
যে সময়ের কথা বলছি তখন বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করে বান্দরবানের কারো সাথেই সেইভাবে জানাশোনা না থাকায় শেষ পর্যন্ত প্রায় কোনো রকম প্রস্তুতি এবং প্লান ছাড়াই আমরা ৫ জনের একটি গ্রুপ সম্ভবতো ২০০১ বা ২০০২ সালের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে রওনা হই বান্দরবানে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় (তখনকার হিসেবে) কেওক্রাডং যাবার উদ্দেশ্যে। আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো, আমরা যে বাসে বান্দরবান যাচ্ছিলাম সেই বাসেই পরিচয় হয় আরো দুজন ছেলের সাথে। তারাও যাচ্ছে কেওক্রাডং। তো আমরা ৫ থেকে হয়ে গেলাম ৭ জনের গ্রুপ। এই দুজন গতবছর বগালেক পর্যন্ত গিয়ে ছিলো।
বান্দারবান নেমে আমরাান্দের গাড়ির ছাদে বসে চলে আসলাম রুমা বাজার যাওয়ার ট্রলার ঘাটে। এখন যেমন বাসে বা চান্দের গাড়িতে সরাসরি রুমা বাজার চলে যাওয়া যায়, তখন এই সড়ক পথ ছিলো না। হয় নাফ নদী ধরে নৌকায় অথবা নদীর পাড় ধরে হেঁটে যেতে হতো রুমা বাজার। আমরা নৌকা দিয়ে যাওয়ার সময় রুমা বাজারের কাছাকাছি পৌছানোর আগেই দেখতে পাই নদীর তীর ধরে একটি পাহাড়ি ছেলে হেঁটে যাচ্ছে রুমার দিকে। বাসে পরিচয় হওয়া দুজন এই পাহাড়ি ছেলেটিকে ডেকে আমাদের নৌকায় তুলে নিলো। এই পাহাড়ি ছেলেটি হচ্ছে বগালেক পাড়ার কারবারীর (পাড়ার প্রধান ব্যক্তি) বড় ছেলে লারাম বম।
রুমা বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা লারামের সাথে হাঁটা শুরু করি ঝিরিপথ ধরে বগা লেকের উদ্দেশ্যে। রাতে আমরা থাকি বগালেকের পাড়ে লারামের বাড়িতেই, খাওয়াও ছিলো ওর বাড়িতেই। লারামকে পাওয়ার কারণে সেবার আমাদের ট্রিপের সমস্ত ঝামেলা মিটে গিয়েছিলো। পরদিন লারামের ছোট ভাই আমাদের কেওক্রাডং এর গাইড হয়।
গত ২০২২ সালের মার্চের ১৪ তারিখে আবার আমরা ৯ জনের একটি দল গিয়ে ছিলাম কেওক্রাডং। এবারও বগালেকে পৌছে উঠে ছিলাম লারামের হোটেলে, খেয়ে ছিলাম ওরই রেষ্টুরেন্টে। লারামের আন্তুরিকতা আর ভালো ব্যবহার আমাদের সকলেরই ভালো লেগেছিলো সেই ২০ বছর আগের মতোই। খুবই তৃপ্তি করে খেয়ে ছিলাম দু দিন ওর আতিথিয়তায়।

গত কাল হঠাত করেই ফেসবুকে একটি পোস্ট চোখে পড়লো। বান্দরবানের বগালেকপাড়া থেকে পর্যটন ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার। বগালেকপাড়া নামটা দেখেই ভিতরের সংবাদটা পড়তে শুরু করলাম। এবং সংবাদটি পড়ে একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। -
বান্দরবানে রুমা উপজেলায় একটি পাহাড়ের ঝিরি থেকে লালরামচন ওরফে লারাম বম (৪৩) নামের এক পর্যটন ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বগালেকপাড়ার পূর্ব পাশে হারমনপাড়া এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, অন্তত চার-পাঁচ দিন আগে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগালেকপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীকে ৫ ফেব্রুয়ারি ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বগালেকপাড়ায় তাঁর কটেজ ও খাবারের দোকান আছে।
পাড়াবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বগালেক। লেকসংলগ্ন বগালেকপাড়ায় গত রোববার সন্ধ্যায় কেএনএফের সশস্ত্র একটি দল আসে। তারা লারাম বমসহ তাঁর পরিবারের পাঁচজনকে ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন গভীর রাতে লারামের বাবা, স্ত্রীসহ চারজন ফিরে এলেও লারামকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এর পর থেকে লারামের হদিস মিলছিল না। পাড়াবাসী খোঁজাখুঁজি করে আজ হারমনপাড়া এলাকায় তাঁর লাশ খুঁজে পান।
কেন লারাম বমকে ধরে নিয়ে কেএনএফ হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, লারাম বম আগে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) করতেন। তবে এখন কোনো দল করেন না। তিনি বিভিন্ন মহলে গোপনে তথ্য দেন, এই ধারণা থেকেই হয়তো কেএনএফ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল হারমনপাড়া এলাকায় যায়। পাড়া থেকে কিছু দূরে একটি টিলার পাদদেশে ঝিরি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। চার থেকে পাঁচ দিন আগে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ গলে যাওয়ায় কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
- প্রথম আলো

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




