তপন চৌধুরীর গাওয়া এই গানটি শোনেননি এমন গানপ্রিয় মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুন মাস
আমি জেনি গেছি তুমি আসিবেনা ফিরে মিটিবেনা পিয়াস...
----- তাজুল ইমাম -----
গায়কের পিয়াস না মিটলেও শিমুল শতশত পাখির পিয়াস মিটায়। আমি দেখেছি শিমুল গাছে শত শত শালিক, বুলবুলি, কাঠ শালিক, টিয়া পাখিকে বসে থাকতে। আর দেখেছি কাঠবিড়ালিদের শিমুল গাছে হামলে পরতে। তাবে শিমুল ফুলে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ওদের সমস্ত আগ্রহ কচি শিমুল ফলে। ওরা ফলগুলি কুটি কুটি করে খায়। তখন গাছের নিচে অপুষ্ট সাদা সাদা তুল তুষারের মতো ছড়িয়ে বিছিয়ে থাকে।
শিমুল
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : রক্ত শিমুল, লাল শিমুল,
সংস্কৃত নাম : শাল্মলী, মোচা, তূলিনী, কুক্কুটী, রক্তপুষ্পিকা, কণ্টকাঢ্যা, স্থূলফলা, পিচ্ছিলা, চিরজীবিনী।
Common Name : Silk Cotton tree, Bombax, Simal, red cotton tree, Kapok Tree.
Scientific Name : Bombax ceiba
হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক ।
----- নির্মলেন্দু গুণ -----
বাংলাদেশের প্রায় সব অংশেই শিমুল ফুলের দেখা মেলে। অনাদরে অবহেলায় কোনো রকম যত্ন ছাড়াই আমাদের দেশে ছিমুল গাছ জন্মে বনে বাদারে, পথের ধারে, মাঠের পাশে, পাহাড়ে। আমার জানা মতে পরিকল্পিতো ভাবে একটি মাত্র শিমুল বাগান আছে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীর তীরে। আমাদের দেশে শিমুল সেইভাবে চাষ করা না হলেও মালয়, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ চীন, হংকং এবং তাইওয়ানে ব্যাপকভাবে এ গাছের চাষ হয় বলে শুনেছি।
শিমুল একটি পত্রঝড়া বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। মাত্র ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উচ্চতায় আশপাশের আম-কাঁঠাল জাতীয় ২০ থেকে ২৫ বছরের পূর্ণবয়স্ক বৃক্ষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ৫০ বছর বা তারও বেশীসময়ে গাছের পরিধি ২ থেকে ৩ মিটার এবং উচ্চতা ১৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরনো বিশাল শিমুল গাছের গোড়ায় অধিমূল বা ঠেসমূল বা রুট বাট্রেস থাকে। তখন সেই গাছগুলিকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। শিমুল গাছের মূল কাণ্ডের চারপাশে সুবিন্যস্ত হয়ে শাখা-প্রশাখা প্রসারিত হয়। অল্প বয়সী শিমুলগাছে কাণ্ডের গোড়ার দিকে মোটা মোটা বেঁটে কাঁটা থাকে। কাঁটাগুলির গোড়ার অংশ বেশ পুরু এবং অগ্রভাগ সূচালো। তবে বয়স্ক গাছে তেমন কাঁটা থাকে না।
পলাশ-মঞ্জরি পরায়ে দে লো মঞ্জুলিকা
আজি রসিয়ার রাসে হবো আমি নায়িকা লো মঞ্জুলিকা।।
কৃষ্ণচূড়ার সাথে রঙ্গনে অশোকে
বুলালো রঙের মোহন তুলিকা লো মঞ্জুলিকা।।
মাদার শিমুল ফুলে
রঙিন পতাকা দোলে
জ্বলিছে মনে মনে আগুন শিখা লো মঞ্জুলিকা।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
শিমুল গাছের পাতা শীতের শেষে ঝরে যায়, ফাল্গুনে ফুল ফোটে। লাল লাল বড় বড় পুষ্ট ফুলে যখন গাছ ছেয়ে যেতে শুরু করে তখনো গাছটি থাকে পাতাহীন। পত্রহীন গাছে লাল ফুলের এমন রূপ মুগ্ধ করে না এমন লোক পাওয়া ভার। তবে এই ফুলের কোনো সৌরভ নেই। সৌরভহীনতা ফুলের সৌন্দর্যের কোনো হানী করতে পারে নি। শিমুল ফুল গাঢ় লাল রঙের হলেও কখনো কখনো ফিকে লালও দেখা যায়। হলুদ রঙের শিমুল ফুলও দেখতে পাওয়া যায়। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম।
শিমুল ফুল ঘণ্টাকৃতির হয়। ফুলে বেশ পুরু পাঁচটি পাপড়ি থাকে। পাপড়ি গুলি সুসজ্জিত। একটি ফুল ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। ফুলের আকার আর পুরত্বের কারণে একটি শিমুল ফুলের ওজন ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম হতে পারে। ফুলের অনেকগুলি পুংকেশের থাকে। স্ত্রীকেশর পুংকেশর অপেক্ষা লম্বায় বড় হয়।
গুঞ্জামালা গলে কুঞ্জে এসো হে কালা।
বনমালী এসো দুলায়ে বনমালা॥
তব পথে বকুল ঝরিছে উতল বায়ে,
দলিয়া যাবে বলে অকরুণ-রাঙা পায়ে,
রচেছি আসন তরুণ তমাল-ছায়ে,
পলাশ শিমুলে রাঙা প্রদীপ-জ্বালা॥
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
শিমুল গাছে মোচাকৃতি ফল হয়। বৈশাখ মাসে ফল পাকে এবং ফল ফেটে বীজ ও তুলা বের হয়ে আসে। বীজের রং কালো। শিমুল তুলায় উন্নতো মানের আরামদায়ক বালিশ, লেপ, তোশক, কুশন ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
শিমুল আসলে এক ধরনের দেশি তুলা গাছ। এটি শিমুল তুলা নামে পরিচিত। শিমুল তুলার বেশ নাম ডাক ও চাহিদা রয়েছে দেশে।
শিমুল গাছের ছাল ঘা সারাতে সহায়তা করে। রক্ত আমাশয়ে দুর করে। ছাল ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে উপকার হয়। শিমুল চারার কচি মূল খুবই উপকারি ঔষধী।
যে বসন্তে উৎকণ্ঠিত দিনে
সাড়া এল চঞ্চল দক্ষিণে;
পলাশের কুঁড়ি
একরাত্রে বর্ণবহ্নি জ্বালিল সমস্ত বন জুড়ি;
শিমুল পাগল হয়ে মাতে,
অজস্র ঐশ্বর্যভার ভরে তার দরিদ্র শাখাতে,
পাত্র করি পুরা
আকাশে আকাশে ঢালে রক্তফেন সুরা।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
ছবি তোলার স্থান : কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ।
তথ্য সূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