লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০০২
প্রকাশক : অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১২
সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট
কাহিনী সংক্ষেপ :
মুহিবের বাড়িতে আছে রিটায়ার্ড চিরকুমার বড় চাচা, বাড়িটা তারই। সেখানে থাকে মুহিবের বড় ভাই, বড় ভাবী, মেঝো ভাই, মোঝো ভাবী ও তাদের যমজ মেয়ে, কাজের মেয়ে ও মুহিবের মা। মুহিবের বাবা আলাদা থাকেন।
মুহিব বেকার যুবক, চাকরির চেষ্টা করে বেরায়। একদিন হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিত ভাবে ভালো একটা কোম্পানিতে তার চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে গেল। একটি বড় কোম্পানি, ইন্টার্ভিউ তেমন ভাল হয়নি তবুও সেখান থেকে ২য় বার ডাক আসে এবং মুহিবকে পরের মাসের ১ তারিখে জয়েনিং লেটার ধরিয়ে দেয়। জয়েনিং লেটার পাওয়ার পরেও মুহিব কাউকে কিছু জানায় না, কারণ তার মনে হতে থাকে শেষ পর্যন্ত চাকরিটি তার হবে না।
মুহিবের একগাদা বেকার বন্ধু আছে। তারা সকলেই মুহিবের চেয়ে বয়েসে বড়, তবুও বন্ধু। তেমন একজন হচ্ছে শফিক ভাই। শফিকের মামা ইন্ডিয়াতে বেরাতে গেছেন, তার ফ্লাটের চাবি দিয়েছেন শফিককে। সব ঘর তালা মারা, শুধু বসার ঘরের সোফাতে শফিক রাতে থাকবে, কোন বন্ধু বান্ধব আনতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেলো প্রথম রাতেই শফিকের সব বেকার বন্ধু ফ্লাটে হাজির হয়ে গেছে।
ওরা নিজ হাতে বানানো সরাব পান করে মাতাল হয়ে পরে। রাতের তিনটার সময় মাতাল অবস্থায় বাজীতে হেরে ওদের একজন উলঙ্গ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে একবার উঠা নামা করে। এই অবস্থায় নিচতলার একজন দেখে ফেলে। দুদিন পরে যখন শফিকের মামা তাকে ফোন করে তখন তিনি সব কথা শফিকের মামাকে জানিয়ে দেয়। মামা শফিককে ফোন করে তখনই ফ্লাট থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। সেদিন রাতে আবার মাতাল হয়ে ওরা ঠিক করে মামাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য মামার বেডরুমে গরুর রক্ত ছিটিয়ে দিবে, বটিতে রক্ত মেখে রাখবে। মামা ফিরে এসে এসব দেখে বিরাট ধাক্কা খাবে। ওরা প্লান মত কাজ করে। যে লোক মামাকে সব জানিয়েছে তাকেও শাস্তি দিবে ঠিক হয়।
এদিকে মুহিবের বাসায় বড় ভাইয়ের ড্রয়ার থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়। মুহিব বুঝতে পারে তার মা টাকাটা সরিয়েছে। আগেও তিনি এমন করেছেন। মুহিব তার মাকে টাকাটা মুহিবের ড্রয়ারে রেখে দিতে বলে, কারণ বড় ভাবী সবার ঘর চেক করবেন বলেছেন, মার কাছে টাকা পাওয়া গেলে লজ্জার ব্যাপার হবে। মা কাউকে কিছু না জানিয়ে টাকা রেখে দেয় মুহিবের ড্রয়ারে। টাকা চুরির অপরাধে বড় চাচা মুহিবকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মুহিব তার বাক্স পেটরা নিয়ে গিয়ে উঠে খাইরুলের তিন তালার ফ্লাটে।
খাইরুল ছোট চায়ের ছাপরা দোকান থেকে আজকে আল মদিনা রেস্টুরেন্টের মালিক, পাশেই আছে ফোন, ফটোকপি ও ষ্টেশনারীর দোকান। এখন বেইলি রোডে শাড়ির দোকান দিবে। মুহিবকে সেখানে পুঁজি ছাড়াই পাটনার করতে চায়, মুহিব রাজি হয় না। খাইরুল কোন কারণ ছাড়াই মুহিবকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।
মুহিবের বান্ধবী নোরা, গান গায়, বেশ কিছু সিডি তার বেরিয়েছে। একটু খেয়ালি টাইপের ধনীর মেয়ে। মুহিব নোরাকে ভালোবাসে, কিন্তু নোরা মুহিবকে ভালোবাসে কিনা বলা যায় না। মাঝে মাঝেই মুহিব নোরার সাথে দেখা করে। মুহিব বুঝতে পারে মুহিব সামনে থাকলেই বা ফোন করলেই নোরার কাছে মুহিবের গুরুত্ব আছে, অন্য সময় নোরার জন্য মুহিব গুরুত্বহীন। তবুও নোরার সঙ্গো তার ভালো লাগে।
