somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ তারে বা কই চিনি জানি, বেড়াই কু-পথে ~

০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে কতটুকুই বা চিনতে পারি আমরা নিজেরে? কয়জন মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনি আসলেই আপনাকে চেনেন? কিংবা আপনি আসলেই জানেন আপনি কি চান কেন চান? খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত আছে। তারা মহামানব শ্রেণীর। বাকি বেশিরভাগই আমার মতন অভাগা টাইপ মানুষ। আমরা আসলেই জানিনা আমরা কি চাই? বা কি আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা শুধু একটা জিনিষেরই খোজ করি সম্ভবত, সুখ কিংবা শান্তির। কিন্তু কিসে সেই সুখ বা শান্তি তা খুজে দেখার চেষ্টা কি আসলেই করতে পারি? চেষ্টাতো করতেই থাকি, কিন্তু সঠিক পথে কি সেই চেষ্টা চলছে আসলে? অনেক গুলো প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে কি আসলে? সেই প্রশ্ন গুলো খুব কঠিন কিছু নয় সহজ সরল স্বাভাবিক কিছু প্রশ্ন মনে হচ্ছে সব গুলোকেই। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কি আপনার কাছে এত সহজ সরল আকারে আসলেই রয়েছে? মনে হয় না আছে। থাকলে ওইযে বললাম আমরা সবাই মহামানব শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যেতাম। চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, কিংবা আশার সমাপ্তি ঘটত আমাদের।

মাঝে মাঝেই কিছু গানের কথা বেশ খানিকটা বিরক্ত করে আমাকে। যেই গানটা এখন মাথায় ঘুরছে তার প্রথম লাইন গুলো এমন কিছুটাঃ

//আমার ঘরের চাবি
পরের হাতে
আমি কেমনে খুলিবো সে ধন
দেখবো চোখেতে//


প্রথম লাইন গুলোর কথায় কিছুটা পরে আসবো। আগে মাঝের কথা গুলো নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করি।

//আপন ঘরে বোঝাই সোনা
পরে করে লেনা দেনা
আমি হইলাম জনম কানা
না পাই দেখিতে//




আমার কিংবা আপনার মাঝেই আসলে লুকানো রয়েছে সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ, যার কোন হদিসই আমরা রাখি না বা খুজে পাইনা কিংবা খুজতে চাইও না। কিন্তু আসলেই আমরা যেইসব জিনিষের পিছনে ছুটতে থাকি তা কি আমাদেরকে শান্তিতে রাখছে আসলেই? যদি কোন কিছু আমাদেরকে সুখে শান্তিতেই রাখতো তবে একটার পরে আরেকটার পিছনে নিশ্চয়ই আবার ছুটে চলতাম না আমরা। অন্ধের মতন আমরা সুখের আশায় কিছুনা কিছু একটার পিছনে ছুটতেই থাকি। কিন্তু আসলেই সুখ পাখি কি অন্য কিছুর মাঝে রয়েছে? মনে হয় না। তবে কেউ না কেউ এতদিনে আবিষ্কার করেই ফেলতেন সুখ আসলে নির্দিষ্ট কিংবা নির্দেশিত হয়ে যেত সকলের কাছে সকলের জন্যে। হয়ত কোন কিছু একটার বিনিময়ে বিকিকিনি চলত সেই সুখের। হয়ত নতুন কোন একক আবিষ্কার হয়ে যেত সুখের। কয়েক ছটাক সুখের দাম হয়ত হয়ে পরত নিজের সমগ্র জীবনের কামাই। তারপরেও মানুষ নামের এই আজীব প্রাণী ঠিকই হয়ত সুখ কিনেই ফেলত। কিন্তু আসলে সত্যি কথা বলতে সুখের কোন সঙ্গা বা সন্ধান কখনোই আবিষ্কৃত হয় নি বা হবেও না। কারণ সেই সুখ আমাদের নিজের মাঝেই নিহিত, নিজের দিকে তাকানোর মতন সময় কিংবা ইচ্ছা আমাদের কখনোই থাকেনা। আমরা সাধারণত পরের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী। অন্যের দিকেই তাকাতে বা অন্য কিছুর দিকেই তাকাতে সাচ্ছন্দ বোধ করি আমরা। কিন্তু একটু খেয়াল করেই যদি দেখতে পেতাম যে আসলে যেই সুখের আশায় সম্পদের লোভে আমরা ছুটে চলেছি তার অবস্থান কি আমার কাছেই নেই তো? তবে হয়তো আমাদের এই ছুটে চলার অবসান ঘটতো। হয়ত সুখের সন্ধান মিলতো। ধরা দিত সুখ পাখি।

//রাজী হইলেন দারোয়ানী
দ্বার খুলিয়া দিবেন তিনি রে
আমি তারে বা কই চিনি জানি
বেড়াই কু-পথে রে//


