somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সোনামণির লাল ফ্রক

২২ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সারাটা দিন ধরে কী যেন খুঁজছি। কী যেন। মনের অজান্তেই বারবার আলমারি খুলি আর লাগাই। কিন্তু কী যে খুঁজছি মনে করতে পারি না। কী যেন নাই...। অথচ কী একটা ছিল। অনেক সময় হয় না এ রকম? হয়তো খুব তুচ্ছ জিনিসই সেটা।
সকাল থেকেই মনটা অস্থির। ডান চক্ষু লাফাচ্ছে। পুরো দিনের মধ্যে কতবার যে আলমারিটা খুলেছি, আমার হাতও তা ঠিক করে বলতে পারবে না। হয়তো কিয়ামতের সময় পারবে, তখন তো মাথার চুল থেকে নখ অব্দি প্রত্যেকে নিজেরাই সাক্ষ্য দেবে।
রাত একটা ছুঁই ছুঁই। শুয়ে শুয়ে এত একলা আর অসহায় লাগছে নিজেকে! বুকটা থেকে থেকে দুমড়ে-মুচড়ে আসছে। বালিশ ভিজে যাচ্ছে নোনা জলে। অথচ কারণটাই আমার অজানা। ক্ষণে ক্ষণে স্মৃতিগুলো দপ করে জ্বলে উঠছে, নিভে যাচ্ছে। ইমরানকে এখন হাতের সামনে পেলে কী যে করতাম, কী যে করতাম, ওর জন্য জীবনটা আমার এভাবে তছনছ হয়ে গেল!
বিয়েটা নিজের পছন্দেই করেছিলাম। দেড় বছরের প্রেম। পরিবারের সবাই একরকম আপত্তি করেছিল। সেজভাই ইমরানদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে এসে বলেছিল, আমি ওই ফ্যামিলিতে বিয়ে সাপোর্ট করি না, তারপরও যদি করিস, সেটা তোর রেসপনসিবিলিটি। আমি একবার যে সিদ্ধান্ত নেই সেটা করেই ছাড়ি। অতএব বিয়েটা করলাম। কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল তা বিয়ের পরদিনই টের পেলাম। কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা ছিল। প্রায় সারারাত লাইট জ্বালিয়ে পড়েছি। ইমরান তাই ভালোমতো ঘুমাতে পারেনি। দুপুরে পরীক্ষা। সকালে উঠেও অনেকক্ষণ পড়লাম। বিয়ের পর আমরা মহাখালীতে একটা সাবলেটে উঠি, ওর পরিচিত এক কাজিনের সঙ্গে শেয়ার করে। মহাখালী থেকে গার্হস্থ্য কলেজে কীভাবে কোন বাসে যেতে হয়, জানি না। আমাকে আজকে একটু কলেজে দিয়ে আসবে? রাস্তা চিনি না তো। উত্তরে ও খুব বিরক্তি আর রাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, বালের পরীক্ষা দিতে যাবা, যাও, আমি যাব কেন? বিয়ের পরদিনই প্রেমিক স্বামীর কাছ থেকে এমন ব্যবহার আর ভাষা শুনে আমার মনোভাব কী হতে পারে তা আপনারা বুঝতেই পারছেন। ওর কাজিনের বউ মানে লিনাভাবি এসে ওকে ধমক দিলেন, কী ইমরান, এ কেমন কথা, বউয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে না তো বিয়ে করেছ কেন? মেয়েটা মহাখালী থেকেছে কখনও? সঙ্গে যেতে না পার, একটু বাসে উঠিয়ে দিয়ে আস।
ইমরান গজগজ করতে করতে শার্ট গায়ে চড়ায়। সিঁড়িতে নেমে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা আমাকে একটি চড় বসিয়ে দেয়। মুহূর্তে পৃথিবীটা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। গালে হাত দিয়ে আমি হতবাক-চোখে তাকিয়ে ছিলাম। ও নেমে যাচ্ছে আর আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখে আবার গজরায়, দাঁড়িয়ে আছিস কেন, পরীক্ষা দিতে যাবি না? আয়।
এক-দুইটা দিনের ফারাকে মানুষ এত বদলে যেতে পারে! পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে সিদ্ধান্ত নিলাম, চলে যাব। লিনাভাবি তখন বোঝালেন, দেখো, ছেলেরা একটু অমনই হয়। সংসার করতে গেলে মেয়েদের অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হয়। ওর এ রকম আচরণ তো তুমি আর কখনও দেখোনি, তাই না? সারা রাত না ঘুমিয়ে ইমরানের মেজাজ হয়তো ঠিক ছিল না, বুঝতে পারেনি। ভাবির কথা মেনে নিলাম। ছেলেরা একটু অমন হয়-ই। তাছাড়া বিয়ের দু'দিন যেতে না যেতে কোন মুখে আমি বাড়ি ফিরে যাব? আবার ছোটপা মানে হাসি আপাও একটা বড় ফ্যাক্টর। পরপর দু'দুটো বোনের যদি একই অবস্থা হয়, লোকে বলবে কী? _আমরা কুফা, স্বামীর ঘর করতে পারি না!
