্রায়। গত দুইদিনে তার খাওয়া ঘুম বাবদ সময় মিলেছে ৩ ঘন্টা খানেক হবে হয়তো জোড়া তালি দিয়ে। বাবার সাথে কানেক্ট করার চেষ্টা করে সে মাঝে মাঝে মন বিক্ষিপ্ত থাকলে ট্যালিপ্যাথি কাজ করে না তার। আজকে যেমন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বেশ কয়েকবার কানেক্ট করার চেষ্টা করেও পারছে না। রুম থেকে বের হয় কন কনে ঠান্ডা। জার্মানীর শীতকালীন তাপমাত্রা সম্পর্কে তার ধারণা পুরোনো। তারপরেও জাহাজের ডেকে এসে দাঁড়ায়। অনেক কিছুই মনে পরে তার। অনেককাল আগের কথা। ডিউটি শেষে ঠিক এই রকমই ঠান্ডার মাঝে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে থাকতো একটুকু মোবাইল সিগনালের জন্যে। কোন এক অজানা কারণে কনকনে ঠান্ডা তার কাছে কিছুই মনে হোত না তখন। হাতে সিগারেট নিয়ে এই পাশ থেকে ওই পাশ। অবশ্যই ক্যাপ্টেনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। জাহাজের ডেকে ধুম্রপান স্ট্রিকটলি প্রহিবিটেড। মাঝে মাঝে রাতের ওয়াচকিপারের সাথে দেখাও হয়ে যেত। প্রত্যেকবারই তাকে সাবধান করতো “you will die early, man” বলে। কে শোনে কার কথা। এখনো তো বেঁচে আছি। সৃষ্টি কর্তা কিছু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন তার ক্ষমতা দেখানোর জন্যে। সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার কাছে তারা কতটুকু অসহায় তা দেখানোর জন্যে। সব কিছু তাকে দিয়ে কেড়ে নিয়ে উপহাস করার জন্যে। মাঝে মাঝে সৃষ্টিকর্তার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছা হয়। সামনে খুজে পাওয়া গেলে বেশ হোত। এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতেই বাবার সাথে যোগাযোগ হয় একসময়ে। বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনোই যেন বড় হয় না। প্রতিবারই তাদের কাছে শুনতে হয় যখন নিজের সন্তানের বাবা হবে কেউ তখনই বুঝতে পারবে। মনে মনে হাসে সে, যতটা গাছ সদৃশতা দেখায় আসলে খুব বেশি মানুষের জানার ক্ষমতা নেই গাছেরও প্রাণ আছে। প্রত্যেকবার বাবা মার সাথে কথা বলার পরে কোন এক আজব কারণে তার চোখ ভিজে ওঠে। আমাদের সমাজের এক অসম্ভব একতরফা সিস্টেম। ছেলে মানুষের নাকি চোখে পানি আসতে নেই। এই ধরণের একতরফা নিয়ম কেন কে জানে। নিয়মের ধার তো কখনোই ধারে না সে। তার পরেও ব্যাপারটা লজ্জা জনক হয়তো, তাই কিছুটা লজ্জার কারণেই ব্যাপারটা সবার থেকে আড়াল রাখার চেষ্টাই করে সব সময়ে। ট্যালিপ্যাথীর আরেকটা সমস্যা একসঙ্গে এক জনের বেশি কারো সাথে কথা বলা যায় না। আবার মায়ের সাথে কানেক্ট করে সে। সেই একই কথা কি খাওয়া হয়েছে। ঘুম হয়েছে কিনা। বেশিরভাগ সময়েই ব্যাপারগুলোকে আড়াল করার চেষতা করলেও সম্ভব হয় কিনা জানেনা সে। বরাবরের মতই তার খুব কাছের দুই বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলে একই উপায়ে। যোগাযোগ হলেও আসলে কিছুটা বিক্ষিপ্ততা থেকেই যায়। কেউই নিজের জায়গায় ঠিক সুখে নেই যেন। মানুষের রচিত মূলত সকল কিছুর ভাষ্য একই। যে যেইখানেই থাকুক সেই জায়গাটাতে কেউই সুখে নেই।
আমরা যেখানে আছি সেখানে ভাল নেই, Grass is green are on the other side, So we would like to go to that side where probably there is a little more happiness....


