বাবাঃ জানো! ছোট বেলায় ঈদের দিন আমরা অনেক মজা করতাম! রোজা শুরু হতেই দিন গোনা শুরু করতাম ঈদের আর ক’দিন বাকি, উত্তেজনায় তো আগের দিন রাতে ঘুমই হতো না! সুর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠতাম, তারপরও দেখতাম মা আরো সকালে উঠে ঘর-উঠান ঝাড়ু দিয়ে সেমাই রান্না শুরু করে দিয়েছে।
ছেলেঃ আমার কাছেও ঈদের দিনটা অনেক আনন্দের। আমিও খুশিতে রাতে ঘুমুতে পারি না, কিন্তু সকাল বেলা উঠেতো দেখি তোমরা ঘুমাচ্ছো!
বাবাঃ হু! আমরা আপন-চাচতো মিলে প্রায় ১০/১২ জন এক সাথে দল বেঁধে চিত্রা নদীতে গোছল করতে যেতাম। যদিও নদীটা কাঁদা আর কচুরীপানায় ভর্তি ছিল, তারপরও সেখানে দল বেধে ঝাপাঝাপি করতে কি যে ভাল লাগত!
ছেলেঃ ছি! তোমাদের গায়ে ময়লা লেগে যেত না? আমিতো বাথরুমে বাথটাবের পরিষ্কার পানিতে গোছল করি।
বাবাঃ ঈদের দিন নতুন বাসনা (সুগন্ধি) সাবান দিয়ে গোছল করা ছিল আরেক মজার জিনিষ! কার সাবানে কার শরীর বেশী সুগন্ধি করেছে তার প্রতিযোগীতা হত।
ছেলেঃ হি হি! তোমরা কি শুধু ঈদের দিন সাবান দিয়ে গোছল করতে! অন্য দিন ---? আমি তো প্রতিদিনই সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোছল করি। ঈদের দিন আবার নতুন করে সাবান বের করতে হবে কেন, আমাদের বাথরুমে তো সবসময়ই সাবান থাকে।
বাবাঃ এরপর বাড়ি এসে ঈদের নতুন জামা পরতাম! সব ঈদে সব কিছু নতুন হতো না, জামা বা প্যান্ট একটা নতুন হলেইতো হলো! অবশ্য পূরাণটা মা ভাল করে পরিষ্কার করে দিতেন আর আব্বা বাজার থেকে তা স্ত্রী করে আনতেন।
ছেলেঃ কি বলো! তোমরা ঈদের দিন পুরাণ কাপড় পরতে! আমিতো প্রতি ঈদে ৮/১০ সেট করে ড্রেস পাই, এক ঘন্টা পরপর চেঞ্জ করেও শেষ করতে পারিনা। অবশ্য এবার মাত্র ৫ সেট ড্রেস হয়েছে। দেশ থেকে আমার জন্য অনেকেই ড্রেস পাঠিয়েছে কিন্তু ডাকে আসতে দেরি হচ্ছে, ওগুলো ঈদের পরে পাব।
বাবাঃ পাড়ার সবাই মিলে একসাথে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। খোলা মাঠে নামাজ হতো তাই সাথে করে পাটি, জায়নামাজ, ছাতা নিতে হত।
ছেলেঃ আমার অতসব ঝামেলা নেই, আমরাতো এসি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ি।
বাবাঃ নামাজ থেকে ফিরে মা-বাবা, দাদা-দাদী, সব চাচা-চাচী, ফুফা-ফুফুদের সালাম করতে করতে পিঠ ব্যাথা হয়ে যেত, অবশ্য সালামীর লোভও কম ছিল না!
ছেলেঃ আমি অত মানূষ কোথায় পাব! আমার সবাই তো দেশে থাকে, অবশ্য মাকে সালাম করেই যত টাকা পাই তা তোমার সবার কাছ থেকে পাওয়া টাকার চেয়ে অনেকগুন বেশী।
বাবাঃ ঈদের দিন গ্রামের সবাই আমাদের বাসায় গ্রুপে গ্রুপে খেতে আসত। এইদিন প্রতিবেশী গরিব মানুষদেরও অনেক যত্ন করে খাওয়ানো হতো।
ছেলেঃ আমরা এখানে গরীব মানূষ কোথায় পাব, এখানেতো সবাই বড়লোক, বলতে গেলে আমরাই এদেশের গরীব মানুষ।
বাবাঃ সিন্নি সেমাই খেয়ে দে ছুট! যত খুশি মজা করো! কেও কিছু বলতো না। বছরের শুধু এই দু’টা দিনই মার্বেল খেলার পারমিশন ছিল।
ছেলেঃ হু্মম! নামাজ পড়েইতো তুমি চলে যাবে ল্যাব আর মা যাবে রান্না ঘরে, আমি কার সাথে বাইরে যাব? আমি বসে বসে কম্পিউটারে গেম খেলবো, যতক্ষন ইচ্ছা খেলা যাবে, আজ মা কিছু বলবে না। অবশ্য, সামনের রবিবার (বন্ধের দিন) আমাদের এখানে ঈদের অনুষ্ঠান হবে। ঐ দিন সব বাংগালীরা মিলে খুব মজা করব!
আপনাদের কি মত? ছেলেবেলার ঈদের আনন্দ কারটা বেশি?? আমার না আমার ছেলের???
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২২