ছোটপার অ্যারেঞ্জড বিয়ে ছিল। ছেলে এবং ছেলের পরিবার_ দু-ই বেশ ভালো। ছেলে তার বড়ভাইয়ের সঙ্গে থাকত। দেবর-ভাবির একবারে গলায় গলায় পিরিত। হবে না? তার শাশুড়ি ছোট ছেলেকে দশ বছরের রেখে মারা যায়। মায়ের আদরটা তো তেমন পায়নি। সন্দেহ হলেও প্রথম প্রথম তাই ছোটপা বিষয়টাকে আমল দিত না। বিয়ের কয়েক মাস পরের ঘটনা সেটা। ছোটপার গোসলে বেশ সময় লাগে। টয়লেট ও গোসল_ দু-ই সে একসঙ্গে সারে। সেদিন টয়লেট সেরে নতুন কেনা শ্যাম্পুটা নিতে মাঝখানে বেরিয়েছে। আবার ঢোকার আগে, ড্রইংরুমে উঁকি দেয়, স্বামীধনটি সেখানে পত্রিকা পড়ছিল। নেই। ভাবির ঘরের দরজা বন্ধ। কোথায় তাহলে? বুকে দ্রুতলয়ে ধিড়িম ধিড়িম দুরমুশ পড়তে শুরু করে। ছোটপা ছুটে গিয়ে বন্ধ দরজায় কান পাতে। কথার ফিসফিসানি। পাগলের মতো সে মেঝেতে শুয়ে পড়ে দরজার ফাঁকে কান রাখে। ভেসে আসে শীৎকার_ আহ।
পরের ঘটনা, ছোটপা বাড়িতে চলে আসে এবং পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিভোর্স দেয়।
এই যদি করবি তাহলে কেন বিয়ে করেছিস? কেন আরেকজনের জীবনটাকে নষ্ট করলি? ছোটপা সে বদমাশটাকে এ প্রশ্ন করেছিল।
সেই জন্যেই তো বিয়েটা করা, যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। সঙ্গে সে এও জানিয়ে দিয়েছিল, বউকে সে ছাড়তে পারবে কিন্তু ভাবি ছাড়া তার চলবে না।
এসব কিছু বিবেচনা করে সেদিন ইচ্ছে সত্ত্বেও চলে আসতে পারিনি। তাও বেশিদিন পারলাম না, দেড় বছর। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু না, ও ঠিক হওয়ার নয়। গায়ে হাত তোলা ওর খাসলত। এতে ইমরানের ফ্যামিলির প্রভাবও আছে। ওর বাবা-মায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক নেই। ইমরান যখন ছোট তখন থেকেই তারা আলাদা ঘরে ঘুমানো। ঈদের সময় খুলনায় ওদের বাড়িতে যেতাম। ওর মায়ের একটা অদ্ভুত আচরণে খুবই অবাক হয়েছিলাম। রাতে আমরা দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে পারব না। এটাকে কি ইডিপাস কমপেল্গক্স বলব?
