বিএনপির নেতৃস্থানীয়রা প্রায়ই বলেন, ১/১১ এর কান্ডারীরা নাকি তাঁদের দলের এবং ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে বিপর্যয়ের মূল হোতা। এ কথাটি বাজারে প্রায়ই প্রচার হয় যে, ১/১১ সরকারের নাটের গুরু ছিলেন ইউনুস সাহেব। প্রথমে নাকি তাকেই তত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ইউনুস সাহেব নিজে তা গ্রহণ না করে ড. ফখরুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন। সে বদৌলতে ফখরুদ্দীন সাহেব উড়ে এসে জুড়ে বসেন। অবশ্য ফখরুদ্দীন সাহেবের প্রধান উপদেষ্টা পদ লাভকে ইউনুস সাহেবের বদান্যতা বললে ভুল হবে। ইউনুস সাহেব চাইছিলেন খণ্ডকালীন সময়ের জন্য নয় বরং স্থায়ীভাবে ঐ পদটি দখল করতে। সেই খায়েশে একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও ঘোষণা দেন। প্রাথমিক কাজ-কর্মও শুরু করেন। অবশ্য তত্বাবধায়ক সরকারের সর্বাত্বক সমর্থন, ঢাকার দুটি তথাকথিত নিরপেক্ষ পত্রিকার লজ্জাজনক পক্ষালম্বন (যা তারা এখনও করছেন) এবং প্রভু পশ্চিমাদের অনেক চেষ্টার পরেও তেমন জন-সমর্থন যোগাইতে পারেন নাই। আশাহত হয়ে রাজনৈতিক দলগঠনের কামে ক্ষান্ত দিলেন।
বর্তমানে ইউনুস সাহেবের প্রতি আওয়ামী লীগের যে আচরণ তাকে একেবারে নিরপেক্ষ বলার কোন যৌক্তিকতা নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রশাসনিক সংষ্কারের চেয়ে ইউনুস সাহেবের প্রতি ব্যক্তি আক্রোশটাই এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখানে ১/১১ এর নাটের গুরু বা মূলব্যক্তিটাকেই টার্গেট করেছে। অবশ্য এটাকে আমি অযাচিতও বলিনা। কারণ নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করা ইউনুস সাহেবেরও একটু শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আওয়ামী লীগ সেই কাজটাই করছে।
তবে আমাকে ঠিক এই মুহুর্তে যা সবচেয়ে বেশি অবাক করছে তা হচ্ছে 'ড. ইউনুস' বিষয়ে বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আচরণ ও বিবৃতিগুলো। যে দলের একজন এক নম্বর যুগ্ম-মহাসচিবকে ইউনুস সাহেবের চ্যালারা মেরে ল্যংড়া করে দিয়েছে, যে দলের চেয়ারম্যান থেকে শুরু প্রায় সব শীর্ষ নেতাদেরকে ইউনুস সাহেবের শীষ্যরা জেলের ভাত খাইয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে যে দলের বিপর্যয় ঘটিয়েছেন (তাদের ভাষায়), সে দলের নেতারাই এখন ইউনুস প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সন্মানী ব্যক্তির এ অসন্মান তাঁরা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রীর কথায় মনে হয় তিনি যেন তার ছেলের পঙ্গুত্বের বেদনার চাইতেও ইউনুস সাহেবের প্রতি সরকারের আক্রোশে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।
ঠিক আছে, ধরে নিলাম আমাদের মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী অনেক উদার। সে কারণে তিনি ইউনুস সাহেবের পূর্বের সব আচরণ ভুলে গিয়ে তার সন্মানটা টিকিয়ে রাখার জন্য যথাসাধ্য করছেন। হ্যা, একজন উদার মানুষ হিসেবে তিনি তা করতেই পারেন। কিন্তু একটি ইসলাম ভাবাপন্ন দলের নেত্রী হিসেবে কি তিনি তা করতে পারেন? ইসলামের নবী নাকি মদিনার সুদখোরদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন একজন বিশ্বসেরা সুদখোর, মহাজনের সন্মান তিনি কোন ইসলামের খাতিরে রক্ষা করছেন?
মাননীয় নেত্রী, ইউনুস সাহেবের সন্মানের প্রতি যদি আপনার এতোই দরদ থাকে তাহলে আপনার নিজের পদটাই তাঁকে উৎসর্গ করেন না কেন? এতে ওনার প্রতি সন্মান প্রদর্শণের পাশাপাশি তার একটা দীর্ঘদিনের খায়েশও পূর্ণ হয়। কারণ ওনারতো খুব শখ ছিল রাজনৈতিক দল গড়ার, রাজনৈতিক দলের নেতা হয়ে দেশের প্রধান নির্বাহী হওয়ার। কেবলমাত্র আপনার পদটির মাধ্যমেইতো তিনি তা ভবিষ্যতে অর্জন করতে পারেন। অবশ্য যদি আপনার নিজের পদটা ছাড়তে খুব কষ্ট হয় তাহলে আপনার দলের মহাসচিবের পদটা কিন্তু খুব নিশ্চিন্তেই তাঁকে দিতে পারেন। কারণ মদখোর, বৃদ্ধ, সর্বোপরি পরপারের দোয়ারে বসে থাকা খোন্দকার সাহেবের চাইতে ইউনুস সাহেব যে খুব একটা খারাপ পারফর্মেন্স দেখাইবেন না তা হলফ করেই বলা যায়।