somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"এবার মজা যাবে বোঝা, কার্তিকেরও লানের কালে"

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাত্মা যখন কারো নামের শুরুতে যুক্ত করা হয় বা কাউকে উপাধি দেয়া হয় ঠিক কতখানি জ্ঞানের অধিকারী সেই ব্যাক্তি তার সম্পর্কে আসলেই হয়তো আমাদের কারো ধারণা নেই। এই উপমহাদেশের প্রথম মহাত্মা উপাধিপ্রাপ্ত মানুষ ছিলেন মহাত্মা লালন সাঁই। তার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে আলোচনা তো দূরে থাকুক তার প্রতিটা কথা কিংবা গানের সম্পর্কে আলোচনা করতে যাওয়াই নিজের কাছে ধৃষ্টতা মনে হয়।

তবে মাঝে মাঝে ধৃষ্টতা করতে ভাল লাগে তাই চেষ্টা করি। মন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ব্যাপারটা আরো ভাল হয়। কোন এক কারণে বিক্ষিপ্ত মনে অন্যান্য সময়ের তুলনায় মাথা কাজ করে মনে হয় একটু বেশিই। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি লালন সাঁইজির কথা সম্পর্কে আসলেই বিশ্লেষণ সম্ভব না। তার পরেও নিজের পক্ষে যতটুকু বোঝা সম্ভব তাই মাঝে মাঝে লিখে রাখি হয়তো পরে কখনো অন্য কারো উপকারে আসবে। এর যথেষ্ট কারণ মনে করি যে কোন ধর্মাবলম্বীই হোকনা কেন সকলের উদ্দেশ্যেই তার রচনাগুলো। “সত্য বল সুপথে চল” কথা টা সকল ধর্মের জন্যেই প্রযোজ্য। তেমনি তার রচনার প্রতিটা অংশই সকল মানব জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যেই।





আরেকটা কথা বলে নেয়া ভাল, এই গানের কথাটুকু বেশ আগোছালো মনে হয় কারণ এক একজন এক এক কথায় গানটি গেয়েছে এক একরকম ভাবে। তারপরেও কাছাকাছি যতটা মনে হয় সেইটুকুই নিয়েছি। কারো কাছে এর চাইতে ভাল কোন লিরিক মানে শুদ্ধ লিরিক থাকলে অবশ্যই শেয়ার করার অনুরোধ থাকলো।


//গেরে গাঙেরও ক্ষ্যাপা
হাপুর হুপুড় ডুব পারিলি
এবার মজা যাবে বোঝা
কার্তিকেরও লানের কালে

ভাই ছলা দেয় ঘড়িঘড়ি
ডুব পারিস গা তাড়াতাড়ি
প্রবল হলে কফের নাড়ী
তাই হানা দেয় জীবন মূলে

কুৎবি যখন কফের জ্বালায়
তাবিজ তাগা বাধবি গলায়
তাতে কি আর হবে ভালাই
মস্তকের জল শুষ্ক হইলে

শান্ত হ রে ওমন ভোলা
ক্ষান্ত দে তুই ঝাপোই খেলা
লালন কয় গেল বেলা
দেখ না এবার চক্ষু মেলে//

গানের লিংক: গেরে গাঙের খ্যাপা


এখন যদি প্রত্যেকটা অংশকে নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি কিছুটা বোধকরি এমন হয়।

//গেরে গাঙেরও ক্ষ্যাপা
হাপুর হুপুড় ডুব পারিলি
এবার মজা যাবে বোঝা
কার্তিকেরও লানের কালে//

গেরে শব্দটি নারী জাতিকে রিপ্রেজেন্ট করে। অর্থাৎ নারীর প্রতিশব্দ এখানে গেরে। তবে বুঝতেই পারা যাচ্ছে “গারে গাঙ্গেরো ক্ষ্যাপা” বলতে অবশ্যই পুরুষদেরকেই বোঝানো হয়েছে। নারীদেহকে যদি গাঙ বা নদীর সাথে তুলনা করা হয় তবে সেখানে হাপুর হুপুড় ডুবানোর জন্যে পুরুষ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু কথা গুলো এখানেই আসলে শেষ হচ্ছে না। পুরুষ কিংবা নারীর সৃষ্টি আসলেই কি শুধু এই লীলার জন্যে? যদি এভাবেই তাদের লীলা চলতে থাকে তবে সকল কিছুরই তো শেষ রয়েছে। সেই কথাই উঠে এসেছে কার্তিকের পূর্ণিমাতে যৌবন বৃদ্ধি বা ধরে রাখার জন্যে পূজা করা হয়। সেই কার্তিকের লানের কালেই বোঝা যাবে আসলে কাদের যৌবনের তাড়ণা কতটুকু।

