গাজায় মৃত্যু এতো সস্তা কেন?
গাজায় মৃত্যু এত সস্তা কেন এই প্রশ্নটি শুধু একটি বাক্য নয়, বরং এটি গভীর যন্ত্রণা, দীর্ঘদিনের নিপীড়ন, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের অভাব এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের প্রতীক। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ইতিহাস, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে।
১. ঐতিহাসিক পটভূমি
গাজার বর্তমান অবস্থা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বহু ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হন যাকে তারা "নাকবা" (বিপর্যয়) বলে অভিহিত করে। এরপর থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীর দখল, অবরোধ, সেনা অভিযানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ওপর বারবার নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
২. অবরোধ ও বঞ্চনা
২০০৭ সাল থেকে গাজা একটি অবরুদ্ধ ভূখণ্ড। ইসরায়েল ও মিসরের যৌথ অবরোধের ফলে গাজার ২০ লক্ষাধিক মানুষ এক ধরনের উন্মুক্ত কারাগারে বাস করছেন। চিকিৎসা, খাদ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুৎসহ ন্যূনতম মানবিক চাহিদাগুলোও অনেক সময় পূরণ হয় না। এই বাস্তবতায় জীবন অনেকটাই মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
৩. পুনঃপুন হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা
ইসরায়েল প্রায়শই গাজায় বিমান হামলা চালায় যার লক্ষ্যবস্তু কখনো মিলিটারি টার্গেট হলেও বাস্তবে নিহত হন অসংখ্য নিরীহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
বিশ্বের অনেক শক্তিধর দেশ এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নেয় না। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো মাঝে মাঝে বিবৃতি দিলেও, বাস্তব পদক্ষেপ প্রায় নেই বললেই চলে। এই নীরবতা মৃত্যুকে আরও সস্তা করে তোলে।
৪. মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক বিচারহীনতা
গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে অনেক বিশেষজ্ঞ জাতিগত নিধন (ethnic cleansing) কিংবা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু দোষীদের বিচার হয় না, বরং অনেক সময় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য প্রভাবশালী দেশগুলো ভেটো প্রয়োগ করে।
৫. মানুষের অনুভূতির অবমূল্যায়ন
পশ্চিমা মিডিয়ায় যখনই গাজায় শিশুদের মৃত্যু ঘটে, সেটিকে কখনো "collateral damage" বা "দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা" বলে ব্যাখ্যা করা হয়। এভাবে বারবার একজন ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যুকে তুচ্ছভাবে দেখানো হলে, ধীরে ধীরে বিশ্ববাসীর মনেও এই মৃত্যুগুলো 'স্বাভাবিক' হয়ে যায়। এখানেই মৃত্যু সস্তা হয়ে পড়ে।
উপসংহার:
গাজায় মৃত্যু সস্তা নয় এটি সস্তা করে তোলা হয়েছে।
এটি হয়েছে ইতিহাসের অবিচার, আধিপত্যবাদী রাজনীতি, সামরিক আগ্রাসন, মিডিয়ার পক্ষপাত, এবং মানবতাবোধের ব্যর্থতার ফলে।
এই বাস্তবতা বদলাতে হলে দরকার সচেতনতা, সহমর্মিতা, ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হওয়া, এবং সবচেয়ে জরুরি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২৯