আমি সবসময় জার্নিতে একটা বই নিয়ে যাই। আমার বন্ধুরা তাদের কানে হেডফোন গুঁজে। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই কিন্তু তারা মোবাইলে ব্যস্ত থাকার কারণে বলতে পারিনা। আমি জোছনা দেখতে ভালবাসি। তারা বারবিকিউ ভালবাসে। আমি বই নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি। যেহেতু ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। কিন্তু আমার বন্ধুদের কেউ এই আলোচনায় আগ্রহী নয়। বরং তারা মেয়েদের শরীর নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী। আমার তাতে অনীহা নেই কিন্তু কিছুক্ষণ গেলেই আমি আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনা। তাদের কেউ কেউ বিয়ের পরেও এই আগ্রহ ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে । আমি সাইকেল চালিয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতে ভালবাসি। তারা এটি লজ্জাস্কর বলে ভাবে। নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে থাকে।
এ ব্যাপার গুলো শুধু বন্ধুদের সাথে আমার বৈপরীত্য হতে পারে বলে ধরে নিয়েছিলাম । কিন্তু তা পরবর্তিতেও আরো চোখে পড়েছে। আমার অনুজসম মানুষেরাও বইয়ে আগ্রহী নয়। তারা বরং ভার্চুয়াল জগতে বেশী আগ্রহী। ইদানীংকালে অগ্রজেরাও ফেসবুক,টিকটক ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ছেন। আমি ভেবেছিলাম, আমি আর ত্রিশ বছর আগে আসলে ভালো হতো। যেহেতু খাপ খাওয়াতে পারছিনা। বুমারদের মতো বই নিয়ে বাসে, লঞ্চে উঠতেই ভাল লাগছে। সেদিন লঞ্চে কাফকা নিয়ে কাটাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণপর মাথা উঠাতেই দেখি কয়েকজন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তারমানে বই পড়া একটি ব্যাতিক্রমী ব্যাপার।
কোন একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে ইদানীং একটা জিনিস চোখে ধরা পড়ে । সবাই মোবাইল নিয়ে ছবি তুলছে। এখন যেকোন জায়গায় তা অহরহ ব্যাপার । সমুদ্র সৈকতে এখন তিল পরিমাণ খোলা জায়গা পাওয়া যায়না যেখানে হাত উঠিয়ে আয়না দেখার ভঙ্গীটি দেখা যায়না। অথচ আগে মানুষ সুর্যাস্ত দেখতে যেতো। এখন ঐ আলোয় নিজেকে দেখতে যায়। আমিও ছবি তুলতে পছন্দ করি। তবে তা নিজের নয়। প্রকৃতির কিংবা প্রাণির। বেশিরভাগই ককুরের। গত ডিসেম্বরে শখের ক্যামেরাটা নিয়ে গেলাম পাশের স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ এবং বিজয়দিবসের অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে। একটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করল আমাকে তারা নিযুক্ত করেছে কিনা আর কিছু টাকার বিনিময়ে তাদের ছবি তুলে ইমেইলে দিতে পারব কিনা? আমি বললাম , সরি। ১৬ই ডিসেম্বরে অনেকেই ছবি তুলতে আসে। কিন্তু আমি আসি কুচকাওয়াজ দেখতে। স্কাউট লিডার ছিলাম। এখানেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। এখনকার এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আমার ভূমিকা কী তা নিয়ে ভাবতে থাকি।
ভাল থাকুক ছাগলেরা। শুভ নববর্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৮:৪৮