somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেশোয়ার যুদ্ধ-১০০১

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পেশোয়ার যুদ্ধ-১০০১
.
সুলতান মাহমুদ ১০০১ সালের এইদিনে (২৭ নভেম্বর) পেশোয়ার যুদ্ধে জয়লাভ করেন। যুদ্ধে জয়পাল পরাজিত ও বন্দী হন; পরে মুক্তিলাভ করেন বটে, কিন্তু পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। এটা ছিল ভারতবর্ষে সুলতান মাহমুদের প্রথম অভিযান।
.
পূর্বকথা-
মাহমুদের পিতা সেবুক তেগিন ছিলেন গজনির সুলতান। তাঁর বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের “হিন্দু শাহী” রাজবংশের পরাক্রমশালী রাজা জয়পাল (পূর্ণনাম- পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ শ্রী জয়পালদেব) ৯৭৮ সালে ১ লক্ষাধিক সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে গজনী অভিযানে রওনা হন।
.
কাবুলের নিকটে লাগমান এলাকায় সেবুক তেগিনের ৩০ হাজার সৈন্যের সাথে যুদ্ধে জয়পালের ১ লক্ষ সৈন্য পরাজিত হয় এবং তিনি বন্দী হন। অতঃপর তিনি বার্ষিক একলক্ষ দিরহাম কর প্রদানের শর্তে মুক্তি পান এবং রাজধানি উধাভাণ্ডাপুরে ফিরে আসেন। কিন্তু তিনি কর প্রদান করেননি, বরং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
.
তিনি ফ্রান্সের ক্রুসেডের মতো করে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনী গঠনের প্রয়াসে সকল হিন্দু রাজার নিকট সেনা চেয়ে পাঠান। কাশ্মীরের হিন্দু রাজবংশ, দিল্লি-আজমিরের চৌহান রাজবংশ, কালিঞ্জরের চান্দেল রাজবংশ, কনৌজের রাজ ও গুজরাটের প্রতিহার চালুক্য রাজবংশের সেনা সহায়তায় জয়পাল এক অমিত বিশাল বাহিনী গঠন করে ফেলেন।
.
৯৮৭ সালে নীলম নদীর তীরে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনী সেবুক তেগিনের বাহিনীর মুখোমুখি হয়। জয়পালের কয়েকলক্ষ (প্রকৃত সংখ্যা অজানা) সৈন্যের সামনে গজনির ৩৫ হাজার সেনা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় দেখা গেল। প্রথম দিন ভয়াবহ সংঘর্ষ চলল এবং সন্ধ্যায় যুদ্ধ স্থগিত হলো।
.
যদিও জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়নি, কিন্তু প্রথম দিনের যুদ্ধ স্পষ্টত জয়পালের দিকে ছিল। তাঁর বিশাল হস্তিবাহিনীর সামনে গজনী বাহিনীকে অসহায় দেখা যাচ্ছিল। দ্বিতীয় দিন আবার যুদ্ধ শুরু হলে গজনি বাহিনীর পরাজয়ই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের কমান্ডো দলের একটি বিশেষ কাজ দৃশ্যপটকে নিমিষে বদলে দেয়।
.
কমান্ডো দল দ্রুতগামী ঘোড়ায় চলে প্রতিটি হাতির চোখে তীর ছুঁতে শুরু করল। উন্মাদ হয়ে হাতিগুলো গগণভেদী ধ্বনি করে নিজ বাহিনীর সেনাদেরই পদদলিত করে পিছু ছুটতে শুরু করে। হাতির পিঠে রাজা যুদ্ধভূমি ত্যাগ করে পলায়ন করছেন’ দেখে তাঁর বাহিনীও পরাজয় মনে করে ছত্রভঙ্গ পালাতে থাকে।
.
সুযোগ মতো সুলতান সেবুক তেগিন বাহিনী আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে চতুর্দিক বিদীর্ণ করে ধেয়ে এসে জয়পালের বাহিনীকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। জয়পাল আবারও বন্দী হন, আবারও বার্ষিক একলক্ষ দিরহাম কর প্রদানের শর্তে মুক্তি পান এবং আবারও তিনি কর প্রদান না করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
.
এদিকে ৯৯৭ সালে সেবুক তেগিনের মৃত্যুর পর গজনীর সিংহাসনে আসীন হন ইয়ামিন উদ্দৌলা আবুল কাসিম মাহমুদ বিন সেবুক তেগিন। জয়পালের প্রতিশ্রুত কর প্রদানে উপর্যুপরি অস্বীকার, সীমান্তে উৎপাত এবং বৃহৎ যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে সুলতান মাহমুদ নিজেই ১০০১ সালে ১৫ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে অগ্রসর হন।
.
মাহমুদ আকস্মিক পেশোয়ারে পৌঁছে যান এবং শহরের বাইরে তাঁবু স্থাপন করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল জয়পাল শক্তিবৃদ্ধির অপেক্ষায় থাকেন। উল্লেখযোগ্য শক্তি সঞ্চয় করে জয়পাল তাঁর হস্তি ও অশ্বারোহী সমৃদ্ধ ৪৫ হাজার সৈন্যের ভারী রণসজ্জিত বিশাল বাহিনী নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হন।
.
২৭ নভেম্বর উভয় বাহিনী মুখোমুখী হয়। একতরফা যুদ্ধে গজনী বাহিনীর নিকটে জয়পাল চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। জয়পালের ১৫ হাজার সেনা নিহত ও ৫ হাজার বন্দী হয়। জয়পালকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে বন্দী করা হয় এবং তাঁর গলা থেকে বিপুল জহরত যুক্ত বহুমূল্য একটি হার খুলে নেয়া হয়।
.
বিশ্বাসঘাতক জয়পালকে শিকলে বেঁধে সুলতান মাহমুদের সামনে পেশ করা হয়। আবারো তাঁকে বার্ষিক ১ লক্ষ করের শর্তে মুক্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু অপমানের গ্লানিতে তিনি একটি অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দিয়ে জহরব্রত পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আনন্দপাল হিন্দু শাহী রাজবংশের শাসক হন।
.
অতঃপর
আনন্দপালও পিতা জয়পালের মতো ভারবর্ষের সম্মিলিত হিন্দু বাহিনী গঠন করেন এবং মাহমুদের বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতের শক্তিকে একত্রিত করে ফেলেন। ১০০৯ সালে চাচের যুদ্ধে মাহমুদ আনন্দপালের মুখমুখী হন এবং যুদ্ধে আনন্দপাল পরাজিত ও নিহত হন।
.
সুলতান মাহমুদই সম্ভবত ভারতে সবচেয়ে ইতিহাস বিকৃতির শিকার হয়েছেন। তাঁকে ‘লুটেরা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ ইউরোপের ক্রুসেড থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিন্দুশাহী রাজারা তাঁর বিরুদ্ধে ক্রুসেড-স্টাইলে সম্মিলিত হিন্দু বাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আপনি যদি ইতিহাস না পড়েন, তাহলে “হাজার সাল কা বদলা লিয়া” কথাটির অর্থ অনুধাবন করবেন না।
.
দেখুন- (১) আল-উতবীর লিখিত “তারিখ-ই ইয়ামিনি” বা “কিতাবুল ইয়ামিনি”।
(২) Susan Wise Bauer এর “The History of the Medieval World: From the Conversion of Constantine to the First Crusade.”
(৩) কাজী আব্দুল গনি খানের লিখিত “তারিখ-ই সুলতান মাহমুদ-ই গজনি”।

লেখাটি কপি করা
.
✍ Mohammad Salimullah
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×