অনেক বছর আগের কথা, আব্বাকে এলাকার বিদ্যুৎবিল দিতে আসা লোকটি বুঝালো বিদ্যুৎ বিলের একাধীক মিটার থাকলে প্রতি মিটারে ইউনিট খরচ হবে কম, ফলে বিলের রেটও কম পরবে।

আমার বাড়ি হচ্ছে ঢাকার উত্তর বাড্ডাতে। এখানে মোট ১০ কাঠা জমির মধ্যে ৩ কাঠায় ৩ তালা টেম্পোরারি দালান, আর বাকি টুকুতে সেমিপাকা, টিনসেড বাড়ি। সব রুম রুম ভাড়া দেয়া। আমিও এখানেই থাকি। তো আব্বা তখন একে একে ১৪টি বিদ্যুতের মিটার নিয়ে নিলো। তাতে কতটুকু লাভ হলো আমি জানি না (কারণ তখন এইসবের খবর আমাকে রাখতে হতো না।) তবে ঝামেলা গেলো বেড়ে। মাস শেষে এক সাথে ১৪ মিটারের বিল দিতে গেলে ব্যাংকের লোকেরা নিতে চাইতো না বলে দুইবার লোক পাঠাতে হতো।
দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেলো। এখন বাড়ির সবটাই আমাকে দেখতে হয়। তো এর মধ্যে বছর দেড়-দুই আগে বিদ্যুৎ এর মিটার গুলি সব প্রিপেইড ডিজিটাল মিটারে কনভার্ট করে দিয়ে গেলো। যেহেতু আমার বাড়িতে সব রুম রুম করে ভাড়া দেয়া তাই সবগুলি মিটারের বিল আমাকেই পরিশোষ করতে হয়। পরে মাশ শেষে সাব-মিটারের রিডিং হিসাব করে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে সেই বিল নিতে হয়।
বছরের শেষ ও প্রথম দিকে যখন শীত থাকে তখন মিটার গুলিতে বিল আসতো সব মিলিয়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর গরমের সময় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখনও এমনই খরচ হয় তবে টাকাটা অগ্রীম মিটারে রিচার্জ করে দিতে হয় কার্ড দিয়ে। আমি রকেট একাউন্ট থেকে মিটারে রিচার্জ করি। প্রায় সময়ই প্রতি মিটারে হাজার টাকা করে রিচার্জ করি। তাতে শীতের সময় প্রায় এক মাসের কাছাকাছি চলে গেলেও এই গরমের সময় এক সপ্তাহেই শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রতি দিনই প্রায়ই ২-৩টি মিটারে টাকা রিচার্জ করতে হয়। হাতের অবস্থা খুব টানাটানি বলে এরচেয়ে বেশী রিচার্জ করাটা সম্ভব হচ্ছে না।
মিটারের টাকা শেষ হলেও সাধারণত সকাল ১০টার আগে বিদ্যুৎ বন্ধ হয় না। আমি বাড়িতে না থাকলেও আমাকে ফোন করে জানালেই আমি রকেট থেকে টাকা রিচার্জ করেত দিতে পারি। লাইনে দাঁড়াতে হয় না, মেলা সুবিধা। কিন্তু বেশ কয়েক মাস থেকেই দেখতে পাচ্ছি ডেসকোর সার্ভার নাকি ডাউন থাকে। তখন কার্ড দিয়েও টাকা রিচার্জ হয় না, রকেট দিয়েও না। কখনো কখনো টাকা কেটে নেয় ঠিকই কিন্তু মিটারে ঢুকে না, বিদ্যুৎও আসে না। বেশ কয়েক ঘন্টা পরে সমস্যার সমাধান হয়। গত সপ্তাহেও একই দিনে এক সাথে ৩টি মিটারের টাকা শেষ হয়েছে, রিচার্জ করতে গিয়ে দেখি কাজ হচ্ছে না। কখন ঠিক হবে সেটাও জানার কোনো উপায় নেই। কিছুক্ষণ পরপর চেষ্টা করতে থাকো। হায় ডিজিটাল মিটার!!
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সামুতে বসলাম। কিছুক্ষণ পরেই জ্যোতি বাবু চলে গেলেন। একটু পরেই বুঝতে পারলাম জ্যোতি বাবু শুধু আমার ফ্লাটেই অনুপুস্থিত!! অর্থাৎ আমার মিটারের টাকা শেষ হয়েছে। রকেট থেকে টাকা রিচার্জের চেষ্টা করলাম হলো না। কার্ড দিয়ে পাঠালাম, সেখান থেকে খবর নিয়ে এলো বিশাল লাইন হয়ে গেছে, আজকেও সার্ভার ডাউন কেউ টাকা রিচার্জ করতে পারতেছে না। আড়াইটার সময় আবার যেতে বলেছে। এই গরমের মধ্যে কি একটা অবস্থা বিদ্যুৎ বিহীন থাকা। বারবার চেষ্টা করতেই থাকলাম। ভাগ্য ভালো আজকে সকালে বৃষ্টি হলো তাই গরম একটু কম। চেষ্টা করতে করতে শেষ পর্যন্ত পৌনে দুইটার সময় রকেট থেকে রিচার্জ করতে পারলাম। এই হচ্ছে আমার ডিজি টাল-মাটাল অবস্থা !!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২২ দুপুর ২:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



