হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান মানব জাতি সবাই সমান।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সমাজগুলো বহু ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষের সহাবস্থানে গঠিত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মানবজাতির অংশ, সকলেই মানুষ, এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব বিশ্বাস, চেতনা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অথচ, দুঃখজনকভাবে আজও কিছু ধর্মীয় নেতার মুখে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণার বাণী শোনা যায়, যা শুধু অন্যকে কটাক্ষ করেই থেমে থাকে না, বরং সমাজে অসহিষ্ণুতা, উত্তেজনা ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়।
এ ধরনের বক্তব্য কেবলমাত্র একটি ধর্মকে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা নয়, এটি একটি বহুজাতিক, গণতান্ত্রিক ও আধুনিক রাষ্ট্রের আত্মাকে আঘাত করার শামিল। কোনো ধর্মই ঘৃণার শিক্ষা দেয় না; প্রত্যেক ধর্মেই রয়েছে সহনশীলতা, মানবতা ও ভালোবাসার বাণী।" অন্যদিকে গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটক সহ সকল ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সদাচরণের শিক্ষা।
ধর্মীয় বিদ্বেষ বা উস্কানিমূলক বক্তব্য কেবল এক গোষ্ঠীর প্রতি নয়, বরং সামগ্রিক সমাজের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য হুমকি। যখন ধর্মকে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, তখন সমাজে অসন্তোষ, অবিশ্বাস ও বিভাজন জন্ম নেয়। এর চূড়ান্ত পরিণতি হতে পারে দাঙ্গা, সহিংসতা এমনকি রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতা।
তাই এখন সময় এসেছে ঘৃণার নয়, ভালোবাসার বাণী ছড়ানোর। প্রয়োজন এমন এক সমাজব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম নয়, মানুষ পরিচয় হবে মূল ভিত্তি। যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে স্বাধীনভাবে, অপরের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
এই লক্ষ্যে আমাদের করণীয়:
ধর্মীয় নেতাদের উচিত হবে সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার শিক্ষা দেওয়া।
সরকারের উচিত ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া।
শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় সম্প্রীতির শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভেদমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা।
একটি আধুনিক রাষ্ট্র কেবল প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে না, এটি দাঁড়িয়ে থাকে নাগরিকদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। সেই বিশ্বাসকে অটুট রাখতে হলে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে—ধর্ম মানুষকে আলাদা করতে নয়, বরং ভালোবাসা ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই এসেছে।
ভিন্ন ধর্ম নয়, এক মানবজাতি এই হোক আমাদের পরিচয়। আসুন, ধর্মীয় বিভেদ নয়, ভালোবাসা, সহনশীলতা ও মানবিকতার আলোয় গড়ি এক শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ।