(কিছুদিন আগে আমার গাড়ি-পাগল পোলা’কে Alphabet শেখানো বিষয়ে এই পোষ্টটি দিয়েছিলাম; অনেকে তাদের পিচ্চি’দের জন্য বইটার মূলকপি নিয়েছিলেন আমার কাছ থেকে। বেশকিছু সংযোজন সহ বইটি ফাইনাল করলাম আজ, আবার সবার সাথে শেয়ার করলাম)
আমার ৩ বছরের ছেলে রাদিল, গাড়ি পছন্দ অসম্ভব রকমের। অধিকংশ ছেলে বাচ্চা’ই সম্ভবত গাড়ি পছন্দ করে, কিন্তু আমারটার অতিরিক্ত রকমের। তার গাড়ির যন্ত্রনায় আমরা মুটামুটি অতিষ্ট, দোকানে যেয়ে শান্তি নেই প্রতিবারই তাকে কোন না কোন গাড়ি কিনে দিতে হবে, বাসায় তার গাড়ির যন্ত্রনায় পা ফেলার উপায় নেই, বিছানায় শুতে গেলে পিঠের নিচে তার গাড়ি; আর হাতে সব সময় কোন না কোন গাড়ি তো আছেই। প্রতিরাতে তাকে গাড়ির গল্প না বললে ঘুমাবে না; সে কোন গল্প বলতে গেলে দুই-তিন কথার পরে গাড়িকে টেনে আনবেই।
তখন ওর বয়স ২ বছর, একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, সবার সাথে ও মোনাজাত ধরেছে। হুজুর ইহলোক-পরলোক এর শান্তির জন্য আল্লাহুর কাছে বিভিন্ন জিনিস চাচ্ছেন, সবাই আমরা আমিন্ আমিন্ বলছি। হঠাৎ ও জোরে বলে ঊঠেছে "আল্লাহ গাড়ি দাও"। সবার তো হাসিতে দম ফাটা অবস্থা, তাড়াতাড়ি হুজুর মোনাজাত শেষ করে সম্মান বাচালেন।
গাড়ির প্রতি তার বিশাল মমতা, কখনও গাড়ি ভাঙ্গে না, এমন কি টিভিতে গাড়ি এক্সিডেন্টের কোন ভিডিও দেখলে সে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে। আমরাও তাকে এটা নিয়ে বাধা দিইনা, বরং সাধ্যমত তাল দিয়ে যাই; দেখি কত দিন এ মোহ থাকে! কিন্তু কমার কোন লক্ষন দেখছি না, বরং ইদানিং আর এক ধাপ উন্নতি হয়েছে, বাইরের গাড়িতে তার আর মন ভরছে না, সে নিজেকেই এখন গাড়ি ভাবতে শুরু করেছে। কখনও এম্বুলেন্স হয়ে প্যাঁ-পুঁ করে অসুস্থ মানুষ নিয়ে যাচ্ছে, কখনও ট্রাক হয়ে মালপত্র টানছে, আবার কখনও পুলিশ-কার হয়ে আমাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর এসে বলবে, “বাবা একটু তেল দাওতো, গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেছে”, আমি পেটে একটু ভুসভুস করে তেল দিয়ে দেয়, আবার চলতে শুরু করে। পানির পিপাসা লাগলে এখন সে বলে গাড়িটা তেল খাবে, তেল (পানি) দাও।, ভাত খাওয়ানো নিয়ে বাহানা করলে যদি বলা হয়, গোমী (garbage) ট্রাক এই গোমিটা খেয়ে ফেলো তো, সাথে সাথে মুখ হা করে গোমী (খাবার) খাবে।
তার একখানা যন্ত্র আছে... সেটা যখন স্বাভাবিক থাকে তখন সেটা ‘রকেট’, যখন বের হয় তখন সেটা ‘সিংকাঞ্ছেন’ আর যখন সেটা থেকে পানি বের হয় তখন সেটা ‘ফায়ার ট্রাক’ (সরি, কিঞ্চিত ১৮+)
সেদিন আমি তাকে গোছল করানোর জন্য মাথায় পানি ঢালতে গেছি, সে আমাকে বল্ল একটু থাম, তারপর মাথা থেকে কি যেন খোলার অভিনয় করে পাশে রাখল। আমি বললাম কি রাখলে? বল্ল, পুলিশের গাড়ির সিগনালটা খুলে রাখলাম, ভিজে যাবে তো তাই! এমন অনেক অনেক কাহিনী...
যাহোক আসল কথায় আসি, ইদানিং তার মা তাকে দু-একটা অক্ষর চেনানোর চেষ্টা করছে। এমনিতেই ডে-কেয়ারে জাপানীজদের সাথে থেকে থেকে জাপানীজ শিখছে! তাই ঘরে কিছু বাংলা-ইংরেজী তামিল দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ওর মা বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে, নেচে, গেয়ে বলে, বল বাবাঃ অ, আ, ক, খ... A, B, C, D… আর ছেলে বলতে থাকে প্যাঁ পুঁ... ভুঁ ভুঁ...পিঁক পিঁক...। ছেলের ভবিষৎ নিয়ে ছেলের মা খুবই টেনশিত! হায় হায় আমার ছেলেটা কি অশিক্ষিতই থেকে যাবে?? সেদিন আমাকে বলল, এক কাজ কর, ওকে গাড়ি দিয়ে একটা alphabet শেখার বই বানিয়ে দাও। কি আর করা, গুগল মামার করুনায় আর ল্যাবের প্রিণ্টারের সহায়তায় দুজন মিলে একটা বই বানিয়ে ফেললাম।
হ্যাঁ, কাজে দিয়েছে... বই পড়ানোর জন্য এখন আর তাকে ডাকতে হয় না, সারাক্ষন সেটা বোগলে নিয়ে ঘুরে, রাতে মাথার কাছে নিয়ে শোয়, এই ক’দিনের মধ্যেই সে সব গুলো অক্ষর শিখে গেছে। কোথাও কিছু লেখা দেখলে সেটা পড়তে চেষ্টা করে...
সবাই কে THANKS !! ‘T’ for Train, ‘H’ for helicopter, ‘A’ for ambulance… [img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/radil_1285613155_1-1.jpg
(কৃতজ্ঞতাঃ গত পোষ্টে যারা মন্তব্য করেছেন; বিশেষ করে ব্লগার ‘অরণ্য সৌভিক’, যার কিছু সাজেশন এই পর্বে যুক্ত করেছি)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:১২