যদি না ব্যাপার গুলোতে নিজেকে বা স্রষ্ঠাকে খোজার ব্যাপার থাকে ... স্রষ্ঠার বসবাস প্রত্যেকটা সৃষ্টির মাঝেই। প্রত্যেক সৃষ্টিকেই সমপরিমাণের আগ্রহে সৃষ্টি। কোন কারণ ছাড়া কোন কিছুরই সৃষ্টি হয় না। প্রতিটা সৃষ্টির পিছনে কিছুনা কিছু কারণ অবশ্যই রয়েছে। কারণ খুজতে চেষ্টা করা সম্ভবত বৃথা, সৃষ্টির রহস্য যতটুকু আড়ালে থাকে ততটাই ভাল। সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন হলে কোন আগ্রহ থাকবে না আর কোন কিছুর প্রতি।


কথা শেষে আবার পেছন দিকে ফেরত যায় সে। এমন কন কনে ঠান্ডা এক সময়ে ফোনের নেটওয়ার্কের জন্যে ছুটোছুটি বিশেষ করে যদি আশে পাশে কোন মাটির বিন্দু মাত্র নিশানা থাকে। নেটওয়ার্কের ছিটে ফোটা থাকলেও চেষ্টা চলতো কোন একটা নাম্বারে যোগাযোগের। দেখা যেত কয়েকদিন অঘুমা থাকার পরেও যোগাযোগের চেষ্টা। যোগাযোগ হলে সকল ক্লান্তি অবহেলা করেও হয়তো রাত পার করে দিত সে। মাঝে মাঝে ব্যাপারগুলোকে তার হাস্যকর লাগে। ফোনে কথা বলতে কখনোই সে খুব বেশি সহজবোধ করে না। কারো সাথেই কখনো ফোনে কথা বলতে অভ্যস্ত নয়। হয়তো এইটা তার বদ অভ্যাস। মানুষ কথা বলতে ভালবাসে। সুখ দুঃখের কথা। সেইখানে কথা বলতে না পারা মানুষের সাথে কারোই তেমন জমে না আসলে। হয়তো ফোনের অন্যপাশের মানুষটা চরম বিরক্ত নিয়েই ফোন কানে ধরে রাখতো ভদ্রতার খাতিরে খুব বেশি কিছু বলতোও না।


চিন্তাভাবনা গুলো আবারো বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফেরত যাওয়া দরকার কেবিনে। ঠান্ডা গাঁয়ে ভালভাবেই লাগছে। তারপরেও কোন এক অজানা কারণে এই ঠান্ডাকেই ভাল লাগছে তার। একসময়ে তার ডিউটির পর পর ঘুমানোর অভ্যাস ছিল। ধীরে ধীরে সেই অভ্যাসও কোন এক কারনে পরিবর্তন হয়েছে এখন। মানুষ পরিবর্তনশীল। কিন্তু তারপরেও মানুষের পরিবর্তনকে অসহ্য মনে হয় মাঝে মাঝে। অপরিবর্তনশীলতায় বোধহয় অল্প কিছু মানুষই থাকে, তার মাঝে দুই প্রাণী সব সময়ে সব কিছুর ঊর্ধে। সব কিছু বদল হয় কিন্তু বাবা-মা নামক প্রাণী দুইজনের পরিবর্তন কখনোই চোখে পরে না আসলে। এরা সব সময়েই একই রকম থাকে। এই কারণটা এখনো বা কখনোই মাথায় ঢুকে না।


এই সব চিন্তা করতে করতে কেবিনে গিয়ে দরজা লাগায় আবার। বরাবরের মতন বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ব্রিজ থেকে ফোন কিছুক্ষন পরেই পাইলট এরাইভাল হচ্ছে। ঘুম ভেঙে মনে মনে হাসে সে। কি সব আজে বাজে স্বপ্নই দেখে মাঝে মাঝে। ট্যালিপ্যাথী দিয়ে যোগাযোগ। জাহাজে থাকলেই এমন সব উদ্ভট সকল চিন্তা মাথায় আসে সম্ভবত তার। মনে মনে হাসতে হাসতে সিগারেট ধরায়। ...





মূল পোষ্টঃ অস্পৃশ্য

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×