বাংলাদেশে শীতের সময়টা ফুলেরও সময় বলা চলে। শীতে নানার রং বেরঙের ফুল ফোটে বাগানে। শীতের হরেক রকম ফুলের মাঝে বাগানের ফুল না হয়েও বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে সরষে বা সর্ষে বা সরিষা ফুল। গ্রামে কেউ কেউ বলেন কৌরা ফুল।
যে কামনা নিয়ে মধুমাছি ফেরে বুকে মোর সেই তৃষা!
খুঁজে মরি রূপ, ছায়াধূপ জুড়ি,
রঙের মাঝারে হেরি রঙডুবি!
পরাগের ঠোঁটে পরিমল-গুঁড়ি,-
হারায়ে ফেলি গো দিশা!
আমি প্রজাপতি-মিঠা মাঠে মাঠে সোঁদালে সর্ষেক্ষেতে;
-রোদের সফরে খুঁজি নাকো ঘর,
বাঁধি নাকো বাসা-কাঁপি থরথর।
----- জীবনানন্দ দাশ -----
বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে - চোখে সর্ষে ফুল দেখা। প্রবাদের এই চোখে সরষে ফুল কেউ দেখতে না চাইলেও শীতের সময় দিগন্তজোড়া সর্ষে ক্ষেতে হলদে সর্ষে ফুল দেখে মুগ্ধ হবেনা এমন মানুষ মেলা ভার। নিজ চোখে শীতের প্রকৃতিতে সরষে ক্ষেতে সরষে ফুল দেখার অভিজ্ঞতা যার হয়েছে, সেটি তার মানসপটে চিরস্থায়ী হয়ে রবে।
সর্ষে ক্ষেতে ফুল ফুটে হলদে হয়ে যাওয়া মাঠে যখন হাওয়া খেলে যায় তার রূপ বর্ননা করার ভাষা আমার জানা নাই। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার এক কবিতায় লিখেছেন সেই রূপেরই কথা।
নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল,
বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল॥
আকাশের লাগে ধাঁদা রবির আলো ওই কি বাঁধা ॥
বুঝি ধরার কাছে আপনাকে সে মাগল,
সর্ষেক্ষেতে ফুল হয়ে তাই জাগল॥
নীল দিগন্তে মোর বেদনখানি লাগল,
অনেক কালের মনের কথা জাগল।
এল আমার হারিয়ে-যাওয়া কোন্ ফাগুনের পাগল হাওয়া।
বুঝি এই ফাগুনে আপনাকে সে মাগল,
সর্ষেক্ষেতে ঢেউ হয়ে তাই জাগল॥
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
সরিষা একটি তৈলফসল অর্থাৎ তেল বীজ। সরিষা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আমাদের এশিয়াতেই। সরিষা দানা পিষে সরিষার তেল বের করা হয়। সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহার হয়। সরিষা পাতা শাক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষা ফুলে স্ব-পরাগায়ন ঘটে থাকে। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটার মত হয়, তবে রাই সরিষা ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে
শীতকালে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে (২০২০) এর সরিষা আবাদ করা হয়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। বাংলাদেশে সরিষার তেলের উৎপাদনের বাৎসরিক পরিমাণ প্রায় আড়াই লক্ষ টন (২০২০)। সরিষার খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয় যথা মাঘী সরিষা, রাই সরিষা ও ধলি সরিষা।
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া
আমি ময়নামতীর শাড়ি দেবো, চলো আমার বাড়ি
ওগো ভিনগেরামের নারী
তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি।।
তোরে বৈঁচী ফুলের পৈঁচী দেবো কলমিলতার বালা,
রক্ত-শালুক দিবো পায়ে, পরবে আলতা তা'রি।।
হলুদ-চাঁপার বরণ কন্যা এসো আমার নায়
সরষে ফুলের সোনার রেণু মাখাবো ওই গায়!
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
প্রতি বছরের মতোই এবছরও আমাদের আশ্রমের ঠিক পাশেই এক খন্ড জমিতে অল্প কিছু সর্ষে চাষ করেছে কেউ একজন। শীতের রাতে আশ্রমে রাত কাটানোর আনন্দই আলাদা। সেই সাথে বোনাস হচ্ছে সকাল সকাল বাংলার গ্রামের অপরূপ দৃশ্যে চোখ জোড়ানোর সুযোগ।
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : সরষে, সর্ষে, সরিষা কৌরা,
Common Name : Mustard Flower
Scientific Name : Brassica campestris
ছবি ও বর্ননা : নিজ
গুগল ম্যাপ : আশ্রম
ছবি তোলার স্থান : আশ্রম, নাগরি, কালীগঞ্জ, গাজীপুর, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।