এবার পরের অংশে যাই।

//ভাই ছলা দেয় ঘড়িঘড়ি
ডুব পারিস গা তাড়াতাড়ি
প্রবল হলে কফের নাড়ী
তাই হানা দেয় জীবন মূলে//

এখানে আসলে সহজ ভাষাতেই বলা যায় মাঝে মাঝে মানুষকে নিজের কাছের মানুষদের প্ররোচনা বিভিন্ন কু-কর্মে লিপ্ত হতে সাহায্য করে বা উসকানি দেয়, সে কথাই বুঝানো হয়েছে। পুরুষের কফ বলতে কামলালসা কে বুঝানো হয়েছে। কারো ছলায় পরে গেরের গাঙেতে ক্ষ্যাপা হলে তা শুধু নিজের জীবন মূলকেই নষ্ট করবে। এর বেশি অন্য কিছুই না।


//কুৎবি যখন কফের জ্বালায়
তাবিজ তাগা বাধবি গলায়
তাতে কি আর হবে ভালাই
মস্তকের জল শুষ্ক হইলে//

সব কিছুরই শেষ রয়েছে। কোন কিছুই স্থায়ী নয় তেমনি মানব জাতির যৌবনও স্থায়ী নয়। যৌবন হেলা খেলায় নষ্ট করলে শেষ অবস্থায় কি দাঁড়ায়? শেষে এসে তাবিজ কবচের সহ বিভিন্ন রকমের অষুধপত্রের সাহায্য নেয় মানুষ। কিন্তু আসলে কি এই রকম হবার কথা ছিল? মানুষের সৃষ্টির কারণ কি ছিল? বা মানব জাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? যাই হোকনা কেন সেই উদ্দেশ্যের দিকে এখন আর না যাই। কিন্তু সেই দিকে দৃষ্টিপাত না করে যৌবনের সময়ে নিজের যৌবনকে কু-কর্মে দান করার পর তা ফেরত পাবার নয়। চলে যাওয়া মানুষই ফেরত আসে না। আর মানব শরীরের অংশ ফেরত আসার আশা করা হাস্যকর বৈ কী।

শেষে এসে আসলে লালন বরাবরের মতই তার অন্যান্য সকল গানের মতই শেষ করেছেন।

//শান্ত হ রে ওমন ভোলা
ক্ষান্ত দে তুই ঝাপোই খেলা
লালন কয় গেল বেলা
দেখ না এবার চক্ষু মেলে//

অর্থাৎ মানব জাতির উদ্দেশ্যেই বলা যৌবন শান্ত মাথায় অতিক্রম করতে। ভোলা মনে যৌবনকাল অতিক্রম করতে গিয়ে কুকর্মে লিপ্ত হয়ে এবং তাতে ক্রমশ আসক্ত হয়ে পরলে শেষে প্রয়োজনকালে কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

এখন কিছু সাধারণ কথায় আসি। কথা গুলো বলার ক্ষেত্রে শুধু পুরুষের উল্লেখ করার মানে এই নয় যে শুধু মাত্র পুরুষ মানুষের ক্ষেত্রে এই কথা গুলো উদ্দেশ্য করে বলা। কথা গুলো নারী জাতির প্রতি সমান পরিমাণে প্রযোজ্য। এখন কেউ যদি মনে করেন বা আমার সাথে তর্কে যান যে শুধু মাত্র পুরুষজাতিই নিজ জৈবিক চাহিদা পূরণে কু-কর্মে লিপ্ত হচ্ছে তবে অবশ্যই আপনাকে অনেক দূর যীতে হবে বা আপনার চিন্তা ভাবনা একটুখানি সরু। বা আপনি রেসের ঘোড়ার মতন চোখের দুই পাশে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে রাখা। আশে পাশে দেখবেন না বলে চিন্তা করে রেখেছেন।

এই কথা গুলো সমগ্র মানব জাতির প্রত্যেকের প্রতি বলা। সকলের উপরেই সমান পরিমাণে প্রযোজ্য। একবিন্দুও ভুল খুজে পাওয়া তো দূরে থাকুক, প্রতিটা ধর্মের মূলে বিশ্লেষণ করলে দেহতত্ত্বের কথা গুলোর সাথে মিল থাকবেই। এর কোন ব্যাতিক্রম নেই।

যাক সে কথা, দেহতত্ত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে আসলে অনেক দৃষ্টিকটু কথা বলতে হয়। ব্যাপারটা আগে খেয়াল করতাম না। ইদানিং দেখি একটু লজ্জা লজ্জা ভাব লাগে ;)

সমস্যা কই ধরতে পারতেছিনা

মূল পোষ্টঃ গেরে গাঙের ক্ষ্যাপা

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×