somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশ্রম বিলাস

১৮ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনারা মোটামুটি অনেকেই জানেন কালীগঞ্জের নাগরির কাছাকাছি আমারা একটুকরো জমি কিনে সেখানে গ্রামীণ প্ররিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আশ্রম নির্মাণ করেছি। আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলের জন্যই আশ্রম উন্মুক্ত।



আশ্রমের আশেপাশে বিদ্যুৎ নেই বলে আমরা সোলারের ব্যবস্থা করেছি। সেই সোলারের সাহায্যে একটি ডিসি সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে ৮০ ফুট গভীর থেকে বিশুদ্ধ পানিয় জলের ব্যবস্থা করেছি। একটি হাই কমডযুক্ত ওয়াসরুমের ব্যবস্থা করেছি। বাঁশের মাচা আর পুরনো টিন দিয়ে বিচিত্র একটি ঘর বানিয়েছি। যেটির চারপাশের সব ঝাপ প্রজাপ্রতির মতো খুলে দেয়া যায়। অবাদে বাতাস যাতায়াত করে। আশ্রমের পাশেই ৫টি তালগাছ আছে, সেখানে একটি বড় দোলনা বাঁধা আছে। বাতাস যখন থাকে তখন সারাটাক্ষণ তাল গাছের পাতায় বিচিত্র শব্দ হতে থাকে।





মহিউদ্দিন




হারুন

এবছর প্রথম থেকেই আমাদের সঙ্গী হয়েছে এক জোড়া বালি হাঁস। ওদের হাবভাবে বুঝা যায় এখানেই ওরা ডিম দিয়ে বাচ্চা-কাচ্চা ফুটানোর মতলব এটেছে। বেশ কিছু জলপিপি পাখি থাকে আমাদের চারপাশে। ওদের একজন দেখলাম বাসা তৈরি করছে পানার মধ্যে আটকে থাকা একটি মৃত গাছের ঝাকালো ডালের আড়ালে। কিছু কানি বক ঘোরাফেরা করে আমাদের কাছাকাছিতেই। সাদা বড় বক গুলি দূরেই থাকে। প্রচুর পানকৌড়ির আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি এবার। আমাদের চারটি হাঁস সারাদিন বর্ষার জলে ঘুরে বেরায়। চারপাশের সবুজ ঘাস খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছে ছাগলটি। ব্যাঙ, Lizard (গিরগিটি) ইত্যাদি ছোট ছোট প্রাণী আশ্রয় নিতে শুরু করেছে আশ্রমের চারপাশে। সাপেদের উপস্থিতও টের পাওয়া যাচ্ছে আশেপাশে।

এইসব গ্রামীণ চিত্রের লোভে আমরা মাঝে মাঝেই ছুটে যাই আশ্রমে। ঈদের পরে ৬ তারিখে তেমনই একটি আয়োজন ছিলো আমাদের। সেদিন আমাদের বন্ধু শাহজালাল যেতে পারেনাই। তাই বারবার বলছিলো আবার আয়োজন করতে। তাই এই গত ১৫ তারিখে আমরা ৫ বন্ধু গিয়েছিলাম আশ্রমে। সকাল ৮টার সময় বাড্ডা থেকে আমরা ৩ বন্ধু আর মিরপুর থেকে জালাল ও হারুন রওনা হয়ে মিলিতো হয়েছিলাম কুড়িল বিশ্ব রোডে। সেখান থেকে একটি সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে চলে গিয়েছিলাম নাগরি বাজারে। সাকাল সকাল বাজার থেকে ৬০ দরে সাড়ে চার লিটার দুধ কিনেছি। ১০০ টাকা দিয়ে একটি মাঝারি সাইজের গাছ পাঁকা কাঠাল কিনেছি।







আশ্রমে পৌছে জামা-কাপর ছেড়ে লুঙ্গি আর সেন্টু গেঞ্জি পরে গ্রামীণবেশ ধরে নিলাম প্রায় সকলেই। কেউ কেউ খালি গায়েই শান্তি খুঁজে পেলো। আমাদের বিচিত্র বাড়ির ঝাপ গুলি তুলে দেয়ার পরে বাতাসেরা বিনা বাধায় পরশ বুলাতে শুরু করলো। আকাশে এই মেঘ-এই রদ্দুরের খেলা, বাতাস কাউকেই স্থির হতে দিচ্ছে না। এরই মাঝে কাঠালটি কেটে শুরু হলো খাওয়া। কোয়া গুলি ছোট ছোট, কিন্তু যেমন মিষ্টি তেমন সুস্বাদু। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো দেখতে দেখতে।



ইচ্ছে ছিলো বিলের দেশী মাছ দিয়ে আজ দুপুরের খাবার হবে। কিন্তু মাছ পাওয়া গেলো না। তাই দুপুরের রেসেপি হলো খঁটি গ্রামীণ ধরনের। আশ্রমের হাসের ডিম ভেজে তা ভূনা করা হবে, ঘন করে ডাল ভূনা, শুকনা মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা, আশ্রম থেকে সংগ্রহ করা থানকুনি পাতা শুকনা মরিচ-পিঁয়াজ-সরিষার তেলদিয়ে দিয়ে মাখা, কাঁচা মরিচ কুচির সাথে টমেটোর সালাদ, সাথে আশ্রমের গাছ থেকে সংগ্রহ করা সুগন্ধী লেবু



রান্না শেষ হওয়ার আগেই খবর পেয়ে মটর সাইকেল নিয়ে হাজির হয়ে যায় আরো ৩ জন। ভাত আর অন্যসব ভর্তা ছিলো যথেষ্টই, শুধু শেষ মূহুর্তে আরো তিনটি ডিম ভেজে ভূনার সাথে বসিয়ে দিতে হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে যাবার পরে শেষ হয় খাবার। কেউ কেউ পান করলো মগে করে সর উঠা গরম গরম দুধ



বিকেল শুরুর আগেই ২টি মটর সাইকেল নিয়ে আরো ৪ বন্ধু হজির হয়ে গেলো। আমি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম শ্বরবাড়ি থেকে আনা জামরুল। ছিলো মুড়ি চানাচুর। এগুলি দিয়েই আপ্যায়ন করা হলো ওদের। বিকেলে তৈরি হলো দুধ দিয়ে লাচ্ছা সেমাই। মাচায় বসে লাচ্ছা সেমাই খেতে খেতে পূবাকাশে উঠলো মস্তবড় পূর্ণিমার চাঁদ। সন্ধ্যেটা পূর্ণিমার চাঁদ দেখে পার করে দিয়ে ফেরার পথ ধরলাম আমরা।










৪টি ছবি আমার মোবাইলে তোলা, বাকি ছবি তুলেছে অন্যেরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৫
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×