আমার বাড়িতে (ঢাকার উত্তর বাড্ডা) দুটি জাম গাছ আছে। আমার বাবা নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। দেখতে দেখতে জাম গাছ গুলি বড় হয়ে গেলো। এক সময় ফল দিতে শুরু করলো। বেশ বড় বড় রসালো কাল জাম। খেতে বেশ ভালো।
আব্বা জীবিত থাকা অবস্থাতেই একটি গাছে জাম এসেছিলো। তখন গাছ ছোট ছিলো, জামও খুব বেশি হতো না। সেই জাম পেরে আমার বোন-ভাগনা-ভাগনির বাড়িতে পাঠাতেন। আশপাশের বাড়িতে ও দিতেন।
গাছগুলি এখন অনেক বড় হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে হঠাত করেই এক সন্ধ্যায় ঝর শুরু হলে বাড়ির ভিতরে থাকা জাম গাছটি গোড়া থেকে ভেঙ্গে হেলে পড়ে গেলো। সেই বছরই প্রথম ঐ গাছটিতে জামের কুরি এসেছে। গাছটিতে থোকা থোকা সবুজ জাম ধরে আছে। গোড়ার ভাঙ্গা অংশটি জলের নিচে, আমি হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম গোড়ার ৩ ভাগের দুই ভাগই ভেঙ্গে গেছে। বাকিটুকুর সাথে কোনো রকমে লেগে আছে।
৮-১০ লোক ডেকে এনে গাছটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে, বাঁশের কেচকি বানিয়ে কোনো রকমে একটু একটু করে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ঘরের চালের সাথে মজবুত করে বেঁধে দিলা। দুটি বাঁশ দিয়েও ঠেকনা দিয়ে রাখলাম যাতে না পড়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যে গাছের পাতাগুলি নির্জীব হয়েগেলো। বুঝা যাচ্ছে গাছটি মারা যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন পরে দেখা গেলো পাতাগুলি এখনো ঝরে যায়ন বরং একটু সজীব মনে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত গাছি বেঁচে গেলো। গাছটি বেঁচে গেলেও আর খুব বেশী বড় হয়নি। এবং খুবই অল্প পরিমান জাম হয় গাছটিতে। এবছর একেবারেই জাম হয়নি। হয়তো বুঝতে পেরেছে এবছর ও কাটা পরে যাবে।
অন্য গাছটি রাস্তার ধারে। সেটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে। যদিও বিদ্যুৎ এর তারের কারণে ওকে কেটে-ছেটে দিতে হয় প্রতি বছরেই। তবুও গাছটিতে প্রচুর জাম হয়। চাইলে বেশ ভালো দামে বিক্রি করে দেয়া যায়। সিজন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই জাম পাঁকতে শুরু হয়। সেই সময় জামের দামও থাকে বেশী। কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত একটি জামও বিক্রি করি নাই। আগামীতেও করবো না। মোটামুটি ৪-৫ বার গাছ থেকে জাম পারা যায়। একবাটি করে জাম পলিব্যাগে ভরতে থাকি। আমার ছোট কন্যা নুয়াইরা প্যাকেট ধরে রেখে আমাকে সাহয্য করে আমাকে জাম ভরতে। তারপর এক দিক থেকে পরিচিত-আত্মিয়-বন্ধু-ভাড়াটিয়া সবাইকে একটি করে প্যাকেট দিই। যদিও প্যাকেটে জাম থাকে খুবই অল্প পরিমানেই। তাতেও সব বাড়িতে সবাইকে দেয়া হয়ে উঠে না। কেউ না কেউ ঠিকই বাকি থেকে যায়। পরের বছর আবার দিবো ইনশাআল্লাহ এইটাই মনে মনে রাখি। এবছর প্রায় ১২০+ বাড়িতে জাম পাঠিয়েছি। সেই সাথে আমার ভাড়াটিয়া, দোকানদার অনেকেই পেয়েছে আমার গাছের জাম। প্রতি বছরই পায়।
এরপরে আমাদের কাঠাল কাহিনী লিখবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২৪