আমার জন্ম একটি যৌথ পরিবারে এবং সেটি ছিল বিশাল। বিশালতা টা টের পাওয়া যাবে সদস্য সংখ্যা জানলে
আমাদের বাসায় সবসময়ই উৎসব লেগে থাকত। বস্তুত প্রতি শুক্রবারই উৎসব থাকত কারন সেইদিন বাসায় সবাই থাকত আর পোলাও রান্না করা হতো। তাই সব চাইতে আনন্দে থাকতাম আমরা তের জন। ওহ! মুল বিষয়টাই বলা হইনি...... আমরা ছিলাম তের ভাই বোন। আর আমরা ছিলাম সবাই পিঠাপিঠি তাই বন্ধুত্ব ও ছিল বেশি। আমরা যে কত মজা করে শৈশব টা পার করেছি............ বাসায় নতুন একটা বই কিনা হলে তো রীতিমত কাড়াকাড়ি লেগে যেত তবে জিতত সবসময় বড়রাই। তবে সিনেমা দেখতাম একসাথে ভিসিয়ারে, লাইট অফ করে (হলের পরিবেশ তৈরির জন্য)। “আজ রবিবার” আমাদের খুব প্রিয় একটা নাটক ছিল, এদিন আমরা আগেই পাশের বাসা থেকে তার টেনে এনে রেডি করে রাখতাম যেন হঠাৎ করে লোডশেডিং হলে নাটক না মিস হয়ে যায়। আর দেখতাম বাংলায় ডাবিং করা ইংলিশ সিরিয়াল গুলো।
আমাদের বাসায় ছিল প্রচুর গাছ আর তাই আমরা ছিলাম গেছো। সময় অসময়ে আমাদের পাওয়া যেত পেয়ারা অথবা আম গাছে। কত যে ঝড়ে আম কুরিয়ে খেয়েছি, দাদুর কাছে বকা খেয়েছি কাঁঠালের মোচা খেয়ে ফেলার জন্য। আর বরই এর সময় তো একেবারে বরই পারার উৎসব লেগে যেত। বরই গাছের নিচেই একটা হাউজ ছিল, সেটাতে টিন বিছিয়ে তার উপর একটা চাদর ধরে দেয়া হতো গাছে ধাক্কা। আমরা এতজন ছিলাম বলে বরই গাছটাও মনে হয় বুঝে অনেক ফল দিতো।
আমাদের কোনোদিন খেলার সাথীর অভাব হয়নি বরং ক্রিকেট খেলার সময় আমরা ছোট দুজন বাদ পরতাম
আমাদের খুব প্রিয় একটা সময় ছিল লোডশেডিং এর সময় টা, কারন সন্ধ্যায় লোডশেডিং হলেই আমরা সবাই ছাদে চলে যেতাম আন্তাকসারি খেলার জন্য।সেই সময়ের গান গুলো আমার এখনও মনে আছে অথচ আমি এখনকার গানগুলো মনেই রাখতে পারিনা। আরও একটা মজার কথা শেয়ার করতে চাই, আমরা সব বোনগুলো ভোরে একসাথে হেঁটে স্কুলে যেতাম, আমার সবচেয়ে বড় যে বোনটা ক্লাস টেনে পরত, আমাদের সবার পানির ফ্লাক্স ও দুই হাতে করে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বয়ে নিয়ে যেত (ও এটা ওর দায়িত্ব মনে করে করত)
আমি জানি এই কথা গুলো আজকের এই একান্নবর্তী পরিবারের যুগে অনেকেরই শুধুই গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু আমার একটি কথাও গল্প না, পুরোটাই আমার শৈশব। আজ আমরা এক এক ভাই বোন এক এক জায়গাতে। আমি জানি আমার মতো আমার সব ভাই বোনই সেই দিনগুলো মিস করি,তাই এখনও সবাই একসাথে হলে ভুলে যাই যে আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