এদিকে বেকার হারুন হঠাৎ করেই প্রেসক্লাবের সামনে বসে পরে। বেকার সমস্যার সমাধান না হলে সে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মাহুতি দিবে নিজের জন্ম দিনে। কয়েক দিন বাকি আছে জন্ম দিনের। পত্রিকায় খবর ছাপা হয়। শফিকের ব্যবস্থাপনায় বাকিদের চেষ্টায় ওরা বেশ ভাল ভাবেই প্রচারণা করে। ওদের হিসাব ছিল প্রচারণা হলে নিশ্চয় সরকার বা বিরোধীদলের কেউ অথবা নিদেনপক্ষে সেলিব্রেটি কেউ এসে হারুনের সাথে কথা বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু দেখতে দেখতে সময় এগিয়ে আসে। প্রচুর লোক আসে, কিন্তু কোন প্রতিশ্রুতি আসে না। শফিকরা বিপদে পরতে থাকে। খাইরুলও জুটে যায় শফিকদের সাথে।
এদিকে এক তারিখে মুহিব যায় তার চাকুরীতে জয়েন করতে। এখনও তাকে কোন কাজ দেয়া হয়নি, মনে হয় ওকে অন্য কোথাও পোস্টিং দেয়া হবে। অফিস থেকে মুহিব ফোন করে নোরাকে। নোরা হারুনকে দেখতে গিয়ে ছিল। নোরা হারুনকে সিলেটের একটি চা বাগানে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে। কিন্তু হারুনতো শুধু নিজের চাকরি চাইছে না চাইছে সকল বেকারদের জন্য কিছু হোক। খাইরুল আগেই হারুনকে তার শাড়ির দোকানের চাকরির কথা বলেছে, কাজ হয় নি।
নোরার সাথে কথা বলে মুহিব বুঝতে পারে যে কোম্পানিতে তার চাকরি হয়েছে সেটার বেশির ভাগ শেয়ার নোরার বাবার, আর চারজন ডিরেক্টরের একজন হচ্ছে নোরা। মুহিবের চাকরি হয়েছে নোরার কারণে। সেদিন দুপুরেই মুহিব চাকরিতে ইস্তেফা দিয়ে বেরিয়ে পরে।
সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, শফিকরা হারুনকে সাথে নিয়ে সবাই আশ্রয় নেয় খাইরুলের ফ্লাটে। মুহিব যখন সেখানে পৌছায় তখন সকলেই মাতাল হয়ে আছে। রাতের তিনটা পর্যন্ত সকলে সেখানে পান করে। মুহিব কখনোই মদ বা সিগারে টানে না। সেদিনও সে বিরতই থাকে, কিন্তু বাকি সকলে বেহেড মাতাল হয়ে পরে। রাতের তিনটার দিকে তারা হারুনের আনা কেরোসিন ফ্লাটে ছড়িয়ে আগুন লাগিয়ে নিচে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে তিন তালার ফ্লাটের জানলা দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে।
মুহিব হঠাৎ করেই লক্ষ্য করে হারুন তাদের সাথে নামেনি। বৃষ্টিতে ভিজে হারুনের জ্বর জ্বর লাগছিলো বলে সে ফ্লাটের অন্য কামরায় শুয়ে ছিল। ওরা সবাই দৌড়ে যায় হারুনকে বের করে আনতে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। হারুন আগুনে পুড়ে মারা যায় আর তাকে বাচাতে গিয়ে এখন মৃত্যুর মুখে হাসপাতালে শুয়ে আছে মুহিব।
----- সমাপ্ত -----
=======================================================================
আমার লেখা হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ
আমার লেখা অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ:
ভয়ংকর সুন্দর (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মিশর রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
খালি জাহাজের রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভূপাল রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সবুজ দ্বীপের রাজা (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তিতাস একটি নদীর নাম - অদ্বৈত মল্লবর্মণ
ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড - টমাজ হার্ডি
কালো বিড়াল - খসরু চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৯