রিপন, খোকন, বড় বাবু, ছোট বাবু, শিপন, স্বপন জামাই, স্বপন বিয়াই, বিয়ায়ের বন্ধু, মঞ্জু, হীরা, ইস্রাফীল এবং আমিসহ মোট ১২ জনের টিম যাবো বান্দরবানের গহীনে থানচি রেমাক্রি পার হয়ে নাফাখুমের ঝর্না দেখতে।
২০২০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ২৫ তারিখ সকালে বান্দরবান পৌছে সেখান থেকে চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ করে চলে যাবো থানচি। পথে দেখে নেবো শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহার আর নিলাগিরি। ২৫ তারিখ রাত থানচিকুটিরে থেকে পরদিন ২৬ তারিখ ভোরে নৌকা নিয়ে চলে যাবো সাঙ্গু নদ ধরে বড়পাথর - রাজা পাথর হয়ে রেমাক্রিতে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে নাফাখুম দেখে আবার ফিরে আসবো রেমাক্রিতে। ২৭ তারিখ রাত থাকবো থানচি কুটিরেই। ২৮ তারিখ দুপুরে ফিরে আসবো বান্দরবান। বান্দারবানের দর্শনিয় স্থানগুলি দেখবো ২৮ আর ২৯ তারিখ সারা দিনে। ২৯ তারিখ রাতে ঢাকার পথে রওনা হয়ে যাবো। এই ছিলো আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা।
কিন্তু সবকিছু সব সময় পরিকল্পনা মাফিক হয় না। আমার বিবি সাহেবার বড় ভাই তাদের চাচাতো ভাইয়ের একটি ঝগড়া ফিরাতে গিয়ে শুধু শুধু পুলিশি ঝামেলায় পরে যায়। ঝগড়া ফিরাতে গিয়ে বড় শালা সাহেব ৬ নাম্বার আসামী আর ঝগড়ার ধারে কাছেও না থেকে ছোট শালা সাহেব ৪ নাম্বার আসামী। এদিকে আমাদের বাসের টিকেট কাটা হয়ে গেছে, সময় এগিয়ে আসছে যাত্রার দিনের, অথচ শালা সাহেবদের এখনো জামিন করাতে পারি নাই। ওদের জামিন না করিয়ে বেরাতে গলে সরাজীবনের জন্য একটা খোঁচা শুনার ব্যবস্থা করা হয়ে যাবে। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে বাকি টিমমেম্বারদের না জানিয়ে হীরা, ইস্রাফীল ও আমার টিকেটের ডেট পিছিয়ে নিলাম। বাকি সদস্যদের বিষয়টি জানালে তারাও আমার সাথেই যাবার জন্য জেদ ধরেবে জানি। আমাকে ছাড়া যেতে চাইবে না। অথচ অনেক হিসাব নিকাশ করে ডেট ঠিক করা হযেছে। কয়েকজন ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে, তাই আগের ডেটেই যাত্রা শুরু করতে হবে। এরমধ্যে ঝামেলা মিটাতে পারলে আমি সাথে যাবো। মিটাতে না পারলে পরে গিয়ে ওদের সাথে যোগ দিবো।
বিধিবাম, সময় মতো ঝামেলা মিটানো গেলো না। আসামীদের (দুই শেলক সহ) কোটে হাজির করানো হলো জামিনের জন্য। কিন্তু জজ সাহেব উকিলকে ডেকে জানিয়ে দিলেন আসামী জামিন হবে না, আসমীকে নিয়ে চলে যান (উকিলের পাওয়ারের কাছে জজ বন্দী)। এবার আবার দেনদরবার শেষে ১০০% নিশ্চয়তা পাওয়া গেলো ২৬ তারিখ সকালে জামিন হয়ে যাবে।
