somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি যৌথ পরিবার ও আমরা তের জন........

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্ম একটি যৌথ পরিবারে এবং সেটি ছিল বিশাল। বিশালতা টা টের পাওয়া যাবে সদস্য সংখ্যা জানলে :D......আমাদের পরিবারে আমরা সবাই মিলে ছিলাম ত্রিশ জন। আর এ কারনে আমাদের এলাকায় খুব পরিচিতি ছিল। সবাই আমাদের বাসা চিনত “তালগাছ ওয়ালা বাসা” (বিশাল ২ টা তালগাছ ও ছিল আমাদের গেটের কাছে) বলে। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমাদের কোন দাওয়াত দেয়ার আগে মানুষ বেশ চিন্তা করে দিত......কারন আমরাই একটি আলাদা বরযাত্রীর সমান ছিলাম। B-)

আমাদের বাসায় সবসময়ই উৎসব লেগে থাকত। বস্তুত প্রতি শুক্রবারই উৎসব থাকত কারন সেইদিন বাসায় সবাই থাকত আর পোলাও রান্না করা হতো। তাই সব চাইতে আনন্দে থাকতাম আমরা তের জন। ওহ! মুল বিষয়টাই বলা হইনি...... আমরা ছিলাম তের ভাই বোন। আর আমরা ছিলাম সবাই পিঠাপিঠি তাই বন্ধুত্ব ও ছিল বেশি। আমরা যে কত মজা করে শৈশব টা পার করেছি............ বাসায় নতুন একটা বই কিনা হলে তো রীতিমত কাড়াকাড়ি লেগে যেত তবে জিতত সবসময় বড়রাই। তবে সিনেমা দেখতাম একসাথে ভিসিয়ারে, লাইট অফ করে (হলের পরিবেশ তৈরির জন্য)। “আজ রবিবার” আমাদের খুব প্রিয় একটা নাটক ছিল, এদিন আমরা আগেই পাশের বাসা থেকে তার টেনে এনে রেডি করে রাখতাম যেন হঠাৎ করে লোডশেডিং হলে নাটক না মিস হয়ে যায়। আর দেখতাম বাংলায় ডাবিং করা ইংলিশ সিরিয়াল গুলো।

আমাদের বাসায় ছিল প্রচুর গাছ আর তাই আমরা ছিলাম গেছো। সময় অসময়ে আমাদের পাওয়া যেত পেয়ারা অথবা আম গাছে। কত যে ঝড়ে আম কুরিয়ে খেয়েছি, দাদুর কাছে বকা খেয়েছি কাঁঠালের মোচা খেয়ে ফেলার জন্য। আর বরই এর সময় তো একেবারে বরই পারার উৎসব লেগে যেত। বরই গাছের নিচেই একটা হাউজ ছিল, সেটাতে টিন বিছিয়ে তার উপর একটা চাদর ধরে দেয়া হতো গাছে ধাক্কা। আমরা এতজন ছিলাম বলে বরই গাছটাও মনে হয় বুঝে অনেক ফল দিতো।

আমাদের কোনোদিন খেলার সাথীর অভাব হয়নি বরং ক্রিকেট খেলার সময় আমরা ছোট দুজন বাদ পরতাম /:)। আমাদের ছিল বিশাল ড্রইংরুম আর সেখানে আমাদের প্রিয় খেলা ছিল রাজদরবার। সবচেয়ে বড় দুজন রাজারানি আর বাকিরা মন্ত্রী,সেনাপতি......আর ছোট হওয়াতে এখানেও আমি নিতান্তই একজন প্রজা /:)।পুতুলের বিয়ে দিলে পাড়ার অন্য মেয়েরা আসত বিয়ে খেতে( এখানে অবশ্য ভাইগুলো অংশগ্রহণ করতনা)। আমার মনে আছে একবার আমি বড় আপুর কাছ থেকে পুতুলের জন্য একটা সুটকেস পেয়ে কি যে খুশি হয়ে ছিলাম।এখন বুঝতে পারি সেটা ছিল জেমস ক্লিপ এর বক্স :D। এতো বড় হয়ে আমি এখনও যা খুব মিস করি সেটা হল বৈশাখী মেলা...... আমরা ১৩ জন বৈশাখের কোন একদিন বিকালে আমাদের ছাদে মেলা বসাতাম, কেউ পুতুলের জামা কাপড় নিয়ে বসত, কেউ দিত খাবার দোকান, তবে আমার নিজের বড় ভাই দিত রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো মুখোশ এর দোকান। মা চাচীরাও আসত আমাদের মেলায়, খাবার কিনে খেতে।এই মেলার প্রচলন টা যে কে করেছিল তা কখনও জানা হয়নি।

আমাদের খুব প্রিয় একটা সময় ছিল লোডশেডিং এর সময় টা, কারন সন্ধ্যায় লোডশেডিং হলেই আমরা সবাই ছাদে চলে যেতাম আন্তাকসারি খেলার জন্য।সেই সময়ের গান গুলো আমার এখনও মনে আছে অথচ আমি এখনকার গানগুলো মনেই রাখতে পারিনা। আরও একটা মজার কথা শেয়ার করতে চাই, আমরা সব বোনগুলো ভোরে একসাথে হেঁটে স্কুলে যেতাম, আমার সবচেয়ে বড় যে বোনটা ক্লাস টেনে পরত, আমাদের সবার পানির ফ্লাক্স ও দুই হাতে করে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বয়ে নিয়ে যেত (ও এটা ওর দায়িত্ব মনে করে করত) :P। এখনকার ক্লাস টেন এর মেয়েদের দেখলে আমার আপুটার কথা মনে করে হাসিও পায় আবার দুঃখ ও হয়। কিযে নির্মল আনন্দের সে দিনগুলো। তবে আমাদের এই আনন্দে প্রথম ভাটা পরল যেদিন আমাদের মাঝে একজনের বিয়ে হয়ে গেল, সেইদিন যে আমরা সবাই কত কেঁদেছিলাম.........:((

আমি জানি এই কথা গুলো আজকের এই একান্নবর্তী পরিবারের যুগে অনেকেরই শুধুই গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু আমার একটি কথাও গল্প না, পুরোটাই আমার শৈশব। আজ আমরা এক এক ভাই বোন এক এক জায়গাতে। আমি জানি আমার মতো আমার সব ভাই বোনই সেই দিনগুলো মিস করি,তাই এখনও সবাই একসাথে হলে ভুলে যাই যে আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×