অশোক ফুলের সাথে এই ফুলের কোনো মিল না থাকলেও বাংলায় “রাজ অশোক” নামটি রাখেন বলধা গার্ডেনের প্রয়াত তত্ত্বাবধায়ক শ্রী অমৃতলাল আচার্য। রাজ অশোক নামেই ফুলটি সর্বাধিক পরিচিত। এই গাছের আদি নিবাস বার্মা বা মায়ানমার, তাই একে মিয়ানমার ফুল নামেও ডাকা হয়।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের ৪ নং তফসিল অনুযায়ী এ “রাজ অশোক” গাছটি সংরক্ষিত।
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : উর্বশী, সোকরে, মিয়ানমার ফুল ইত্যাদি।
Common Name : Pride of Burma, Orchid tree, Tree of heaven ইত্যাদি।
Scientific Name : Amherstia nobilis
রাজ অশোক মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ, সাধারণত ৮ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু পারে। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের কমন অশোক আর হলুদ অশোকের সাথে এই রাজ অশোক ফুলের কোন মিল নেই। না ফুলের রং এ কোনো মিল আছে, না ফুলের আকারে কোনো মিল আছে। সব দিক থেকেই আলাদা। বরং ফুল দেখতে কিছুটা অর্কিড ফুলের সাথে মিল আছে। রাজ এই কারণে অশোক ফুল অর্কিডের মতো প্রশাখাময় হয় বলে একে Orchid tree বলা হয়। তবে হে, রাজ অশোকের পাতা, ডাল ও কাণ্ড কমন অশোকের মতই দেখতে। অর্থাৎ ফুল না দেখে রাজ অশোককে আলাদা করে চেনা বেশ কষ্টসাধ্য।
তাছাড়া রাজ অশোকের আরেক নাম উর্বশী, যার মানে হচ্ছে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা ও অনন্তযৌবনা অপ্সরা। শুধু মাত্র এই কারণেই অনেকে মনে করেন এই ফুলের নাম পারিজাত। তারা ধারনা করেন যেহেতু পারিজাত স্বর্গের ফুল আর উর্বশী হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরা তাই রাজ অশোকই পারিজাত। তবে এই ধারনাটা একেবারেই ভুল।
রাজ অশোকের ফুল হেমন্ত থেকে বসন্ত পর্যন্ত ফুটতে থাকে। এমনকি গ্রীষ্মকালেও মাঝে মাঝে ফুল দেখা যায়।
রাজ অশোকের ফুল বেশ বাহারি। গাছের উপরিভাগের কাণ্ড ও ডালপালা থেকে হাত খানেক লম্বা মঞ্জরি দণ্ড বের হয়ে নিচের দিকে ঝুলে থাকে। সোনালুর মতই নিচের দিকে ঝালরের মত ঝুলে থাকে এরা। মঞ্জরি দণ্ডে বিপরীত সজ্জায় চার-পাঁচটি ফুল থাকে। মঞ্জরি দণ্ডের গোঁড়ার দিকের ফুলটি প্রথমে ফোটে, তারপর ক্রমশ নিচের কলিগুলো ফুটতে থাকে।
যদিও স্বর্গের উর্বশীর কাহিনী সাথে রাজ অশোকের কোন যোগসূত্র নেই তাই কিছু বলছিনা। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দীর্ঘ কবিতা “উর্বশী” থেকে বাছাই করা কয়েকটা লাইন দেয়ার লোভ কিছুতেই সামলানো গেলো না।
উর্বশী
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ, সুন্দরী রূপসী,
হে নন্দনবাসিনী উর্বশী!
বৃন্তহীন পুষ্প-সম আপনাতে আপনি বিকশি
কবে তুমি ফুটিলে উর্বশী!
কোনোকালে ছিলে না কি মুকুলিকা বালিকা-বয়সী
হে অনন্তযৌবনা উর্বশী!
যুগযুগান্তর হতে তুমি শুধু বিশ্বের প্রেয়সী
হে অপূর্বশোভনা উর্বশী!
সুরসভাতলে যবে নৃত্য কর পুলকে উল্লসি
হে বিলোলহিল্লোল উর্বশী!
স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী তুমি হে উষসী,
হে ভুবনমোহিনী উর্বশী!
ওই শুন দিশে দিশে তোমা লাগি কাঁদিছে ক্রন্দসী
হে নিষ্ঠুরা বধিরা উর্বশী!
ফিরিবে না, ফিরিবে না-- অস্ত গেছে সে গৌরবশশী,
অস্তাচলবাসিনী উর্বশী!
ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ০৪/০৩/২০১৯ ইং
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে