আজকের প্রেক্ষাপটে নারীর অধিকার: অগ্রগতি ও অনিয়মের দ্বন্দ্ব

বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। তবে আজকের প্রেক্ষাপটে এসে এটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। একদিকে নারীরা রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রযুক্তি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করছেন, অন্যদিকে এখনো সামাজিক, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

অগ্রগতির আশাব্যঞ্জক চিত্র
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, নারীশিক্ষায় যুগান্তকারী অগ্রগতি হয়েছে। মেয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে, যা একটি উৎসাহব্যঞ্জক দিক। কর্মক্ষেত্রেও নারীরা অনেক বাধা অতিক্রম করে সামনে এগোচ্ছেন। বিশেষ করে গার্মেন্টস, ব্যাংকিং, আইটি ও মিডিয়া খাতে নারীর দৃশ্যমান উপস্থিতি আমাদের অর্থনীতির একটি মূল স্তম্ভ হয়ে উঠেছে।

রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্বও চোখে পড়ার মতো। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচিত নারী এমপিদের সংখ্যা বাড়ছে, যা গণতন্ত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পথ তৈরি করছে।

তবু থেকে যায় কিছু বাস্তবতা
অগ্রগতি সত্ত্বেও বাস্তব পরিস্থিতিতে নারীরা এখনো নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। কর্মক্ষেত্রে সমান মজুরি না পাওয়া, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, পদোন্নতিতে বৈষম্য ইত্যাদি বিষয় এখনো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এছাড়া যৌন হয়রানি, অনলাইন হেনস্তা ও পারিবারিক সহিংসতা বহু নারীর জীবনে নীরব এক যন্ত্রণার নাম।

গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার ও সমাজের চাপে মেয়েরা শিক্ষা ও স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া অনেক নারী আইনের সহায়তা চাইলেও সামাজিক লজ্জা, ভয়ভীতির কারণে চুপ থাকেন।

সমাধানের পথ কোথায়?
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; এর প্রয়োগ নিশ্চিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ছেলে ও মেয়েকে সমানভাবে মানুষ করার চর্চা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় নেতাদের এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল নিরাপত্তাও নারীর অধিকার নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা যেন নিরাপদে মতপ্রকাশ করতে পারেন, সে পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব সমাজের প্রতিটি স্তরের।

উপসংহার
নারীর অধিকার মানেই শুধু নারীকে এগিয়ে নেওয়া নয়; এটি পুরো সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য ধাপ। উন্নয়নের প্রকৃত মানে তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন নারীরা সব ক্ষেত্রেই সমান সুযোগ, সম্মান ও নিরাপত্তা ভোগ করবেন। তাই আজকের দিনে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত নারীর অধিকার যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং কার্যকর উদ্যোগে রূপ নেয়।