অশোক অতি চমৎকার একটি ফুল। কারণ অতি অল্পসংখ্যক উদ্ভিদ আছে যারা তাদের কাণ্ড ফুড়ে ডালপালা জুড়ে ফুল ফোটায়। অশোক তাদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া অশোকের প্রস্ফুটন কাল অতি দীর্ঘ বলে ফুল ফুটার সময়ে গাছগুলি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের দ্বিতীয় গেটটা পার হলেই শুরু হয় পথের দুই ধারে অশোকের সারি। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছগুলি। এমন দৃশ্য দেখেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ বলে ছিলেন –
"রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।"
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
অশোক আমার পছন্দের ফুলগুলির মধ্যে একটি। আমার ধারনা রবীন্দ্রনাথও এই ফুলটিকে বেশ পছন্দ করতেন। কারণ আমি দেখেছি রবীন্দ্রনাথের অনেক অনেক কবিতা ও গানে ঘুরে ফিরে এসেছে এই অশোকের কথা। সেইসব থেকে ১০ কবিতাংশ আজ তুলে দিচ্ছি এই লেখায় আপনাদের জন্য।
০১।
কৈকেয়ী হৃদয়ে চাপে দুষ্ট অভিলাষ!
চতুর্দশ বর্ষ রামে দিলে বনবাস,
কাড়িয়া লইলে দশরথের জীবন,
কাঁদালে সীতায় হায় অশোক-কাননে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০২।
যাবে যদি, এক বার দাঁড়াও হেথায়।
এক বার ফিরে চাও নগরের পানে।
ওই দেখো দূরে ওই গৃহটি তোমার,
চারি দিকে রহিয়াছে লতিকার বেড়া,
ওই সে অশোক গাছ বামে উঠিয়াছে,
ওই তরুতলে বসে আমরা দু-জনে
কত রাত্রি জোছনাতে কথা কহিয়াছি।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৩।
জানিস ত, সখি, পথের ধারেতে
একটি অশোক আছে,
বনলতা কত ফুলে ফুলে ভরা
উঠিয়াছে সেই গাছে--
সেই খানে, সখি, সেই গাছতলে
বসিয়া থাকিতে হবে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৪।
ওই যে তোমার কাছে সকলে দাঁড়িয়ে আছে
ওরা মোর আপনার লোক,
ওরাও আমারি মতো তোর স্নেহে আছে রত
জুঁই বেলা বকুল অশোক।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৫।
মোরা নবনবীন ফাগুন-রাতে
নীল নদীর তীরে
কোথা যাব চলি অশোকবনে
শিখিপুচ্ছ শিরে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৬।
মধুপ গুঞ্জরিল,
মধুর বেদনায় আলোক-পিয়াসি
অশোক মুঞ্জরিল।
হৃদয়শতদল
করিছে টলমল
অরুণ প্রভাতে করুণ তপনে।
না না না, রবে না গোপনে॥
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৭।
বসন্ত সে যায় তো হেসে, যাবার কালে
শেষ কুসুমের পরশ রাখে বনের ভালে॥
তেমনি তুমি যাবে জানি, সঙ্গে যাবে হাসিখানি--
অলক হতে পড়বে অশোক বিদায়-থালে
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৮।
দূর সাগরের পারের পবন
আসবে যখন কাছের কূলে
রঙিন আগুন জ্বালবে ফাগুন,
মাতবে অশোক সোনার ফুলে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
০৯।
বিদায়-বেলার রবির পানে
বনশ্রী তার অর্ঘ্য আনে
অশোক ফুলের করুণ অঞ্জলি
আভাস তারই রঙিন মেঘে
শেষ নিমেষে রইবে লেগে
রবি যখন অস্তে যাবে চলি।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
১০।
যেতে যেতে পথের ধারে
দেখল বাতায়নে,
তরুণী সে, ললাটে তার
কুঙ্কুমেরি ফোঁটা,
অলকেতে সদ্য অশোক ফোটা।
সামনে পদ্মপাতা,
মাঝখানে তার চাঁপার মালা গাঁথা,
সন্ধেবেলার বাতাস গন্ধে ভরে।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত মিলিয়ে অশোক ফুলের অনেকগুলি নাম আছে, যেমন -
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : অপশোক, বিশোক, কঙ্গেলি, কর্ণপূরক, কেলিক, চিত্র, বিচিত্র, দোষহারী, নট, পল্লবদ্রুপ, প্রপল্লব, পিণ্ডিপুষ্প, বঞ্জুলদ্রুম, মধুপষ্প, রক্তপল্লবক, রাগীতরু, শোকনাশ, সুভগ, স্মরাধিবাস, হেমপুষ্প, হেমাপুষ্প, হিমাপুষ্পা, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প, পিণ্ডিপুষ্পা, সিটা-অশোক ইত্যাদি।
Common Name : Ashoka, Sorrowless, Yellow Ashok, Yellow Saraca ইত্যাদি।
Scientific Name : Saraca indica
আগামীতে আরো ১০টি অশোক বিষয়ক কবিতাংশ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৭