করার কিছু নেই। আমাদের ৩ জনের টিকেট ২৬ তারিখ রাতে করিয়ে নিলাম আবার। আর ২৪ তারিখ সন্ধ্যার পরে যখন সকলে এসে উপস্থিত হলো তখন জানালাম আমি পরে আসছি। অনেক কষ্ট সকলকে বুঝিয়ে রাজি করালাম। ২৭ তারিখে যদি আমি না যাই তাহলে সকলের খরচ আমি দিবো, এই বুঝ দিয়ে ওদের রাতের বাসে উঠিয়ে দিলাম।
যথারিতি ২৬ তারিখে প্রায় সারা দিন চলে গেলো কোটে। শেলক সাহেবদের জামিন করিয়ে ফিরলাম বাসায়। বাকিদের ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি রওনা হচ্ছি রাতের গাড়িতে, পরদিন সকালে দেখা হচ্ছে ওদের সাথে। থানচিতে তখন আনন্দের বাধ ভেঙ্গেছে। আমাদের আগমন উপলক্ষে বিশাল পার্টির আয়োজন সেখানে।
রাতে আমরা ৩ জন রওনা হয়ে গেলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সকালে সময় মতো বান্দরবানে পৌছতে পারলাম না। সাতকানিয়ার পরে থেকে রাস্তায় কাজ চলছিলো, বৃষ্টি হয়ে রাস্তায় কাদা হয়ে গেছে। সেখান দিয়ে আর কোনো বাস চলাচল করতে পারছে না। এবার বাধ্যহয়ে পথে নেমে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। অনেকটা পথ হেঁটে এসে ক্লান্ত হয়ে দেখা পেলাম ভালো রাস্তারে। আবার চড়েবসলাম লোকান গাড়িতে কয়েকগুণ বেশী ভাড়াতে। অনেকটা সময় নষ্ট হলো, তবুও শেষ পর্যন্ত বান্দরবান এসে পৌছলাম সুস্থ ভাবেই। বান্দরবান নেমে সেখান থেকে অটোতে থানচি বাস স্টপে পৌছে থানচির টিকেট কেটে নিয়ে নাস্তা করে নিলাম পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে। যথা সময়ে বাস যাত্রা শুরু করলো। এই পথে বেশ কয়েরকার গেলেও লোকাল বাসে এই প্রথম চললাম। পথে চিম্বুক পাহাড় পার হয়ে একটা যাত্রা বিরতী হয়। আমরা পৌছাই সেখানে ১০টা ১৫ মিনিটে।
চিম্বুক সূর্যদ্বয় ভিউপয়েন্ট
আমাদের অর্ভথনা জানাতে পাহার সেজেছিলো আগুন রাঙ্গা পলাশের আভায়। পাজাড়ি পলাশের সৌন্দর্যই আলাদা। প্রায় পাতাহীন পলাশ গাছে অজস্র ফুল ফুটে থাকে কোনো পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। গাছের নিচেও ঝরা পলাশের চাদর বিছানো।
আরো কতো নাম না জানা ফুল ছিলো সাথে। পাহাড়ি ফুল আর গাছেদের সম্পর্কে খুব কম জানি আমরা। এবারের সফরে বেশ কয়েকটি দূর্লভ গাছের সমাহার দেখেছি পাহারে। আহারে যদি আনতে পারতাম নিজের সঙ্গে তাদের!!
