somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাঘব বোয়াল
সেই ২০০৮ সাল থকে ব্লগিং করতেছি অতিরিক্ত ঘাড় তেড়ামির কারনে আগের আইডি ব্লক খাইছি।আমার এই আইডিতে ঘাড় তেড়ামি বাদ দিয়া ব্লগিং করতেছি।

সংক্ষেপে জেনে নেয়া জাক রাখাইনদের পুর্বের ইতিহাস।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান মায়ানমারের একটি রাজ্য হলো রাখাইন। এই রাজ্যের সাবেক নাম আরাকান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত আরাকান রাজ্যটি খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোটামুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। দীর্ঘ কয়েকশ বছর ধরে উত্তর আরাকানে ‘আরাকান’ ও দক্ষিণ আরাকানে ‘চাঁদা’ নামক দুটি পৃথক স্বাধীন রাজ্য ছিলো। ত্রয়োদশ শতকে রাজ্য দুটি একত্রিত হয়ে ‘আরাকান রাষ্ট্র’ গঠিত হয়।
আরাকানের মুসলিমদের বলা হয় রোহিঙ্গা। ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে বার্মার রাজা মেং-শো-আই আরাকান আক্রমণ করেন। আরাকানের রাজা নরমেইখলা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলায় পালিয়ে এসে গৌড়ের সুলতান জালালউদ্দীন মুহাম্মদ শাহ’র কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সুলতান তাকে হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক সৈন্য দান করেন। কিন্তু তার নিজ সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি যুদ্ধে হেরে বন্দী হন বার্মারাজের কাছে। তিনি কৌশলে পালিয়ে আবার গৌড়ে আসেন। এবার সুলতান তাকে আরও সৈন্য দেন, আর দেন একজন ভালো সেনাপতি। এবার যুদ্ধে জয়ী হন নরমেইখলা, ফিরে পান রাজ্য আর স্থাপন করেন এক নতুন রাজধানী, যার নাম রাখেন রোহং। যেসব সৈন্য ও কর্মচারী নরমেইখলার সাথে গৌড় থেকে এসেছিলেন, তারা সকলেই থেকে যান এই রোহং শহরে। এদের বংশধররাই হলো রোহিঙ্গা মুসলমান। অর্থাৎ রোহিঙ্গা জাতির পূর্বপুরুষরা ছিলো এই বাংলারই মানুষ।
ব্রিটিশ শাসনামলে আরাকানকে যুক্ত করা হয় বার্মার সাথে, আর গোটা বার্মাকে করা হয় ভারত সাম্রাজ্যের একটা প্রদেশ। আজকের বার্মা তার সীমানা লাভ করেছে বৃটিশ প্রশাসনের কাছ থেকে। আর তাই আরাকান আজ বার্মার অংশ। আরাকান বরাবরই ছিলো একটি পৃথক রাজ্য। বার্মার চাইতে বরং আরাকান নানাভাবে নির্ভর করেছে বাংলাদেশের উপর। বার্মার সাথে আরাকানের একমাত্র যোগাযোগ ছিলো সমুদ্র পথে (এখন অবশ্য বিমান যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে)। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ও আরাকান রাজ্যের মধ্যে একমাত্র সীমান্ত নির্ধারণকারী বস্তু ছিলো নাফ নদী, যা অতি সহজেই পার হওয়া যেতো।
১৯৩৭ সালে বার্মা প্রদেশকে বৃটিশ সাম্রাজ্যের একটি মর্যাদা দেওয়া হয়। ব্রিটিশদের পরেই বার্মার সব বড় বড় সরকারী চাকরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য ভারতীয়রা দখল করে নেয়। অল্প সুদে টাকা খাটিয়ে অনেক ভারতীয় কম সময়ে ধনী হয়ে ওঠেন। ভারতীয়রা বার্মায় ব্যবসার জন্য গিয়ে অনেক অপকর্মও করে আসেন। এমনকি অনেক বাঙালিও বার্মার মূল ভূখণ্ডে গিয়ে অনেক অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়েন। শরৎচন্দ্রের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত‘-এর দ্বিতীয় খন্ড যারা পড়েছেন, তারা জানেন, কেন ও কেমন করে এক হিন্দু বাঙালি যুবক, বর্মী রীতিতে বিয়ে করা তার বর্মী স্ত্রীকে রংপুরে তামাক কেনার কথা বলে ফেলে দেশে পালিয়ে এসেছিলো। এরকম অনেক ঘটনাই তখন ঘটেছে বার্মায়। বর্মীদের মনে আছে অনেকদিনের ক্ষোভ ও ঘৃণা।
আর তাই মায়ানমারের জাতীয়তাবাদের মূলে যতটা রয়েছে বৃটিশ বিরোধী চেতনা, তার চেয়েও বেশি আছে ভারতীয় বহিরাগত বিরোধী মনোভাব। এখান থেকেই রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব। বৃটিশ আমলে ভারতবর্ষ হতে বার্মায় যাওয়া হিন্দু ও মুসলমানদের সাথে বার্মা সরকার আদিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলিয়ে ফেলেছে। তাই সরকার এদের সবাইকে বহিরাগত মনে করে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে খড়গহস্ত হয়েছে। অথচ বৃটিশ আমলে বার্মায় আসা বহিরাগতরা আর রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় সম্পূর্ণ আলাদা গোষ্ঠী। এমনকি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কথিত গণতন্ত্রকন্যা অং সান সু কি-ও মনে করেন যে এরা বহিরাগত।
বর্তমান রাখাইন রাজ্য বরাবরই ছিলো অভাব-অনটন, অবহেলাগ্রস্ত। এখন সেখানে নিজ দেশেরই অধিবাসীদের কসাইয়ের মতো আচরণ, অত্যাচার আর গণহত্যা শুধুই মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানী বাহিনীর বাংলাদেশের মাটিতে চালানো ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার কথা। এখন শুধুই হাওয়া বদলের অপেক্ষা। অপেক্ষা এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সমাধাণের পথ খুঁজে পাবার।
তথ্য সূত্র :
আরকানের মুসলমান : ইতিহাস ও ঐতিহ্য --
ডাঃ মুহিব উল্যাহ সিদ্দিকী
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×