ইমরানও ছিল, একেবারে ফ্যামিলিপ্রাণ। মা-বোনরা যা বলত তাই বিশ্বাস করত। বিয়েটা ইমরানের দিক থেকেও যেহেতু ছিল নিজের পছন্দের এজন্য ওর পরিবার আমাকে সহজভাবে নিতে পারেনি। তাদের ধারণা, তাদের ছেলে আরও বড় ঘরে, আরও ভালো মেয়ে পেত, আমি ডাইনি মাগিই ওর মাথাটা খেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সবসময় ওকে বিষিয়ে তুলতে তাই তারা চেষ্টায় খুঁত রাখেনি।
এখন আমি কোনো পুরুষকেই আর বিশ্বাস করি না, এমনকি আমার বাবাকেও না। সব পুরুষই এক। বিয়ের পর ধীরে ধীরে টের পেয়েছিলাম, ইমরান কার সঙ্গে যেন গোপনে কথা বলে, হয়তো আমার অগোচরে দেখাও করত। সংখ্যাটা একাধিক হওয়া আশ্চর্য নয়। প্রমাণ ছাড়া আমার কোনো কিছুতে বিশ্বাস নেই। রাতে ইমরান যখন ঘরে তখন বাথরুমে গিয়ে আমার মোবাইলের সিম চেঞ্জ করে ওর সঙ্গে কথা বলা শুরু করি। আমার গলা তো ও ধরতেই পারেনি বরং কয়েকদিনের মধ্যেই আমাকে প্রেম নিবেদন করে বাইরে দেখা করার জন্য ভজাতে থাকে। ওর ল্যাপটপ ছিল, অনেক রাত অব্দি তাতে কাজ করত। ও বাথরুমে গেলে আমি ওটায় গুঁতোগুঁতি করতে গিয়ে দেখতাম, প্রচুর মেয়ের সঙ্গে চ্যাট করছে। আর কথার কী ছিরি_ সেক্সুয়াল তো আছেই। এসব দেখে আমার বুকের ভেতর আগুন ধরে যেত। আচ্ছা, পুরুষ মানেই কি বহুগামী? অথচ সেপারেশনের এতদিন পরও আমি তো পারলাম না মনের মধ্যে অন্য কাউকে স্থান দিতে।
ইমরানকে প্রচণ্ড ঘৃণা করি ঠিকই, একইভাবে ভালোও বাসি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, ইস, ওকে নিয়ে যদি দূরে কোথাও, দেশের বাইরে চলে যেতে পারতাম! যেখানে ওর পরিবার-আত্মীয় লোকজন-অন্যান্য কিছুর হাত থেকে বাঁচা যাবে। ওর যে সবই খারাপ তা তো না, কিছু ভালো গুণও আছে। আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। মাথা ব্যথায় দুনিয়াটা যন্ত্রণাকর হয়ে উঠলে ও আমার মাথা টিপে দিত। অসুস্থ হলে সেবা করত; তখন সকালে নাশতা না বানাতে পারলে কিছু বলত না। দু'জনে বাইরে কোথাও বের হলে রাস্তায় লোকজন যদি আমার দিকে অশল্গীলভাবে তাকাত ও খেঁকিয়ে উঠত, পারে তো মারামারি লাগিয়ে দিত। আমাদের কত সুখের স্মৃতি আছে। ছুটির দিনে সন্ধ্যায় দু'জনে খেতে বের হতাম। আমাদের পছন্দ ছিল কেএফসির চিকেন ফ্রাই আর কফি।
তবে লিনাভাবির মেয়ে বুনি্নটাকে খুব মিস করি। ইমরানকে ছেড়ে আসার চেয়েও বেশি কষ্ট হয়েছে ওর জন্য। বাচ্চাদের সঙ্গে আমি খুব বাচ্চামি করতে পারি কি-না ও বাসায় যাওয়ার কয়েকদিনেই আমি তাই ওর জানি-বন্ধু হয়ে যাই। সারাক্ষণ ওর সঙ্গে খেলা, দুষ্টুমি, এটা-সেটা নিয়েই থাকতাম। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, রাতেও বুনি্ন আমার কাছে ঘুমানোর জন্য চলে আসত। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে, কোনোদিন গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে তবে ছাড়া পেতাম। আহারে সোনাটা, না জানি তোর পরানটা এখন কেমন করে!
ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম। আমি না কী যেন খুঁজছি? গতকাল ছোটপা চলে যাওয়ার পর থেকেই খুঁজছি। আমরা অনেক ভাই-বোন। সবাই যার যার সংসার নিয়ে আছে। কেবল সেজভাই আম্মা-আব্বা ও আমাদের দু'বোনকে নিয়ে থাকে। সে অফিস থেকে ফ্ল্যাট পেয়েছে। আম্মা-আব্বা সবসময় যে এখানে থাকে তা না, আজ এ বোনের বাড়ি, কাল ও ভাইয়ের বাড়ি_ এ রকম ঘোরাঘুরির ভেতর আছে। আমরা স্বামীহারা দু'বোন কোথায় আর যাব, এখানেই থাকি। কাল ছোটপার সঙ্গে সেজভাইর একটা বিষয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। সেজভাই ফট করে বলে বসে, দেখেন, এটা আমার বাসা, এখানে থাকতে হলে আমার কথামতো চলতে হবে, আপনার যদি না পোষায় যেখানে খুশি যেতে পারেন। এই কথার পর ছোটপা রাগে ক্ষোভে ঘরে ঢুকে ধুপধাপ সুটকেস নামায়। ওয়্যারড্রোব-আলমারি খুলে তার কাপড়-চোপড় যা পেয়েছে সুটকেসে ঢোকায়। তারপর বিশ-পঁচিশ মিনিটের মধ্যে ঘটঘটিয়ে বের হয়ে যায়_ বড়আপার বাসায়।
আচ্ছা, ছোটপার কাপড়-চোপড়ের সঙ্গে আমার দু'একটা চলে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। আমার কাপড়-চোপড়... ফ্রক...। আরে, মনে পড়েছে! আমি লাফিয়ে উঠে পাগলের মতো আলমারির সেই র‌্যাকটা খুঁজি। আমার সোনামণির জামাটা যেখানে রাখা ছিল। নেই! ও আলল্গাহ! ওটা তাহলে ছোটপা নিয়ে গেল! চার বছর ধরে আমার সোনাকে আগলে আছি!
কলেজে তখন ফার্স্ট ইয়ারে। নিউমার্কেট গিয়েছি স্ক্রাব কিনতে। একটা দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে একটা ফ্রকে চোখ আটকে গেল। লাল টকটকে, কারচুপির কাজ করা। কী সুইট দেখতে! দু'বছরের বাচ্চার ফ্রকটা আমি নেড়েচেড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। হুড়মুড় করে একটা কষ্টও বুকে বিঁধল। আমার কেন একটা বাবু নেই? একটা ছোট্ট সোনামণি থাকলে এই সুন্দর ফ্রকটা পরাতে পারতাম। ফ্রকটা রেখে যেতে খারাপ লাগছিল। একদিন তো বাবু হবেই। কিনে ফেললাম। ফ্রকের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা ছোট্ট প্রাণ নিয়ে যাচ্ছি। এত ভালো লাগছিল, পৃথিবীতে এ আনন্দ আগে কখনও অনুভব করিনি, যেন আমার সোনামণিকে নিয়েই হাঁটছি। ছোট্ট দু'পা টেনে টেনে এক হাতে আমার কড়ে আঙুল ধরে আমার মা হাঁটছে। মাথাটা ক্ষণে ক্ষণে তুমুল কৌতূহলে এদিক-ওদিক ঘোরাচ্ছে। আধোবোলে বলছে, মা মা, উ-ইটা নিবো...। আমার চোখে পানি এসে যায়।