এই অংশটুকু বেশ আকর্ষনীয়। দেহকে যদি একটা প্রাসাদ বা ঘর যাই বলেন না কেন সেই হিসেবে যদি দেখি অবশ্যই সেই ঘর বা প্রাসাদের দারোয়ান রয়েছে অবশ্যই। দারোয়ান যদি আপনাকে সেই ঘরে কিংবা প্রাসাদে প্রবেশের রাস্তাও খুলে দেয় আপনি প্রবেশ করার জন্যে প্রাসাদের দরজাটা তো অন্তত চিনতে হবে আপনাকে। অন্য পথে চেষ্টা করলে তা শুধুই কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজের সেই প্রাসাদ বা ঘরের দরজাটুকু পর্যন্ত আমাদের কাছে অচেনা অজানা। প্রবেশের রাস্তাটুকুও নিজেদের কাছেই অপরিচিত। এই অপরিচিত রাস্তায় যদি আমরা প্রবেশ করতে চাই তবে শুধু ঘুরপাকই খাব। আসলে আমাদের সমগ্র জীবন ব্যাপী আমরা সেই কাজটিই করতে থাকি। বিভিন্ন পথে সেই দরজার কাছে যেতে চেষ্টা করি এবং নিজেদের কাছে মনে হতে থাকে যে আমরা আসলেই ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি আর এই প্রাসাদটা আমাদেরই। কিন্তু আসলে সেই প্রাসাদের মালিক অন্য কেউ যে কিনা আমাদের এই চেষ্টা দেখে চুপি চুপি হাসছেন হয়ত।

//এই মানুষেতেই আছে রে মন
তারে বলে মানুষ রতন
ফকির লালন বলে পেয়েও সে ধন
পারলাম না রাখিতে রে//


মানুষের সবচাইতে অমূল্য রত্ন হল মানুষের মন। এই মনকেই যদি চিনতে পারা সম্ভব হয় তবেই মানুষ মানুষ হয়। নয়ত আসলে মানুষের খোলসের ভিতরে অন্য কিছু বাস করে। "আপন ঘরে বোঝাই সোনা" এই মনই হচ্ছে সেই অমূল্য রত্ন। মনের উপরে যতটুকু নিয়ন্ত্রণ মানুষের আছে বা থাকবে সে ততটুকুই মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার সামর্থ্য রাখে। মন আজব এক জিনিষ। না আছে এর কোন অস্তিত্ব না আছে এর কোন অবস্থান কোথাও। মানুষকে প্রস্থচ্ছেদ কিংবা ব্যাবচ্ছেদ কোন কিছু করে কোন ভাবেই এই মনের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়, তার পরেও আমরা সবাই জানি আমাদের উপরে কতটুকু প্রভাব এই মন নামক জিনিষটার। নিজের প্রভাব সে প্রতিনিয়ত আমাদের উপরে বিস্তার করেই যাচ্ছে, কিন্তু নিজের দেহে বসবাস অথচ আমরা তাকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই নি। এই ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কোন বিষয় নয় এটি। এইবার যদি প্রথম লাইন গুলোর দিকে তাকাই

//আমার ঘরের চাবি
পরের হাতে
আমি কেমনে খুলিবো সে ধন
দেখবো চোখেতে//


এইখানে আমার ঘরের চাবি আসলে অন্যের হাতেই যতক্ষন না আমরা আমাদের মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি। ততক্ষণ এই চাবি থাকে নিজের মনের হাতেই। আপনি নয়, আপনার মন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি নিজের মনের উপরে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় তবেই মানুষ পরিণত হয়, তবেই মানুষ অমূল্য রতনের সন্ধান পায়, তবেই মানুষ সত্যিকারের মানুষ হিসেবে প্রকাশ পায়। নয়ত অন্ধের মতন নিজের সুখ শান্তির খোজে একটার পরে একটা কিছু খুজতেই থাকে। সেই খোজার অবসান ঘটে একমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমেই। মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই। এই কথাটুকুর একমাত্র কারণই সে আসলেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানুষ নিজের মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তখনই মানুষের পরিপূর্ণতা যখন সে পরিপূর্ণরূপে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে। সেই ক্ষমতা কবে অর্জন করতে পারবো জানিনা, হয়তো কখনোই পারবোনা। আবেগতাড়িত মানুষই থেকে যাব হয়ত।

বিঃদ্রঃ লালন সাঁই এর কথার বিশ্লেষণ আমার কাজ নয়। মাঝে মাঝে মাথা আউলাইলে চেষ্টা করি। সেই চেষ্টার ধার ও দিন দিন কমে আসছে, জানিনা আর কতদিন পারবো এই চেষ্টা করতে। :) :) ভূল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন আর সবচাইতে খুশি হব কেউ ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারলে


মূল পোষ্টঃ ~ তারে বা কই চিনি জানি, বেড়াই কু-পথে ~

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×