somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবীর পিতৃগৃহে আগমনঃ প্রথমে আশা, পরবর্তীতে দূষণ এবং সবশেষে ভাংচুর

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেবী দুর্গা বৎসরে একবার তাঁর স্বামীগৃহ কৈলাস পর্বত হতে মাটির পৃথিবী অর্থাৎ তাঁর পিতৃগৃহে বেড়াতে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন চার সন্তান গণেশ, কার্তিক, স্বরসতী ও লক্ষীকে। একেক সময়ে তিনি একেক বাহনে আসেন, একেক বাহনে যান। পন্ডিতদের মতে এবার তিনি এসছিলেন দোলায় চড়ে এবং ফিরে গিয়েছেন হাতিতে। হাতিতে ফিরার কারণে পন্ডিতদের মতে এবার নাকি পৃথিবী শস্যে ভরে যাবে। পৃথিবী শস্যে ভরে যাবে কিনা তা পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে আপাতত তিনি যেটা দিয়ে গেছেন সেটা চোখের সামনে স্পষ্ট। আপনি যদি পুজার পরবর্তী সময়ে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো দেখে থাকেন তবে দেবীর বিদায়ের সময়ে তিনি পৃথিবীকে কি দিয়ে গেছেন তা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। টিভি চ্যানেলগুলো দিনে-রাতে শুধু দেখাচ্ছিল দেবীর বিসর্জনের কারণে পবিত্র গঙ্গা কীভাবে দূষণে একাকার হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ, লক্ষ প্রতিমা বিসর্জনের ফলে প্রতিমা তৈরীর সামগ্রী আর কাদামাটির কারণে গঙ্গা মোটামুটিভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এটা নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলাও হয়। কলকাতা কর্পোরেশন প্রচুর জনবল আর বহু টাকা খরচ করে এখনও পবিত্র গঙ্গাকে পুরোপুরি কলুষমুক্ত করতে পারেননি।

আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীতেও অনেক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী এমনিতেই দূষিত। তাই 'বোঝার উপর শাকের আটি' মনে করে হয়তো কেউ এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। অথবা সাম্প্রদায়িকতার একটা তকমা লেগে যাবে এই ভয়েও হয়তো আমাদের পরিবেশবাদীরা নীরব ছিলেন। সব বাদীরাই আসলে সময়ে সরব আর অসময়ে নীরব থাকেন।

অশ্রুসজল নয়নে দেবীকে বিদায় দেওয়ার একমাসও গত হয়নি। এরমধ্যেই আজকে পত্রিকায় দেখলাম রমনা কালিমন্দিরে দেবীকে (কালি আসলে দুর্গারই আরেক রূপ) কীভাবে নির্মমভাবে ভাংচুর করা হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্টে যা বুঝলাম, ভাংচুরকারীরা কেউ ভিন্ন ধর্মের নন। সবাই দেবীর অনুসারী, দেবীর একান্ত ভক্ত। ঠিক কি কারণে তাঁরা দেবীর প্রতি এমন নির্মম হলেন তা কেবল দেবী আর তাঁর বিতৃষ্ণ ভক্তরাই বলতে পারবেন। তবে এতটুকুন ভেবে তৃপ্তি পেলাম যে, এ ঘটনা দিয়ে অন্তত বাংলাদেশকে সাম্পদায়িক অসহিষ্ণু রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকলনা। সভা, সেমিনারে মানবতাবাদী সাজা যাবেনা। আয়োজন করে ভিডিওচিত্র উদ্বোধন করা যাবেনা। কোনরকমে হয়তো রাখ-ঢাক দেওয়ারই চেষ্টা চলবে।

পাটটীকাঃ আমি কোরবাণীর মতো এই আরম্বরপূর্ণ পুজাকেও অতিমাত্রায় বাড়বাড়ি বলে মনে করি। শুনে থাকি প্রতিটি মন্ডপে প্রায় লাখ টাকার মতো খরচ করা হয়। সরকারও নাকি সাহায্য দেয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশের সাধারণ হিন্দুদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খুবই করুণ। যারা উচ্চবিত্ত ছিলেন তাঁরা দেশভাগের পর এবং পরবর্তীতে ৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ও ৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে চলে গেছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। নিতান্তই যাদের যাওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁরাই পড়ে আছেন। সত্যি হচ্ছে এই যে, এদের উন্নতির জন্য স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত কোন সরকারই আলাদা করে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এক্ষেত্রে পুজার নামে যে টাকা অপচয় হয় তা কি এসব দরিদ্র হিন্দু শ্রেণীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা যেতনা? আমার মনে হয় সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪২
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×