"আপনি গরিব হলে আমরা কি? "
কথাটা শুনে ছেলেটির দিকে ভাল করে তাকালাম। বয়স ১০ কিংবা ১২ হবে। কম বেশিও হতে পারে। মায়াকাড়া চেহারা নয়। দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলেছে। চোখমুখ ঘামে ভেজা। পরনের ময়লা সার্টটাও বহু আগেই ভিজে জবজবে হয়েছিল। আমি ভাল করে চোখের দিকে তাকালাম। চোখে হয়ত তখনো কিছুটা মায়া অবশিষ্ট ছিল। অথবা গরমে ঘামে চোখ দুটো ছলছল করেছিল। আমি বুঝতে পারি নি।
আমার ছেঁড়াখোঁড়া মানিব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ' একটা মানিব্যাগ তো ২৫, ৩০টাকাতেই পাওয়া যায়। কিনেন না ক্যান?'
আমার মানিব্যাগ না কেনার একটা রহস্য আছে। সহজ রহস্য। আমি রহস্য চাপা দিতে মজা করে বললাম, 'গরিব মানুষ মানিব্যাগ কেমনে কিনি?'
প্রথম বারের মত আমি ছেলেটির চোখে সত্যিকারের মায়া দেখতে পেলাম। তার পর আপন মনেই বলতে শুরু করল।
' যার ঘরে একটা বুড়ি মা আছে তার কথা ক্যামনে ফেলি? কাজ তো করা লাগবই। গরিব হইলাম আমরা, আপনারা বড় বড় চাকরি করবেন। লাখ লাখ টাকা কামাইবেন। আর আমরা ভ্যান চালাইতেছি ভ্যান চালাইতেই থাকব। '
কথা কটা বলেই জোরে জোরে প্যাডেল মারতে থাকে। হয়ত তার মনে ক্রোধ জাগে। ঘেন্না হয় গরিব হয়ে জন্মানোর জন্য। সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে ওই ছোট্ট পায়ের উপর।
ভ্যান থেকে নেমে আমি আমার ছেঁড়াখোঁড়া মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করি। ১০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ১২ টাকা দেই। দিয়ে কিছু বলি না। হনহন করে পিছু ফিরে চলে আসি। খুব পিছু ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করে। জানি ফিরে তাকালে ছেলেটির চোখে আর ক্রোধ দেখব না। দেখব আনন্দ। শুধু পিছু ফিরে তাকাতে আমার লজ্জ্বা করে। জাতি হিসেবে আমরা ছেলেটি বা ছেলেটির মত মানুষদের কাছে লজ্জিত।
আজ মে দিবস। মে দিবসের আগে বোধহয় একটা 'মহান' শব্দ আছে। মহান শব্দটা আমরা বাঙ্গালিরাই লাগিয়েছি। আজ আমাদের কাছে একটা ছুটির দিন। এই গরমে একটা ছুটির দিন আমাদের কাছে অনেক কিছু। আমরা বন্ধুদের ডেকে বলব ' মাম্মা চল সিনেপ্লেক্সে জটিল মুভি আসছে দেখে আসি। '
১৫০ টাকার টিকেট কিনে আমরা সিনেমা দেখব। কিন্তু পপকর্ন ওয়ালার কাছে দুইটাকা কমানোর জন্য মুলামুলি করব। মুলামুলি না করলে তো আমাদের জাত যাবে। আমরা তো বাঙ্গালি তাই না??!!