অশোক অতি চমৎকার একটি ফুল। কারণ অতি অল্পসংখ্যক উদ্ভিদ আছে যারা তাদের কাণ্ড ফুড়ে ডালপালা জুড়ে ফুল ফোটায়। অশোক তাদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া অশোকের প্রস্ফুটন কাল অতি দীর্ঘ বলে ফুল ফুটার সময়ে গাছগুলি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের দ্বিতীয় গেটটা পার হলেই শুরু হয় পথের দুই ধারে অশোকের সারি। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছগুলি। এমন দৃশ্য দেখেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ বলে ছিলেন –
"রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।"
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
অশোক আমার পছন্দের ফুলগুলির মধ্যে একটি। আমার ধারনা রবীন্দ্রনাথও এই ফুলটিকে বেশ পছন্দ করতেন। কারণ আমি দেখেছি রবীন্দ্রনাথের অনেক অনেক কবিতা ও গানে ঘুরে ফিরে এসেছে এই অশোকের কথা। সেইসব থেকে ১০ কবিতাংশ আজ তুলে দিচ্ছি এই লেখায় আপনাদের জন্য।
১১।
শত বসন্তের স্মৃতি জাগিছে ধরায়,
শত লক্ষ কুসুমের পরশস্বপন।
শত বসন্তের যেন ফুটন্ত অশোক
ঝরিয়া মিলিয়া গেছে দুটি রাঙা পায়।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১২।
ছড়াত পথে আঁচল হতে অশোক চাঁপা করবী
মিলিয়া যত তরুণ তরুণী,
বকুলবনে পবন হত সুরার মতো সুরভি--
পরান হত অরুণবরনী।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৩।
সেই গান শুনি
কুসুমিত তরুতলে তরুণতরুণী
তুলিল অশোক,
মোর হাতে দিয়ে তারা কহিল, "এ আমাদেরই লোক।'
আর কিছু নয়,
সে মোর প্রথম পরিচয়।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৪।
দখিন হাওয়া হেঁকে বেড়ায় "জাগো জাগো',
দোয়েল কোয়েল গানের বিরাম জানো না গো,
রক্তরঙের জাগল প্রলাপ অশোক গাছে॥
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৫।
ফাগুন, তোমার হাওয়ায় হাওয়ায়
করেছি-যে দান
আমার আপনহারা প্রাণ,
আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ।
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
তোমার ঝাউয়ের দোলে
মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৬।
আনে হাসি, আনে গান, আনে রে নূতন প্রাণ,
সঙ্গে করে আনে রবিকর--
অশোক শিশুর প্রায় এত হাসে এত গায়
কাঁদিতে দেয় না অবসর।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৭।
পূর্ব যুগে অশোক গাছে নারীর চরণ লেগে
ফুল উঠিত জেগে—
কলিযুগে লেখনীরে সম্পাদকের তাড়া
নিত্যই দেয় নাড়া,
ধাক্কা খেয়ে যে জিনিসটা ফোটে খাতার পাতে
তুলনা কি হয় কভু তার অশোকফুলের সাথে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৮।
আজকে আমার বেড়া-দেওয়া বাগানে
বাতাসটি বয় মনের-কথা-জাগানে।
আজকে কেবল বউ-কথা-কও ডাকে
কৃষ্ণচূড়ার পুষ্প-পাগল শাখে--
আমি আছি তরুর তলায় পা মেলি,
সামনে অশোক টগর চাঁপা চামেলি।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১৯।
বসন্ত সে যায় তো হেসে, যাবার কালে
শেষ কুসুমের পরশ রাখে বনের ভালে।
তেমনি তুমি যাবে জানি,
ঝলক দেবে হাসিখানি,
অলক হতে খসবে অশোক নাচের তালে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
২০।
আমি বলি,কাকা, মিছে করো চেঁচামেচি,
আকাশেতে উঠে আমি মেঘ হয়ে গেচি।
ফিরিব বাতাস বেয়ে রামধনু খুঁজি,
আলোর অশোক-ফুল চুলে দেবো গুঁজি।
সাত-সাগরের পারে পারিজাত-বনে
জল দিতে চ’লে যাবো আপনার মনে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত মিলিয়ে অশোক ফুলের অনেকগুলি নাম আছে, যেমন -
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : অপশোক, বিশোক, কঙ্গেলি, কর্ণপূরক, কেলিক, চিত্র, বিচিত্র, দোষহারী, নট, পল্লবদ্রুপ, প্রপল্লব, পিণ্ডিপুষ্প, বঞ্জুলদ্রুম, মধুপষ্প, রক্তপল্লবক, রাগীতরু, শোকনাশ, সুভগ, স্মরাধিবাস, হেমপুষ্প, হেমাপুষ্প, হিমাপুষ্পা, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প, পিণ্ডিপুষ্পা, সিটা-অশোক ইত্যাদি।
Common Name : Ashoka, Sorrowless, Yellow Ashok, Yellow Saraca ইত্যাদি।
Scientific Name : Saraca indica
অশোক বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ - ১
আগামীতে আরো ১০টি অশোক বিষয়ক কবিতাংশ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৭