মৃত্যুভয়, নিপীড়ন ও এক বিভীষিকাময় শাসনে আমার দেশ।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে একটি নজিরবিহীন রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী। এই পরিবর্তনটি যতটা আকস্মিক ছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি আতঙ্কজনক ছিল এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়াগুলো।
সরকার পরিবর্তনের পর যা ঘটছে, তা যেন গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগের কয়েক লক্ষ নেতা-কর্মী চরম মৃত্যুভয় ও নিপীড়নের আতঙ্কে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ নিজ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকি সন্তানদের হত্যারও অভিযোগ এসেছে। নিজ জন্মভূমিতে, নিজের এলাকায় তারা ফিরতে পারছেন না এ এক অমানবিক বাস্তবতা।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এমন বিভৎস রূপ বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। এর আগে বিএনপি বা জাতীয় পার্টির পতনের সময় এমন হিংস্রতা দেখা যায়নি। কিন্তু আজ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে যে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে, তা যেন সভ্যতা ও মানবাধিকারের সব সীমা অতিক্রম করে গেছে।
নতুন সরকারের অধীনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের সম্মিলিত দৌরাত্ম্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের প্রতিদিন রাস্তায়, বাসায়, এমনকি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানেও আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি আমাদের শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবেও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সহিংসতায় ভেঙে ফেলা হচ্ছে জাতির ইতিহাস বহনকারী স্থাপনাগুলো। সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জোর করে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সত্য প্রতিবেদন প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা সত্য বলছে, তাদের জেল-জুলুমের মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে।
এইভাবে একটি জাতিকে ভয় আর আতঙ্কে রেখে সরকার কতদিন টিকে থাকতে পারে? গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই হলো জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকার এবং আইনের শাসন। কিন্তু এসব যখন লঙ্ঘিত হয়, তখন তা শুধু ক্ষমতার অপব্যবহারই নয়, বরং রাষ্ট্র ও জাতির ভবিষ্যতের উপর এক গভীর কালো ছায়া হয়ে নেমে আসে।
বিশ্ব ইতিহাসে মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, বা ইরিত্রিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলোতে দেখা গেছে কীভাবে ভয় দেখিয়ে, হত্যা করে, সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতা দখল করা হয় এবং কীভাবে তা একটি জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশ কি সেই পথেই হাঁটছে?
আমরা চাই, এই দেশ তার সোনালি অতীতের দিকে ফিরে যাক, যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সহাবস্থান ছিল। আমরা চাই, ভিন্নমতকে দমন নয়, শ্রদ্ধা করা হোক। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক, কিন্তু তা যেন মানবতা ও গণতন্ত্রের শত্রু না হয়।
এই বিভীষিকাময় সময় থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংলাপ, প্রয়োজন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং সর্বোপরি, জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বকারী গণতান্ত্রিক সরকার।
ge.jpg]

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৫ ভোর ৬:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



