মারগয়া লোকজনকে অর্থ বিষয়ক বুদ্ধি শুদ্ধি দেয়, সমবায় অফিস থেকে তাদেরকে ঋণ নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে বিনিময়ে কিছু টাকা নেয়। এটা তার উপার্জনের পথ। সমবায় অফিসের সামনে বটগাছের নিচে একটি ছোট বাক্স নিয়ে সে বসে। বাক্সের মধ্যে দোয়াত কলম, ঋণ নেয়ার ফরম ইত্যাদি সামগ্রী থাকে। লোকজন অর্ধবৃত্তাকারে বসে তার কথা শুনে। মারগয়ার অর্থ বিষয়ক জ্ঞানের কারণে তার চেয়ে বয়স্ক লোকেরা তাঁকে সমীহ করে চলে। মারগয়া মনে করে লোকজনের টাকা পয়সার ব্যাপারে জ্ঞান কম, তাদের যদি টাকা পয়সার জ্ঞান থাকতো তাহলে আরও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারতো। তাই সে নিজের পেশাটাকে পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করে।
বাড়ীতে তার অনুগত স্ত্রী এবং ডানপিটে ছেলে। ছেলের নাম বালু যাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। মনের মত করে লেখা পড়া করাবে, বিদেশ থেকে ডিগ্রী আনাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিত্যকার মতো সে লোকজনের সাথে কথা বলছে এমন সময় সমবায় অফিসের পিয়ন অরুল দাস এসে মারগয়াকে বলল, সমবায় অফিসের সেক্রেটারি তাকে ডাকছে। সেক্রেটারি একজন পিয়ন দিয়ে তাকে ডাকাবে এটা মারগয়ার আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত করলো। সে অরুল দাসকে বলল, প্রয়োজন হলে সেক্রেটারি নিজে এসে তার সাথে কথা বলবে। এতে করে অরুল দাস বাঁকা হাসি হাসল এবং বলল, সেক্রেটারি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সে যদি মারগয়ার কথা শুনে তাহলে তার ক্ষতি হবে। উত্তরে মারগয়া বলে, সেক্রেটারি বেতন-প্রাপ্ত একজন কর্মচারী, আর সে হচ্ছে সমবায়ের শেয়ার হোল্ডার। সেক্রেটারি তাকে হুকুম করতে পারে না। এতে অরুল দাস তাকে বলে, জান সেক্রেটারি কত বেতন পায়? শত বছরেও তুমি অত টাকা চোখে দেখতে পাবে না। উত্তরে মারগয়া বলে, সেক্রেটারি হচ্ছে বেতন-ভুগি কর্মচারী, আর এমনও হতে পারে ভবিষ্যতে আমি তার চেয়ে বেশী টাকা উপার্জন করব। এ কথা শুনে অরুল দাস খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে চলে গেল। আশে পাশের লোকজন মারগয়াকে বলল, অরুল দাস লোকটা ভাল না। সে যেভাবে বুঝাবে সেক্রেটারি সে ভাবে চলবে। মারগয়া ক্ষেপে গিয়ে তাদেরকে বলল, তোমরা তোমাদের মূল্য বোঝ না। তোমরা হচ্ছ শেয়ার হোল্ডার আর ওরা হচ্ছে বেতন-ভুগি কর্মচারী। তাদেরকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই।