বিশ্বে pet হিসাবে সবচেয়ে বেশী পালিত হয় সম্ভবত কুকুর। সেই আদিম কাল থেকে কুকুরকে মানুষ বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে পালন করে আসছে। ধর্মের বিধি নিষেধ থাকার কারনে মুসলিম দেশে কুকুর পালনের তেমন প্রচলন না থাকলেও বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে রঙ বেরঙের কুকুর পালনের প্রচলন রয়েছে। অন্য কোন কুকুর প্রেমিক জাতিকে তেমন কাছ থেকে আমার দেখা হয়নি, তবে জাপানীজদের কুকুর প্রীতি একটু ভিন্ন মাত্রার।
জাপানে এমন অসংখ্য ফ্যামিলি আছে যাদের ছেলেমেয়ে নেই বা কখনই বিয়ে করেনি কিন্তু কুকুর ছাড়া ফ্যামিলি এখানে খুজে পাওয়া দুষ্কর। বরং লক্ষ লক্ষ ফ্যালিলি পাওয়া যাবে যার সদস্য দুইটি প্রানী; একজন মানুষ আর তার পোষা কুকুর। অনেকের একাধিক কুকুরও আছে। জাপানিজরা তাদের কুকুর কে কতটা যত্ন করে সেটা বুঝানোর জন্য একটা উক্তিই মনে হয় যথেষ্ট, “ওরা কুকুরকে নিজেদের সন্তানের মত মনে করে এবং সন্তানের মত আগলে রাখে”। জাপানে আশার আগে
আমার এক জাপান ফেরত কলিগ সাবধান করে দিয়েছিল জাপানে সাইকেল চালাতে সাবধান থাকবেন; কোন বাচ্চার গায়ের উপর সাইকেল উঠিয়ে দিলে মাফ পেতে পারেন কিন্তু কারো কুকুরের উপর সাইকেল উঠিয়ে দিলে কিন্তু রক্ষা নেই!
প্রায় দিন সকাল বিকালে দেখা যায় বুড়া বুড়ি গুলো তাদের সঙ্গি কুকুর ছানা কে নিয়ে হাটতে বের হয়েছেন, হাতে একটা প্যান! কুকুর যদি কোথাও হাগু করে দেয় সাথে সাথে সেটা তুলে নেয় যাতে রাস্তা নোংরা না হয়। চলতি পথে আবার অন্য আরেকজনের কুকুরের সাথে দেখা হলে কুকুরে কুকুরে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়; তা দেখে তাদের মালিকগন যারপরনাই খুশি হন এবং তারাও তাদের কুকুরের নানা প্রশংশায় পঞ্চমুখ হন। মনে করুন, আমাদের দেশে দুই বাচ্চাকে নিয়ে তাদের মা’রা হাটতে বের হয়ে পথে দেখা হয়ে গেলে যা হয় আর কি!
আপনি কুকুর যতই অপছন্দ করেন বা ভয় পান এদের সামনে তা প্রকাশ করতে যাবেন না; খুব মাইন্ড করবে! আপনার সামনে আপনার সন্তানকে কেও ঘৃণা করলে আপনার কি অনুভুতি হয় ভেবে দেখেন! একবার এক মজার ঘটনা হয়েছেঃ বাসার পাশে একটা পার্কে একদিন ছেলে আর তার মা কে নিয়ে ঘুরতে গেছি। ওরা দুজনেই কুকুর খুব ভয় পায়। এক বুড়াও আসছে তার দুই কুকুর নিয়ে; পার্ক একটু ফাকা পেয়ে দুটোকেই ছেড়ে দিয়েছে খেলা করার জন্য। কিছুক্ষন পর একটা এসে আমার ছেলের সাথে খাতির করতে গেছে; ছেলে তো ভয়ে চিৎকার! আমি ছুটে গেছি ছেলেকে বাঁচাতে। ইতিমধ্যে অন্য টা চলে গেছে ছেলের মার সাথে গল্প করতে; তিনিও ভয়ে চীৎকার দিয়ে ছুট! কুকুর চিন্তা করছে সে তার সাথে খেলছে, সেও পিছে পিছে ছুট! আমি একসাথে দুই জায়গা কেমনে সামলায়! হঠাত বুড়াকে জোরে একটা ধমক দিলাম, “ওই মিয়া আপনার কুত্তা সামলান!!”
বুঝতে পেরেছেন ঘটনাটা?? রাগের মাথায় আমি বুড়াকে বাংলায় ধমক দিয়ে ফেলেছি!
কুকুর প্রীতি নিয়ে অনেক কথা হলো; এবার আসি এদের আদিম নিশংসতা বিষয়ে ...
তার আগে ছোট্ট একটু বিজ্ঞাপন বিরতী, চলে যাবেন না যেন!!!
----------------------------------------------------------
সাধারণ জাপানিজদের আচার ব্যবহার নিয়ে লেখা পূর্বের ব্লগ গূলোঃ
জাপানিজঃ আজব এক জাতি !!!
গাড়ীর হর্ন ঃ জাপানীজ স্টাইল !!!
নিরবাচনী প্রচারণা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৩)
ময়লা ফেলা ঃ জাপানীজ স্টাইল (৪)
জাপানীজ ওন্সেন বা গন গোছল (৫)
জাপানিজদের ধর্ম পালন (৬)
-------------------------------------------------------------
বিজ্ঞাপন বিরতীর পরে আবার আসি মূল আলচনায়; সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ!
হুমায়ূন আহমেদের একটা লেখায় পড়েছিলাম, আগে জাপানিজরা তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে কাধে করে নিয়ে দূরে পাহাড়ে ফেলে আসত। সেখানে তারা না খেতে পেরে, ঠান্ডায় বা জন্তুর আক্রমনে মারা পড়ত। সাধারণত বাড়ীর বড় ছেলেদের এই কাজ করতে হতো; ছেলে যখন বাবা-মা’কে কাধে করে পাহাড়ে উঠত তখন বাবা-মা’র হাতে থাকা ছোট্ট একটা লাঠী দিয়ে ছেলেকে আস্তে আস্তে বাড়ি মারত, আর কিছু একটা শ্লোক পড়ত। এখন আধুনিক জাপানে সেই আদিম প্রথা আর নেই। কিন্তু তার আধুনিক সংস্করন রয়ে গেছে! এই যে কুকুর গুলোকে এরা জান দিয়ে সন্তানের মত লালন পালন করে, সেই কুকুর গুলো যখন বুড়া হয়ে যায় বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় বা কেও নতুন কোন মডেলের কুকুর কিনতে চায় ... মোট কথা কুকুরের প্রয়োজন ফুরালে সেগুলেকে ওরা পাহাড়ে বরফের মধ্যে ফেলে রেখে আসে বা সিটি অফিসের কুকুর নিধন সেন্টারে দিয়ে আসে। সেখানে একসাথে অনেক কুকুর জড় করে গ্যাস চেম্বারে নিয়ে মারা হয়। অবলা কুকুর মারার সেই দৃশ্য দেখলে যে কোন হৃদয়বান মানুষের বুক কেঁপে উঠবে! ইউটিউবে অনেক গুলো ভিডিও আছে, আমি এই কমন প্লাটফরমে সেটা আর দিলাম না; কেও ইচ্ছা করলে দেখতে পারেন। তবে নরম মনের মানুষদের সেই রিস্ক নিতে না যাওয়াই ভাল; আমি একটা ভিডিও দেখে এখনও তা মন থেকে মুছে ফেলতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