কাঁটা মেহেদি
পাহাড়ি কোনো মর্নিং গ্লোরি হবে হয়তো।
পাহাড়ি কোনো বিষকাটালি মনে হলো।
সেখানে বেশ কিছু ছবি তুলি। সেখান থেকেউ চোখে পড়ে দূরপাহাড়ের এক ঝলক। পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজ গাছের চাদর, দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়, প্রাণও।
এবার চা পান শেষে আবার শুরু হয় যাত্রা। নীলগিরির পরে থেকে পথের বাঁক আর উতরাই অন্যরকম রূপ নেয়। ঘুম আর ক্লান্তির কারণে ছবি তোলা হয়নি সেই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের। পরে আবার কখনো ঐপথে যাবো ছবি তুলতে ইনশাআল্লাহ।
পারিজাত গার্ডেন ক্যাফে
চলতে চলতে একসময় পৌছেযাই "পারিজাত গার্ডেন ক্যাফে"তে (তখনও এর নির্মাণকাজ চলছিলো)। ঘড়িতে সময় তখন ১২ টা ১৫ মিনিট এখানে বাস থেকে নেমে থানচিগামী পর্যটকদের বিজিবি চেকপোস্টে নিজেদের নাম এন্টি করতে হবে। সাথে দিতে হবে ন্যাশনাল আইডির ফটোকপি। বাসটি একটি স্থানিয় বাআর থেকে ঘুরে আসতে আসতে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। এখানকার কাঁচা আমের জুস অসাধারন ছিলো।
দুপুর দেড়টার দিকে পৌছে যাই থানচি বাজার ব্রিজে। আমাদের স্বাগত জানাতে টিমের সকল সদস্য উপস্থিত সেখানে। থানচি কুটিরে পৌছে আমি চলে যেতে চাইলাম রেমাক্রিতে। কারণ আমি ফোনে বারবার বলে দেয়ার পরেও ওরা অন্য কোথাও না গিয়ে এই দুই দিন থানচি কুটিরেই বসে আছে আমার আসার জন্য।
থানচি কুটির
থানচি কুটিরে আমাদের ঘরের সামনে খোকন ভাই ও আমি
আমি তাই এক মুহুর্ত সময়ও আর নষ্ট করতে চাইছিলাম না। কিন্তু ২-৩ জন যেতে রাজি হলো না। কারণ আজ রাতে ওরা এখানে পার্টির আয়োজন করে রেখেছে। থানচি কুটিরের মালিক আমাদের একজনের পরিচিতো। তিনি কথা দিয়েছেন দুটি বন মোরগ জোগার করবেন। বাজারে সকালে পাহাড়ি গয়াল জবেহ হয়েছে। ওরা যখন খবর পেয়েছে তখন সব গোস্ত বিক্রি হয়ে গেছে। একজন পুলিশ অফিসারের কেনা ৮ কেজি গোস্ত থেকে নানান ভাবে বলেকয়ে ২ কেজি গোস্ত নেয়া হয়েছে। রাতে বন মোরগের ঝাল ঝোল, গয়ালের সাদা ঝাল আর চিকেন বার্বীকিও হবে। এর অনুসঙ্গ ঢাকা থেকেই টেনে আনা হয়েছিলো, রাতকে আরো মহোনীয় করার জন্য।
থানচি কুটিরে আমাদের ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে স্বপন জামাই ও আমি
যাইহোক, রাতের এখনো অনেক বাকি। পাশেই আছে ডিম পথর নামে একটা যায়গা। বিকেলটা সেখান থেকেই ঘুরে আসবো আমারা নতুনেরা। পুরনোদের মাঝেও দুইজন যাবে আমাদের সাথে পথ-প্রদর্শক হিসেবে।
দেখা হবে আগামী পর্বে ডিম পাথরের পথে।
=================================================================
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস
সিলেট ভ্রমণ : হযরত শাহজালাল ও শাহপরান দরগাহ, চাষনী পীরের মাজার, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং, হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড
শ্রীমঙ্গল : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক,
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ : আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ঝুলন্ত সেতু, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ : সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার
বান্দরবান ভ্রমণ : নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির
কক্সবাজার ভ্রমণ : রঙ্গীন মাছের দুনিয়া, আগ্গ মেধা ক্যাং, বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, ইনানী সৈকত, টেকনাফ সৈকত, মাথিনের কুপ, টেকনাফ জেটি, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ
নারায়ণগঞ্জ : ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির, টি হোসেন বাড়ি, কদম রসুল দরগাহ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, সিরাজ শাহির আস্তানা, কুতুববাগ দরবার শরিফ, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, পালপাড়া মঠ, বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি, মহজমপুর শাহী মসজিদ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩২