আমার নানা রং এর দিনগুলি…
আব্দুল্লাহ-আল-মামুন
আমি রং চিনি না,
কিন্তু হাজারো রং মেখে বসে আছি।
“আমার শৈশবটা কত রঙ্গিন ছিল!”
আচ্ছা! কি রঙ ছিল সেটার?
লাল, নীল নাকি টকটকে সবুজ?
ঝম-ঝম করে নামা বৃষ্টিতে,
জামা খুলে বই মুড়িয়ে,
বুকের সাথে অতি যত্নে লেপ্টে ধরে,
ভিজ়ে চুপচুপে হয়ে বাসায় ফিরে
মায়ের বকুনি খাওয়া কিম্বা
ঢুলু ঢুলু চোখে স্কুল মাঠে দাড়িয়ে,
হাত-পা ছুড়ে পিটি করার সময়
ফরিদের পায়ে লাং মেরে সবার সামনে
কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ! নাকি
টিফিনের সময় মায়ের আচল থেকে আনা
চার আনা দিয়ে বরফ মালায় কিনে
চেটে চেটে খাওয়া।
আহা কত নিশ্চিত্ন ছিল সময় গুলো!
যেন চির সবুজ দিনবনে চির শ্যামল
মুক্ত টিয়া পাখি হয়ে, সবুজ দিনাতিপাত!
আচ্ছা! যখন পড়া না পারায় আমজাদ স্যার
নীল-ডাউন করে রাখত তখন ও কি
দিনগুলো সবুজ মনে হত?
উম!! সাময়িকভাবে দিনটি লাল মনে হলেও,
হেড টিচার হয়ে এই টিচারকে দেখে নেব-
মনে হলেও পরক্ষণেই নীল-ডাউন হয়ে থাকা
পাশের বন্ধু বেলালের প্যান্ট ছেড়া দেখে
খিল খিল করে হেসে ওঠা, আমাকে হাসতে দেখে
পুরো ক্লাস হেসে ওঠা এবং আমজাদ স্যারের মণ
পরক্ষণেই গলে গিয়ে শাস্তি থেকে ইস্তফা দেয়া,
হাল্কা লাল বর্ণকে স্নেহের সবুজে ঢেকে দিত!
আহা এখন যদি আমজাদ স্যারের মত কেউ
জীবনটাকে সবুজে ঢেকে দিত !!
নানী বাড়ি যেতাম মুড়ির টিনে চড়ে।
আমি বসতাম ড্রাইভারের ঠিক পাশে যেয়ে।
মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখতাম কেমন করে
ড্রাইভার গাড়ী চালায় আর মনে মনে প্ল্যান করতাম
বড় হয়ে ড্রাইভার হব।
আবার আমার ছোট বোনের সাথে যখন ডাক্তার-রোগী খেলতাম
তখন মনে প্রাণে পণ করতাম বড় হয়ে ড্রাইভার না
ডাক্তারই হব। এ স্বপ্নের কথা কতবার যে পরীক্ষার খাতায় লিখেছি
তার ইয়ত্তা নেই। তখন কি একটি বারের জন্যেও ভেবেছি
জীবনটা ‘আমার জ়ীবনের লক্ষ্য’ লেখার মত সরল নয়।
এই যে আইসক্রিম ওয়ালা থেকে শুরু করে
জীবনের জটিল সমীকরণ না মিলিয়ে একান্তই
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে হতে চাওয়া
শিক্ষক, পাইলট, মাঝি কিম্বা একান্তই নিঃস্বার্থ গ্রাম্য ডাক্তার হতে চেয়েও,
জ়ীবনের প্রয়জনে একান্তই আমার চাওয়াটাকে
নিজের অজান্তেই কোরবানী করে দেয়া,
এটাকে কোন রং এ আকব?
উম! এটা বুঝি গাড় নীল!
অন্তরের অনাবিস্ক্রিত কষ্ট!
আচ্ছা আমি যদি ফেরিওয়ালা হতাম,
কিম্বা স্কুলের ঘন্টা বাজানো মামার মত কেউ একজন
খুব বেশি কি ক্ষতি হত!!