somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু অন্যায় ব্যক্তিগত যা একজন মানুষের জীবন ও মর্যাদাকে ক্ষতবিক্ষত করে। কিছু অন্যায় গোষ্ঠীগত কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সংঘটিত হয়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কিছু অন্যায় আছে যা কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; সেগুলো সমগ্র মানবতার বিবেকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমন অপরাধের সামনে কোনো সভ্য বিশ্ব নিশ্চুপ থাকতে পারে না অন্তত থাকতে পারে না বলেই দাবি করা হয়। কিন্তু মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও লজ্জাজনক অধ্যায় সেখানে, যেখানে এই ভয়ংকর অপরাধগুলো বিচারহীন থেকে যায়। যেখানে হত্যাকারীরা শাস্তি পায় না, আর নির্যাতিতরা ন্যায়বিচারের দরজায় দরজায় ঘুরে মরেও উত্তর পায় না। এই বিচারহীনতাই অপরাধকে আরও নির্দয় করে তোলে, ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে, সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও জাতিনিধন ছিল মানব ইতিহাসের হাতে গোনা জঘন্যতম আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর একটি। লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ, গ্রাম-শহর ধ্বংস এসব ছিল পরিকল্পিত, রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বর্বরতা। বিশ্বমানবতা তখন কেঁদেছিল, বিবেক নাড়িয়ে উঠেছিল। অথচ বাস্তবতা হলো এই অপরাধগুলোর বড় অংশ আজও বৈশ্বিকভাবে প্রায় অদৃশ্য, অবমূল্যায়িত, অবহেলিত।
এর চেয়েও ভয়ংকর সত্য হলো এই ভয়াবহ অপরাধের কারিগররা কেবল শাস্তিই পায়নি, বরং সময়ের সাথে সাথে হয়েছে পুনর্বাসিত। তারা বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে মানবতা, ন্যায়বিচার ও ইতিহাসের মুখে। তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে অপরাধের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়েছে, হত্যাকারীদের মানবিক রূপ দিতে ব্যস্ত থেকেছে।
সবচেয়ে লজ্জাজনক ও বিপজ্জনক বিষয় হলো আজও এই দেশের মাটিতে কিছু কুলাঙ্গার খুন, হত্যা, ধর্ষণের দায় থেকে মুক্ত রাজাকার ও পাকিস্তানি দানবদের পক্ষে দাঁড়ায়। তারা ইতিহাস বিকৃত করে, শহীদের রক্ত অস্বীকার করে, গণহত্যার সত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। প্রশ্ন উঠতেই হবে আর কতদিন এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই বিশ্ব এমন নীরবতা সহ্য করবে?
বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন আর কোনো আবেগের বিষয় নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। ১৯৭১ এর খুনিদের দেশীয় দোসরদের চিহ্নিত করে নির্মূল করা ইতিহাসের প্রতি, শহীদদের প্রতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি নৈতিক দায়। ন্যায়বিচার বিলম্বিত করা মানেই ন্যায়বিচার হত্যা করা।
এই মাটিতেই মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের পতাকা আবার উঠতে হবে। মিথ্যার ওপর দাঁড়ানো ইতিহাস ভেঙে পড়বেই। আর সেই দিন আসবেই যেদিন অপরাধীর নাম অপরাধী হিসেবেই উচ্চারিত হবে, আর বাংলাদেশ বিশ্বমানবতার পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×