পুর্বেই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার সবিনয় অনুরোধ রইলো।
শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করতে হয় জানার প্রয়োজনীয়তা : আজ কত শিশু জন্মেছে? কত শিশু মৃত্যুবরন করেছে, কেনো? কত মানুষ সিগারেটে নতুন করে আসক্ত হয়ছে? দেশে নতুন কত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়? কতটা বায়ু দূষন হয়েছে? কত মানুষ অনিদ্রায় ভুগছে?
উপোরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে আপনার কাছে? আমার কাছে আছে বলে আশা করলে আপনি হতাশ হবেন, না আমারো কাছে নেই। কিন্তু আমি চাইলেই নেট থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর আপনার সামনে আনতে পারবো, এবং সেসব উত্তর বিশ্বাসযোগ্য হবে। তবে আমার প্রশ্নগুলো করার উদ্দেশ্য উত্তর দেয়ার জন্য ছিলনা। আমি বলতে চাইছি, এসব আমি বা আপনি জেনে কি সুফল পাবেন? কোন ভিত্তিতে এসব জানার আগ্রহবোধ তৈরি হবে? দায়িত্ববোধ হতে! আমাদের ভেতরে দায়িত্ববোধের প্রকাশ হলেই এমনসকল প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা উদগ্রিব হব। তারপরে, উত্তরগুলো পাবার পর আমদের ভেতরের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবনায় লিপ্ত হব, কারন খুজবো এসব উত্তরের পেছনে। সেটা হবে অনুসন্ধান করার মনন হতে উৎপত্তি। তারপরে এসবের প্রতিকারে হয়ত আমাদের কেউ কেউ চেষ্টা করবে, এ নিয়ে আর্টিকেল লেখবে, বলবো এসব প্রতিকারের উপায় আড্ডায়, আলাপে, সংসদে, নিউসে, ঘরে ও বাহিরে। তা হবে নিজেদের জন্য নিজেদের যত্ন নেবার জন্য চেষ্টায়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুচিন্তা হতে।
কিন্তু এতো তখন হবে যখন আপনি আমি সুস্থভাবে ভাবার যোগ্য হব। আর তা হবে তখনি যখন আমরা সঠিক শিক্ষা ও পরিবেশে নিজেরা শিখতে ও নিজেদের শেখাতে জানবো; এটাকে বলা হয় আত্মশিক্ষায় ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। তো চলুন জেনে নেই সত্যই কিভাবে শিক্ষাগ্রহন করতে হয়; সেই শিক্ষা, যা পেলে শুধু আমাদের নিজেদের নয়, আমাদের দেশের জন্যও কিছু করার সুযোগ মিলবে।
শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করতে হয় : প্রথমেই বর্তমানে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই। আমাদের সকল শ্রেনীর/স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে মার্কস/নাম্বারের চেয়ে পুজনীয় কম বিষয়ই আছে। কিন্তু কেনো? কেননা আমরা শিখেছি আমাদের জীবনে কয়েকটা সার্টিফিকেটের বড়ই প্রয়োজন! এবং তাছাড়া আর্থিক সহায়তাও অনেকাংশে দরকার, তাই শিশুবেলা হতে যৌবন হতে বার্ধক্য পর্যন্ত আমাদের কাটে বার্ষিক মার্কস হিসেব করা ও অর্থ সংগ্রহে। অবাক হবেন না, আর সত্য বলতে হয়ত এ জন্যই আমারা গণনায় এতো ভালো শিক্ষার্থী। আমাদের পিতা-মাতা আমাদের পাশে থেকেও থাকেন না যখন আমরা পরিক্ষায় ১ ও দুটি ০ না নিয়ে ফিরতে পারি। যখন আমরা পাশের বাড়ির শিশুটির থেকে কম মার্কস পাই, এমনকি অনেক পিতা মাতা চায়, আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথেও প্রতিযোগিতা করি, এবং তাদের হারিয়ে দেই পড়ালেখার যুদ্ধে।