আমার বিয়ে হয়েছে তারও এক বছর বাদে। অবশ্য ফ্রকটার কথা ছোটপা ছাড়া কাউকে বলিনি। পৃথিবীতে ওকেই যে সবচে' বেশি ভালোবাসি। ইমরানের বাসা থেকে পুরোপুরি চলে আসার পর একদিন ছোটপাকে বললাম, আমার তো অনিশ্চিত, তোমার বাবু হলে ফ্রকটা ওকেই পরাব। ছোটপার ততদিনে একটা অ্যাফেয়ার হয়েছে এবং শিগগিরই তাদের বিয়ে হচ্ছে। ছেলেটাকে আগের ঘটনা সব খুলে বলার পরও রাজি। শুধু সতর্ক করেছে, এ কথা তার পরিবার যাতে ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে। পরে যখন তাদের বিয়ে হয়, আমাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, আমার হাজব্যান্ড বিদেশে, তাই ভাইয়ের বাসায় থাকি। অবশ্য চেনা-পরিচিতদের কাছে একটা মিথ্যার বলয় আমাকে মেইনটেইন করতেই হয়। দেখা হলে তারা স্বামী, সংসারের খোঁজখবর জিজ্ঞেস করে। আমিও হু হা করে কাটিয়ে দিই।
কপালে যে আমার কী আছে কে জানে। দশ মাসের মাথায় কিছুদিন আগে পারিবারিকভাবে ইমরানের সঙ্গে ডিভোর্স হলো। আরও কিছুদিন এটাকে ঝুলিয়ে ওকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের চাপের কারণে দিতে হলো। তবে ভোটার আইডিতে ইমরান এখনও আমার স্বামী। কী অদ্ভুত নিয়ম! আমি আবার বিয়ে করলে এটা পাল্টে নতুন স্বামীর তকত লাগাতে হবে। কেন? ছেলেদের মতো মেয়েদের বেলায়ও বাবার নাম লিখলে অসুবিধা কী?
ছোটপা চলে যাওয়াতে একটা মানুষ রইল না যার সঙ্গে সব শেয়ার করা যায়, মন খুলে দু'চার কথা বলা যায়। ফ্রকটা থাকলেও ভাবতাম, যাক আমার বাবুটা তো সঙ্গে আছে। শয়তানটা সেটাও নিয়ে গেল। না হয় বলেছিলাম, তোর বাবু হলে এটা ওকে পরাব। তাই বলে নিয়ে যেতে হবে? এত ছোট মন!
আচ্ছা, ছোটপা কি ফ্রকটা ইচ্ছে করে নিয়েছে নাকি কাপড়ের ভেতর ওটা চলে গেছে?
সবাই কেমন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার সোনামণিটাও গেল! এত কষ্ট নিয়ে মানুষ বাঁচে কীভাবে? ধুঁকতে ধুঁকতে কেবল একটা খোলস নিয়ে টিকে থাকা?
দপ করে সব অন্ধকার। বিদ্যুৎ চলে গেল। গাঢ় আঁধারে ঘরটা ডুবে যায়। চকচকে কালো-আলোতে কিছুই ঠাহর হয় না, চোখের সামনে নিজের হাতটা পর্যন্ত না। জোরে চোখ রগড়াই। চোখ খুললে সব লালে লাল। সারা শরীরে একটা একটা চিনচিনে ব্যথা টনটনিয়ে ওঠে। বিয়ের পরপরই আমার ভেতরে একটি প্রাণ এসেছিল। মাত্র এক মাস। অন্ধকার ভালোবেসে ও আর আলোতে আসেনি। আজকাল যে কী হয়েছে, আগে অন্ধকারে আমি ভয় পেতাম, দম বন্ধ হয়ে আসত। অথচ এখন কবর-অন্ধকারেই স্বস্তি বোধ করি। তাতে যে খুব সহজে মিশে যাওয়া যায়। আলোর যন্ত্রণা অনেক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×