মৌলবাদী শাসনের ছায়া নেমে এলে বাংলাদেশ যে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সংস্কৃতিমুখী, মানবিক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন থেকে। কিন্তু আজও কিছু শক্তি এই রাষ্ট্রকে টেনে নিতে চায় উল্টো পথে মধ্যযুগের অন্ধকারে, যেখানে মানুষ নয়, মতবাদই শেষ কথা। যে দলটি স্বাধীনতার ইতিহাসকেই মানে না, সে দল ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে এটা ভবিষ্যতের ভয় নয়, ইতিহাসের নিষ্ঠুর নিশ্চয়তা।
নারীর স্বাধীনতা প্রথমেই তালাবদ্ধ হবে।
মৌলবাদী রাজনীতির প্রথম লক্ষ্য নারীর অধিকার।
তারা ক্ষমতায় এলে-
নারীর চাকরি সংকুচিত হবে।
শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসবে।
বোরকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া শাস্তিযোগ্য হবে। জনজীবনে নারী কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে
অর্ধেক জনগণকে ঘরে আটকে রেখে কোনো দেশ কখনো উন্নত হয়নি; হবে না বাংলাদেশও। এটি হবে অর্থনীতির ওপর সরাসরি আত্মঘাতী আঘাত।
সংস্কৃতি জাতির আত্মা হয়ে উঠবে নিষিদ্ধ বস্তু
কবিতা, গান, নাটক, সিনেমা, থিয়েটার যেখানে মানুষের আনন্দ, যুক্তিবোধ, মানবতা স্পন্দিত হয় মৌলবাদীরা এসবকে শত্রু মনে করে।
তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মানচিত্র রাতারাতি উল্টে যাবে।
রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ।
নজরুল সন্দেহভাজন।
জীবনানন্দ অপসংস্কৃতি।
লালন ঘোষিত শত্রু।
এ দেশ যার গানের ভিত, কবিতার জন্মভূমি, বাউলদের নন্দনভূমি সেই বাংলাদেশকে একদম খোলসবিহীন করে ফেলা হবে।
মাজার, ভক্তি, লোকসংস্কৃতি সব কিছু ‘হারাম’ ঘোষিত হবে। সেই বাংলাদেশ, যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ মাজারে প্রার্থনা করেছে,সেই জায়গাই হয়ে যাবে নিষিদ্ধ এলাকা।লোকসংস্কৃতি, বাউল, গাজীর গান সবই “বদনামি সংস্কৃতি” বলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এ শুধু সাংস্কৃতিক হত্যা নয় একটি জাতির হৃদয়কে পাথর বানিয়ে ফেলা।
সংখ্যালঘুদের জন্য ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ
যে বিশ্বাস বহুত্ববাদ মানে না, সেই বিশ্বাস রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে,হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী—কেউই নিরাপদ থাকবে না।
জমি দখল, উপাসনালয় আক্রমণ, জোরপূর্বক ভয় দেখানো এসব বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে।
অভ্যন্তরীণ ভাঙন শুরু হলে রাষ্ট্রের স্থিতি ভেঙে পড়ে; এটি প্রমাণিত সত্য।
মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার মানে রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা। যে দল রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসকেই মানে না,শহীদের রক্তকে অস্বীকার করে,স্বাধীনতার যুদ্ধ কে ‘গণ্ডগোল’ বলে।
তারা কখনোই রাষ্ট্রকে ভালোবাসতে পারে না; তাদের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদও নয়।
রাষ্ট্র যার জন্মমন্ত্রকে অস্বীকার করে, সে রাষ্ট্র অচিরেই বিপজ্জনক পথে চলে যায়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতা
চরম মৌলবাদী শাসনের অধীনে বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হবে
রফতানি বাজার ঝুঁকিতে পড়বে। রেমিট্যান্স ধাক্কা খাবে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি বাড়বে।কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সন্দেহের চোখে দেখা হবে।
দেশকে জঙ্গিবাদ–সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈদেশিক বাজারে দাঁড়িয়ে এই বাজারে সন্দেহ মানেই অর্থনীতির পতন।
রাষ্ট্র তখন আর নাগরিকের নয় হয়ে যায় নির্দেশের
মৌলবাদী শক্তি ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র হয়ে যায় একটি আদর্শিক কারাগার।
সেখানে নাগরিক স্বাধীনতা নেই,
সমালোচনা অপরাধ,
মতপ্রকাশ “রাষ্ট্রদ্রোহ”,
সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ,
মানুষের চিন্তা পুলিশি নজরদারির অধীনে।
এ দেশটি তখন আর ১৮ কোটি মানুষের নয়,
বরং কয়েকজন কট্টর মতবাদের ক্রূর পরীক্ষাগারে পরিণত হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ কোনোভাবেই একরঙা রাষ্ট্র নয়;
এ দেশ নানা নদী, নানা ভাষা, নানা ধর্ম, নানা সংস্কৃতির সুরে গড়া।
যে কোনো শক্তি যে-ই হোক যদি এই বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করতে চায় তাহলে তা শুধু রাজনৈতিক বিপদ নয়,জাতির অস্তিত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের,মানবতার,সংস্কৃতির,মানুষের দেশ
মধ্যযুগীয় অন্ধকারের নয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