হতাশ হবার কথা বৈকি? আমরা যাই পড়তে, শিখতে সভ্যতা ও মানুষত্ব্য, ফিরে আসি যোদ্ধা হয়ে, কৃপনতা আমাদের সর্বাঙ্গে, আমরা একে অন্যকে হিংস্র হয়ে দেখি, শত্রুতা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। হ্যা আমাদের মাঝে কেউ ব্যাতিক্রম হয়ে নিজেদের ক্রমবিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়, কিন্তু সঙ্গদোষে তারাও অন্ধ সাজতে বাধ্য হয়। পিতা-মাতা, বিশ্ব আমাদের দেখে গর্বিত, কিন্তু আমরা জানি আমরা কেমন করে বড় হয়েছি, আমাদের মনে কিসের সম্ভার, আমাদের ভাবনার স্বার্থন্বেষি মনোভাব।
মনে অনেক দুঃখ জমিয়ে, সিগাটের ধরাই কেউ কেউ, কেউ মাদকে আসক্ত! কেউ কেউ জীবন হতেই ইস্তফা দিয়ে দেই। কেউ কেউ এই চলতি বিশ্বে ভালো কিছু করার জন্য চেষ্টা করি, সফলতা কম ক্ষেত্রেই পাওয়া সম্ভব হয়। কখন কখন কেউ কেউ হসপিটালে ভর্তি হই, বাবা-মায়ের আর্তনাদ শেষবারের মত শুনে কেউ কেউ হারিয়ে যাই অতলে। কেউ কেউ চাকরি খুজে নেই, অপরের কাছে নিচু হয়ে জীবন কাটাই। একটা সময় বিয়ে করি, তবুও হয়ত অসৎ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে যাই। এবরশনের দিকে ঢলি, কেউ কেউ অপরাধ জগতে, আবারো সেই হসপিটাল, সেই মর্গ, সেই মাদকের জগত। আবারো একি সাইকেল! তারপর যারা বেচে থাকে তাদের মাঝে আবারো এই সাইকেল চলতে থাকে। কেউ কেউ প্রেম প্রেম খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, কেউ প্রতারিত হয়ে প্রতারনার জাল বিছাই। কেউ দুর দেশে পাড়ি জমিয়ে একটু শান্তি খুজি, তবুও ঘরতো আপন দেশেই! খুব কম আমরাই জীবনের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরি, কেউ পরের প্রজন্মকে আমাদের নিজেদের মতই হার মেনে নেয়া সৈনিক বানিয়ে যাই, আবার কেউ কেউ তাদের জীবনটাকে আমাদের নিজের মত বিষাক্ত করি, পরিবেশ থেকেও, মনন থেকেও। ঠিক কয়জন মানুষ আমাদের মাঝে সত্যই তা, যা তারা হতে চাইত? যা তাদের কচি মনে আলোড়ন ঘটাতো, তা করতে পেরেছে? অর্থ ও সমাজসম্মানের এই নাটক ধরে রাখতে রাখতে আমরা স্বকীয়তা হারাই। এমন কত গল্প অথচ সত্য কাহিনি বলা যাবে, কিন্তু তাতে কি? রাস্তা যতই ভিন্ন হোক, আমরা তো শেষে হয় হসপিটালে, নায়তো রাস্তায়, নাহয় আপনা ঘরেই মরন কে বরন করি। তাই সেগল্প আর নয়।
কিন্তু এমন না হলে কি হতো? এবং তা কিভাবে? এসো জানি বন্ধুরা আমরা আমাদের জীবনের হিসাবটা কিছুটা হলেও বদলে দিতে পারি।
আমরা যখন জন্মেছি, আমরা সমান ছিলাম কিনা? ছিলাম, তবুও আমরা একটু ভিন্ন, তাতে তো তেমন কিছুই নয়! তাই আসো ভাবি, জানতে শুরু করি, কিভাবে শিক্ষা গ্রহন করবো,
যখন পড়ছ, কেনো পড়ছ ভাববে? ভাববে আমি মানুষ হবার জন্য পড়ছি, আর তা হবার জন্য আমাকে ঠোটস্থ বা মুখস্থ করবার প্রয়োজন নেই, ভাববে আমি অন্তস্থ করবো, আর কোন কিছুই তখন আমার শিক্ষাকে পরিপুর্ণতা প্রাপ্তি থেকে থামাতে পারবেনা। আর তাই নয়, তোমার ক্লাসের কেউ বুঝছেনা বিষয়টি, তাকে সাথে নিয়ে বুঝাও, তার সাথে আলোচনা কর, তার ভুলগুলো শুধরে দাও, দেখবে এমন করতে করতে তুমিও নতুন কিছু শিখে ফেলছো যা একা পড়লে তুমি শিখার সুযোগ পেতে না। কাউকে শেখালে কেউ তার অর্জিত জ্ঞান হারায় না, বরং বাড়ায়! শিশুকালে যে ভালো সহপাঠী বা বন্ধু হতে পারে সে ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে, কেননা সে আগামীতে ভালো পিতা-মাতা , শিক্ষক, সঙ্গি, বন্ধু, সর্বপরি ভালো মানুষ হবার একটি যোগ্যতা এখনি অর্জন করে নিলো। আর তুমি অবশ্যই সুসম্পর্ক গড়ে নিচ্ছো কারো সাথে সামান্য একটু সময়ের জন্য তার পাশে থেকে!
