somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট ভ্রমণ - বিছনাকান্দি (১ম পর্ব)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯শে অক্টোবর ২০১৪ইং তারিখে সিলেটে একটা ফ্যামিলি-ফ্রেন্ড ভ্রমণের আয়োজন করেছিলাম। আমাদের গাড়ি ছাড়া হল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে। পথে তখনও কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। পথের ধারের চিরচেনা গ্রামবাংলার আবহমান দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। “শ্রীমঙ্গলের পথে” চলতে চলতে আমরা যখন লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে পৌছাই তখন ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। “লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ” শেষে আমরা পৌছাই মাধবপুর লেকে। কিছুটা সময় “মাধবপুর লেক ভ্রমণ” শেষে আমারা যাই মাধবকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে। বিকেলটা কেটে যায় “মাধবকুণ্ড ঝর্ণা ভ্রমণ” করে। সেখান থেকে ভ্রমণ শেষে পৌছই সিলেটে। পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে “হযরত শাহজালাল (রঃ) দরগা”তে হযরত শাহজালালের দরগায় গজারকে ছোট মাছ খায়িয়ে, কবুতরকে ধান খায়িয়ে, সোনা রূপার কৈ মাছ দেখার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমরা চললাম ৬০ কিলোমিটার দূরের বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে।

সিলেট বেশ কয়েকবার আসলেও বিছনাকান্দিতে কখনো যাওয়া হয় নাই। গতবছর প্রথম বিছনাকান্দির খবর পাই, আর এবছর জানতে পারি পান্তমাই এর কথা, রাতার গুলের কথা জানা ছিল বছর তিনেক আগেই। এই তিনটির কোনটিতেই যাওয়া হয়নি আগে। আজকে বিছনাকান্দি আর পান্তমাই বেড়াব। ফেসবুকে পরিচিত দুজনের কাছ থেকে যতটুকু যানতে পেরেছি হাদারপাড় ঘাট থেকে ২০০০ টাকায় একটা ট্রলার ভাড়া করলে বিছনাকান্দি আর পান্তমাই একসাথেই বেরিয়ে আসা যাবে।

সিলেট এয়ারপোর্ট রোড ধরে এগিয়ে চলি আমরা হাদারপাড়ের উদ্দেশ্যে। এয়ারপোর্টের পাশ ঘেঁষে গেছে রাস্তা, চলন্ত গাড়ি থেকেই রানওয়ে চোখে পরে, দেখতে পেলাম একপাশের দেয়াল ভেঙ্গে পরে আছে, চাইলে ভেতরে ডুকে যাওয়া যায়। কিছু দূর যেতেই রাস্তার অবস্থা দেখে আমাদের সবার পিলে চমকে গেলো, কি ভয়াবহ দুরবস্থা রাস্তার। ট্রাকের পর ট্রাক আসতেছে বোঝাই করা পাথর নিয়ে, কাদাজলে সমুদ্রের ঢেউয়ে চড়ে বসা ছোট নৌকার যাত্রীর অনুভূতি হচ্ছে আমাদের। তবে ভাগ্য ভালো কিছুদূর পরেই রাস্তা মোটামুটি ভালো। তবে আরো কিছুটা পথ যাওয়ার পরে আমরা বুঝতে পারলাম পথের ধারে যেখানেই পাথর ভাঙ্গার কারখানা আছে সেখানকার রাস্তার অবস্থা এমনই করুন, এভাবেই যেতে হবে।
যদিও জানি অল্পই কিন্তু চলা যেন শেষই হচ্ছে না। অচেনা পথ বলে বারবার থেমে জেনে নিচ্ছি ঠিক পথে যাচ্ছি কিনা, তারপরেও পথ ভুল করলাম। শালুটিকর ব্রিজ থেকে নেমেই ডানদিকে মোড় নিতে হবে হাদারপাড় যেতে, আমরা সোজা বড় রাস্তা ধরেই চলে গেছি। অনেকটা পথ যাওয়া পর আবার লোকজনকে জিজ্ঞাস করে করে ফিরে এসেছি। ব্রিজের পর থেকে হাদারপড় পযর্ন্ত রাস্তার অবস্থা খারাপ ভালোয় মিলানো। সরু রাস্তা চাইলেও গতি তোলা যায় না। উল্টো দিক থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক আসছে মুহুমুহু। ওরা পুরটা পথজুরে থাকে, রাস্তা থেকে সরে যেতে হয় আমাদের। যাইহোক একসময় হাদারপাড় বাজারে এসে থামলাম সময় তখন ২টা ৩০ মিনিট।


(হাঁটা রাস্তার অবস্থা এমনই)



(দূরের টাওয়ার দেখা যাচ্ছে, সেকান থেকে হেঁটে আসতে হয় এই পর্যন্ত)


এইখানে গাড়ী রেখে কিছুটা পথ হেঁটে ঘাট পর্যন্ত যেতে হবে। এখানে এসেই প্রথম খারাপ সংবাদটা শুনলাম, গাঙ্গে পানি নাই, বিছনাকান্দি যাওয়া গেলেও পান্তমাই যাওয়া অসম্ভব। সবার আগে আগে আমি একা গেলাম ঘাটে নৌকো ভাড়া করতে (আমরা সব সময় এই কাজটা করি, সবাই এক সাথে কখনোই যাই না)।



একজন চাইলো ৮০০ টাকা ৬০০তে রাজি হয়ে যাবে, কিন্তু ওর ট্রলার দেখে আমার পছন্দ হল না, চিকন। আমি যেটা পছন্দ করলাম সেটাতে ১৫জন যেতে পারবে, চওড়া, পাটাতনে চাদর বিছিয়ে আড়ামসে রিল্যাক্স ভাবে যাওয়া যাবে। ১২০০ টাকা চাইলো আপ-ডাউন ভাড়া, শেষ পযর্ন্ত ৮০০টাকাতে ঠিক করে ফেললাম।











এবার সবাই এসে একে একে ট্রলারে চরলে পরে যাত্রা শুরু হল বিছনাকান্দির উদ্দেশ্যে। অবশ্য এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে বিছনাকান্দির পাহারের সেই বাকটা, নদীতে শ্রোত খুব বেশী না। নদীতে জীবন যাত্রার সমারহ, তীরে বসতী। নদীর সাথে তাদের জীবিকার অনেকটাই জড়িত। কেউ গোসল করছে নদীর জলে, কেউ বাচ্চাকে গোসল করাচ্ছে, কেউ এসেছে গৃহস্তালি কাজের জন্য জল নিতে কলশি নিয়ে। বড়শি নিয়ে বসে আছে অনেকে, অনেকে আবার জাল ফেলছে জলে। বাচ্চারা খেলছে নদীর তীরের লালচে বালিতে বসে।














(হাঁটু জলের নদী পার হয় এভাবেই এই কিশোর)



















আমরা যখন যাচ্ছি বিছনাকান্দি ঠিক সেই সময় আনেকে দেখি ফিরে আসছে সেখান থেকে। চারপাশে রূপ বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলি। একেবারে পথের শেষে আসার সময় জল অনেকটাই কম, নীল কাচের মত স্বচ্ছ জলে নদীর তলদেশ দেখা যাচ্ছে।







একবার আটকে গেল নৌকো, কয়েকজন জলে নেমে টেনে-ঠেলে ছাড়াতে হল, তারপর পৌঁছলাম বিছনাকান্দির তীরে।






















এসেগেছি বিছনাকান্দি

চলবে......।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×