সময় আমাকে কাপুরুষ বানিয়েছে
আব্দুল্লাহ-আল-মামুন
ছোট বেলায় বাবা যখন শুন্যে ছূড়ে দিত
তখন নিশ্চিন্তে খিল খিল করে হেসে উঠতাম,
পড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তাটুকু মাথায় আসত না।
যখন একটু বড় হলাম,
উচু থেকে লাফ দিতে বেশ ভয় লাগত
-যদি পা ভেঙ্গে যায় !
তবুও তা মুহুর্তেয় ভুলে যেয়ে নিশ্চিন্তে দিতাম লাফ।
যখন ছাত্র ছিলাম,ইচ্ছে হলেই বন্ধুরা মিলে
সারারাত নিরুদ্দেশ হাঁটতাম,আড্ডা মারতাম আর
নিশ্চিন্তে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতাম।
ছিনতাইকারী কিম্বা দুস্ক্রতিকারীর কথা মাথায়ও আসত না।
যখন হল ছেড়ে কর্মজীবি হোস্টেল এ উঠলাম,
একমাত্র মুল্যবান সম্পদ সাধের মোবাইলটা ছিন্তাইয়ের ভয়ে
রাতের সৌন্দর্য দেখতে বাইরে যেতাম না।
তবে তখন মাঝে মাঝে বাসার ছাদে
সহকর্মী বন্ধুরা মিলে মণ খুলে গান গাইতাম,
আড্ডা মারতাম আর একটা সুন্দর মুখের স্বপ্ন দেখতাম।
তবে খুব বেশিদিন স্বপ্ন দেখতে হয় নি।
একদিন আম্মা ফোন করে জানাল,
আমার স্বপ্নের রাজকন্যাটা বাস্তবে আসবে।
আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, সে খবর শুনে
আমার সে কি শিহরণ !
এতোদিন যাকে শুধু কল্পনার রংএ একেছি,
যাকে বার বার ভেঙ্গেছি আর গড়েছি সেই,
সেই স্বপ্নকন্যা এখন আমার হবে !
আমার পাশে বসবে, আমার চোখে চোখ রাখবে,
আমার হাত দুটি ধরে একসাথে পাড়ি দেবে
বাকী জীবনটা !
অবশেষে সে আশাও পূরণ হল,
আমার স্বপ্নকন্যা এল আমার ঘরে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, এখন আমাদের দুজনেরই
শত ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে
জোসনায় স্নান করতে পারি না!
পার্থিব সম্পদ খোয়া যাওয়ার ভয়ে,
আমার সেই হল জীবনের মত
রাস্তায় হাটা তো দুরের কথা,
ছাদে দুজন একসাথে গেলেও
বার বার মনে পড়ে,
ঐ বুঝি দরজার তালা ভেঙ্গে চোর ঢুকলো,
ঐ বুঝি জানালা ভেঙ্গে আমার মুঠোফোনটা চুরি হল!
এমনি করে আমার স্বপ্নের মানুষ্টার সাথে
খোলা আকাশ কোনোদিন না দেখেই কেটে গেল অনেকটা সময়।
অবশেষে আমাদের ঘর আলোকিত করে এল
চাঁদের মত সুন্দর ফুটফুটে নতুন মুখ।
তাকে নিয়ে হৈ চৈ আনন্দ উল্লসিত থাকি সারাক্ষণ,
আস্তে আস্তে আমার দেবতাটা বড় হতে লাগল,
এক পা দুপা করে হাটা শিখল, হাসতে শিখল,
আমাকে বাবা বলে ডাকতে শিখল।
এর মাঝে আমি ভুলেই গেছি, শেষ কবে আমি
খোলা আকাশে জোসনা দেখেছি।!
সারাদিনের ব্যাস্ততা সেরে বাসায় ফিরে
আমার আদুরে সোনা পাখিটার হাজারো আবদার,
বালক মণের হাজারো প্রশ্ন,আর বাস্তবতার
নিষ্ঠুর বাড়াবাড়িতে এখন আর আমার আকাশ দেখার কথা ,
জোসনা দেখার কথা মণেও পড়ে না!
আমার সেই ইচ্ছেগুলো যেন পূথিবীর দিন রাত্রির ভীড়ে,
বাস্তবতার অলি গলির ভেতর আমি হারিয়ে ফেলেছি!
সময় আমার কাছে থেকে কেড়ে নিয়েছে আমার সোনালী অতীত,
ফিকে করে দিয়েছে আমার রংঙ্গিন সূতিগুলো।
এখন বহু কষ্টেও আমি সেই ভেঙ্গে যাওয়া সূতি মেলাতে পারি না।
সময় আমাকে ভীতু করেছে, আমাকে কাপুরুষ বানিয়েছে,
আমাকে পার্থিব লালসায় মত্ত করেছে।
এখন পূরোনো সূতিগুলোর কথা মনে হলে কেবল,বারবার
রবীন্দ্রনাথের ঐ গানটা শুনি,
এত বছরের জীবনে, একমাত্র স্বম্বল যেন শধু ঐ গানটায়,
“...দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না...”