যখন শিখছ, ভাবো কেনো শিখছো? ভাববে, আমি আমাকে জানার জন্য শিখছি। আমি কেনো ও কিভাবে আমি সেটা অনুসন্ধানে শিখছি। তাই আমি যেমন আপনাকে সত্তাকে শ্রদ্ধা করতে শিখবো, তেমনি অন্যের সত্তাকেও। আমি কারো ভাবনাকে তুচ্ছ করে দেখবোনা। কারো সাথে দুর্ব্যবহার করবো না। কারো সুচিন্তা দেখে ঈর্ষান্বিত নয়, বরং তাকে এমন সুচিন্তার জন্য অনুপ্রানিত করবো, এমন ভাবতে আগ্রহী করে তুলবো। আর মনে রাখবো, যে ভালো, সে সবার সাথেই ভালো, এবং সবার সাথেই সে মিশতে পারে। কেননা উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
মার্কস কি আমার/তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া? তা কখনোই ভাববেনা। কেননা মার্কস কেবল বলতে পারে আমরা পরিক্ষার সেই সময়টুকুতে কতটুকু আমাদের মস্তিস্কে ধারন করেছি, কিন্তু সারাজীবনের জন্য আমরা আমাদের শিক্ষাকে কিভাবে ও কতটুকু ধারন করছি আপনাতে, সেটার কথা মার্কস বলতে পারবে? না! তাই মার্কস কে নিয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তা নয়, কেননা কেউ যদি মনযোগ দিয়ে পড়ে, তার শিক্ষনীয় বিষয়টি অন্তস্থ করতে সক্ষম হয়, তবে সে নিশ্চিত পাস করবে!
পড়ালেখায় আনন্দগ্রহন করা কি উচিত নয়? তুমিই একবার ভাবো, যখন বন্ধুরা মিলে নতুন কোন খেলা খেলো, তখন কি তোমার মাঝে একটা আগ্রহ জমে না? তুমি সেটাকে মনোযোগ দিয়ে খেললে আনন্দ পাওনা? অবশ্যই পাও, এবং সেটাই তোমাকে পড়ালেখার সাথে করতে হবে। পড়ালেখায় আনন্দ যে খুজে নিতে পারে, সেই পারে শিক্ষিত হতে সঠিকভাবে।
ফেল করেছ, এর জন্য কি মন খারাপ করাটা আবশ্যক? আমরা জীবনে অনেকবার হারবো, এটাকে স্বাভাবিক ভাবতে শেখাটা আমাদের জন্য জরুরি। কেননা, হার না মানতে শিখলে জিততে শিখবে কি করে? আর হার তো কয়েক মিনিটের জন্য, তুমি ফেইলিয়ার থেকে শিক্ষা নেবে। পরেরবার কি করে উন্নতি করা যায় তা জানবে। আইনস্টাইন বলেছিলেন, যে কখনো ফেইল করে নি, সে কোনদিনও নতুন কিছু চেষ্টা করে নি। তাই হার মানতে শিখতে হবে আমাদের, আরো মানতে হবে যে, আমরা সবকিছুতে বেস্ট হতে পারবো না। আমাদে কিছু উইক ক্ষেত্র থাকবে। তাই সেগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে, কি করে ভালো করা যায়, তার জন্য ধৈর্য ধারন করে শিখতে হবে কি করে বেটার করা যায়। হার সবার জন্যই থাকে, একবার, কিংবা বহুবার, এতে মন খারাপ করা নয়, বরং শেখার চেষ্টা করবে কোথায় তোমার সমস্যা হচ্ছে।
আমাদের শিক্ষা কি কেবল পরিক্ষার খাতায় লেখার মাঝেই সীমিত থাকবে? নাহ, যখন কোন কিছু শিখেছ, তাকে জীবনের মাঝে খুজবে। যেমন ধর, কি করে গাছের পরিচর্যা করতে হয় শিখেছ। স্কুলে বন্ধুরা মিলে গাছে চারা লাগাও, তার পরিচর্যা কর। স্কুলে আগে থেকে গাছ থাকলে তাদের রক্ষনাবেক্ষন কর সবাই মিলে। এমন করে সকল শিক্ষা জীবনে আনতে পারলেই সফল হতে পারবে, কেননা শিক্ষাকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে না পারলে শিক্ষিত হতে পারা যায় না। সুতরাং, শিক্ষাকে বাস্তবে রুপ দাও!
মনে রাখবে, শিক্ষা অনেকেই পাবে, কিন্তু তোমার সুশিক্ষা তোমাকেই পেতে হবে!
আজকে তবে এ পর্যন্তই বলছি বন্ধুরা। আমি চাই তোমারা আমার বলা কথা ভেবে দেখো। আমার বলা উপায়গুলো প্রয়োগ করে দেখো, আসলেই কেমন বোধ করবে তা জানাও! আর কোন মন্তব্য বা কোন কিছু যোগ করতে চাইলে মন্তব্যে লিখে দিবে!
ভালো থাকো!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫২